তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল

তাহলে তামিমকে অবসর থেকে ফেরানো হলো কেন

দুটি প্রশ্ন। এক. মাসখানেক আগেও কি এমন ভাবতে পেরেছিলেন কেউ? মানে তামিম ইকবালকে ছাড়াই ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ—এমন কিছু কি ঘুণাক্ষরেও মাথায় এসেছিল? দুই. বিশ্বকাপ দলেই যদি না রাখা হবে, তাহলে গত জুলাইয়ে অবসর থেকে তামিমকে ফেরানো হলো কেন?

তামিম পূর্ণ মেয়াদে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক হন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে। (২০১৯) একটি বিশ্বকাপ শেষে দুই বছরের মাথায় যখন কাউকে অধিনায়ক বানানো হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরের বিশ্বকাপ মাথায় থাকে। মানে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করেই অধিনায়ক বানানো হয়েছিল তামিমকে। কিন্তু অধিনায়ক হওয়ার দুই বছর পর বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে এসে কী দেখা গেল? ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ও ম্যাচসংখ্যায় দ্বিতীয় সেরা অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সেই তামিমেরই জায়গা হলো না বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে!

গত জুলাইয়ে অবসর ঘোষণা করেছিলেন তামিম

কিন্তু এমন কিছু কি হওয়ার কথা ছিল? আগের সবকিছু বাদ দিয়ে গত জুলাইয়ে সেই কয়েক দিনের ঘটনায় ফেরা যাক। আফগানিস্তান সিরিজের মধ্যে হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। বলেছিলেন, অনেক দিন ধরে ভাবার পর এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। কিন্তু তামিমের সেই সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ঘোষণার পরদিনই অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কথা জানান তামিম। তখন চোট ও অন্যান্য কারণ মিলিয়ে দেড় মাস ছুটি নিয়েছিলেন তামিম। বিসিবি সভাপতির কাছে তখন জানতে চাওয়া হয়েছিল, এশিয়া কাপে অধিনায়ক হয়েই তামিম ফিরবেন কি না? বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, ‘ইনশা আল্লাহ।’

কিন্তু আগস্টের শুরু থেকেই দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করল। বিসিবি সভাপতি জানান, ওয়ানডেতে আর অধিনায়কত্ব করবেন না তামিম। কথাটি তামিম নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর চোট থেকে সেরে ওঠা নিশ্চিত নয় বলে খেলবেন না এশিয়া কাপে। সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বে এশিয়া কাপে খেলল বাংলাদেশ এবং তার মাঝে অনুশীলনেও ফিরেছিলেন তামিম। অবশ্যই পরিকল্পনায় ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপই ছিল।

কিন্তু পরিস্থিতি হুট করে বদলে গেল গতকাল রাত থেকে। তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনেই তামিম ইকবাল বলেছিলেন, তিনি এখনো পুরোপুরি ফিট নন। ঝুঁকি এড়াতে খেলবেন না শেষ ওয়ানডেতেও। এরপর জানা গেল, তামিম যে পুরো ফিট নন, বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময়ও নির্বাচকদের এটি বিবেচনায় নিতে বলেছেন। বিসিবির সূত্র মারফত প্রথম আলো জানিয়েছিল, তামিম নির্বাচকদের বলেছেন, যদি তাঁকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়, তাহলে এটা মেনে নিয়েই নিতে হবে। দলে থাকলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন, আর পিঠের সমস্যার কথা গুরুত্বসহকারে সামনে এনেছেন। এরপরই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।

এক ফ্রেমে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান

সূত্র মারফত জানা গেল, বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে তামিমের এমন কথা অস্বস্তিতে ফেলে নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্টকে। আর বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে তামিমের এমন অবস্থানের কথা জেনে বেশ বিরক্তই হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গতকাল গভীর রাতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাসায় এক সভায় সাকিব ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বোর্ড সভাপতিকে জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে তারা কোনো ‘আনফিট’ বা ‘অর্ধেক ফিট’ ক্রিকেটারকে দলে চান না। এমনকি তিনি যদি হন তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ কেউও। সাকিব নাকি এমনও বলেছেন, আনফিট কেউ দলে থাকলে তিনি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করবেন না। এখানে একটু বলে রাখা ভালো, গতকাল রাতের আগপর্যন্তও আলোচনা ছিল মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। তিনি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাবেন কি না? কিন্তু এক রাতের ব্যবধানে সব পাল্টে গেল।

এরপর আজ সারা দিন বিশ্বকাপের সম্ভাব্য দল নিয়ে গুঞ্জন চলেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিসিবি বিশ্বকাপের দল ঘোষণায় জানিয়ে দিল, তামিমকে রেখেই বিশ্বকাপে যাবে বাংলাদেশ। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের যুক্তি, ‘তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি... সবকিছু বিবেচনা করে, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে। মেডিকেল বিভাগ আমাদের তথ্য দিয়েছে। সবারই আপডেট আছে। তারপর সিদ্ধান্ত... কিছু কিছু চোট আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে।’

শেষের ডাকটা এখন আরও বেশি করে শুনতে পাবেন তামিম

তামিমের চোট নতুন কিছু নয়। সেটি গত জুলাইয়ে তাঁর অবসর ঘোষণার আগেও ছিল। তবু তাঁকে অবসর থেকে ফেরানো হয়েছিল। কিন্তু এখন আর প্রয়োজন মনে না হওয়ায় তাঁকে কি মিস করবে বাংলাদেশ? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে হারের পর সেটাই বললেন অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন, ‘দল ভালো হয়েছে। তামিম ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছি। অনেক কিছু শিখেছি। বাংলাদেশ দলকে অনেক কিছু দিয়েছেন। অবশ্যই অনেক মিস করব।’

৩৪ বছর বয়সী তামিমকে মিস করবে পুরো বাংলাদেশই। পাশাপাশি এই প্রশ্নটিও থাকবে কিছুদিন—তাহলে তামিমকে অবসর থেকে ফেরানো হলো কেন?