কত ক্রিকেটারই তো আছেন, যাঁরা এক-দুইটা বা দিনের পর দিন অজস্র ম্যাচে না খেললেও কারও মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না। কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁদের একটি ম্যাচে না দেখলেই মনের মাঝখানটাতে কেমন হাহাকার ওঠে। মনে হয়—কী যেন নেই, কে যেন নেই!
কোহলির এবারের সিরিজ মিস করার কারণটা যেন রহস্যের চাদরে মোড়া। বাইরের কেউ জানতেই পারছেন না, কোহলি কেন খেলছেন না। কারণটা জানেন কোহলি। হয়তো জানে তাঁর পরিবার, ঘনিষ্টজনেরা আর বিসিসিআই।
বিরাট কোহলি তেমনই একজন। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সিরিজে তাঁর প্রথম দুই ম্যাচে না থাকাটা কেমন একটা শূন্যতা তৈরি করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের আকাশে। হায়দরাবাদের পর বিশাখাপট্টনমেও কোহলিকে দেখতে না পাওয়ার পর তাঁর ভক্তরা আশায় ছিলেন, সিরিজের পরের তিন টেস্টে নিশ্চয়ই দেখা যাবে প্রিয় তারকাকে। কিন্তু আজ নিশ্চিত হলো, পরের তিন টেস্টেও নেই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এরপর যেন ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের মঞ্চটা হয়ে গেল বিয়েভাঙা কনেবাড়ি! চারদিকে শুধু শূন্যতা আর হাহাকার—কী যেন নেই, কিসের যেন একটা অভাব! ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইনই যেমন বলে দিলেন—কোহলির না থাকাটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যই আঘাত।
তা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য আঘাত আসার মতো ঘটনাটা কেন ঘটল? ক্যারিয়ারে এই প্রথম ঘরের মাঠে কোনো টেস্ট সিরিজ মিস করছেন কোহলি। কিন্তু এই সিরিজে কেন খেলছেন না তিনি? প্রশ্নটা খুব সহজ। উত্তরটাও হতে পারত জানা। কারণ, একজন খেলোয়াড় কেন কোনো সিরিজ বা ম্যাচ মিস করেন, সেই ব্যাখ্যা তো থাকেই। তিনি চোটে থাকতে পারেন, তিনি পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য মাঠের বাইরে থাকতে পারেন, ক্লান্তি দূর করতে যেতে পারেন বিশ্রামে কিংবা মানসিক অবসাদে ভুগেও কিছুদিনের জন্য বাইরে চলে যেতে পারেন। কিন্তু কোহলির এবারের সিরিজ মিস করার কারণটা যেন রহস্যের চাদরে মোড়া। বাইরের কেউ জানতেই পারছেন না, কোহলি কেন খেলছেন না। কারণটা জানেন কোহলি। হয়তো জানে তাঁর পরিবার, ঘনিষ্টজনেরা আর বিসিসিআই।
বিসিসিআইয়ের এই দল ঘোষণার পরও কোহলির না খেলার কারণটা অজানাই রয়ে গেল। এর চেয়েও বড় রহস্য—এই মুহূর্তে কোহলি কোথায় আছেন, সেটাও সবার কাছে অজানা।
ভারতের ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলছেন না। চুপ করে আছে পরিবার আর ঘনিষ্টজনেরা। সিরিজের শেষ তিন টেস্টের দল ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছোট্ট একটা পাদটীকা দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সেই পাদটীকায় তারা লিখেছে, ‘ব্যক্তিগত কারণে সিরিজের বাকি সময়ে পাওয়া যাবে না বিরাট কোহলিকে। বোর্ড কোহলির সিদ্ধান্তকে সম্মানের সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।’ ভারতীয় তথা বিশ্বের তাবৎ সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বিশ্বজোড়া কোহলির লাখো কোটি ভক্ত তাঁর সিদ্ধান্তকে নিশ্চয়ই সম্মান জানাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর না খেলার সুনির্দিষ্ট কারণ জানার ইচ্ছা না থাকারও কোনো কারণ নেই। তাই ভারতের তথা বিশ্বের অন্যান্য সংবাদমাধ্যম যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে কোহলির না খেলার কারণ উদ্ঘাটন করতে। কিন্তু থই হারিয়েছে সবাই। কারণের কিনারায় পৌঁছানো যায়নি।
কোহলির না খেলার কারণ উদ্ঘাটনে এমন ‘গবেষণা’ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে নানা রকমের গুঞ্জন তৈরি হওয়াতেই। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে কোহলির না খেলার কারণ হিসেবে প্রথমে সামনে আসে তাঁর মা সরজ কোহলির অসুস্থতা। পরে অবশ্য সেটা ঠিক নয় বলেই জানা যায়। এরপর আসে একটি আনন্দের খবর। আইপিএলে কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সতীর্থ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স নিজের ইউটিউব চ্যানেলে খবর দেন—কোহলি-আনুশকা দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান আসছে।
ডি ভিলিয়ার্সের দেওয়া তথ্যে কোহলি–ভক্তরা খুশিই হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমও যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল—যাক, অবশেষে আসল কারণটা তো জানা গেল! কিন্তু কে জানত, সেই ‘আসল’ খবরটাই একদিনের ব্যবধানে ‘নকল’ হয়ে যাবে! খবরটি যে ঠিক নয়, সেটাও আবার জানিয়েছেন খোদ ডি ভিলিয়ার্সই। তাঁর ভাষায় কোহলি-আনুশকা দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান আসার খবরটি ছিল ‘ভয়ানক ভুল’। ডি ভিলিয়ার্সের কণ্ঠনিঃসৃত ‘ভয়ানক ভুল’ শব্দ যুগল খুব কষ্ট দিল কোহলির ভক্তদের, সংবাদমাধ্যমের মানুষদের করল হতাশ। আবার কারণ উদ্ঘাটনে নেমে পড়লেন তাঁরা!
কিন্তু কোনো কারণ খুঁজে পাওয়ার আগেই এল বিসিসিআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি—শেষ তিন টেস্টের দলে নেই কোহলি! বিসিসিআইয়ের এই দল ঘোষণার পরও কোহলির না খেলার কারণটা অজানাই রয়ে গেল। এর চেয়েও বড় রহস্য—এই মুহূর্তে কোহলি কোথায় আছেন, সেটাও সবার কাছে অজানা। এ কেমন রহস্য! কোহলির না খেলা আর তিনি কোথায় আছেন, সেটাও রহস্যাবৃত রেখে তাঁর ভক্তদের স্নায়ুর এমন পরীক্ষা আসলে কে নিচ্ছে—কোহলি, বিসিসিআই, নাকি কোহলির পরিবার!