শেষ বলে ক্যাচ তুলেছিলেন সারাহ গ্লেন, সে ক্যাচটি নিতে পারেননি কেউ। তবে উল্লাসে কোনো বাধা ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার। কেপটাউনে ‘পাওয়ার-হাউস’ ইংল্যান্ডকে ৬ রানে হারিয়ে আইসিসির কোনো বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে চলে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। লরা ভলভার্ট, টাজমিন ব্রিটসের ফিফটির সঙ্গে মারিজান কাপের ঝোড়ো ইনিংস, এরপর আয়াবঙ্গা খাকা ও শবনিম ইসমাইলের দুর্দান্ত বোলিং আর ব্রিটসের দারুণ ফিল্ডিং—দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গেছে স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে সুনে লুসের দল।
ঘরের মাঠ, সামনে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার হাতছানি। আগে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১৬৪ রান, এর আগে মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে সেমিফাইনালে জেতেনি কোনো দল। তবে শেষ ৩ ওভারেও ঠিক জয় পাওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না তারা। শেষ ১৮ বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২৮ রান, তখনো হাতে ৬ উইকেট। তবে ১৮তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরিষ্কার ফেবারিট বানিয়ে দেন খাকা। একে একে ফেরান অ্যামি জোনস, সোফি একলস্টোন ও ক্যাথরিন সিভার-ব্রান্টকে। ২৯ রানে ৪ উইকেট—ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন খাকা।
কাপের করা ১৯তম ওভারে নাইটের ছক্কাসহ আসে ১২ রান। তবে শেষ ওভারে ছিলেন ইসমাইল, মেয়েদের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার। তৃতীয় বলে নাইটকে বোল্ড করে ফাইনালের পথে অনেকটাই দলকে এগিয়ে দেন তিনি। শেষ ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পারেনি ৬ রানের বেশি।
রান তাড়ায় লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ বলে উইকেট হারানোর তেমন একটা ভয় পায়নি ইংল্যান্ড, প্রথম ৬ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান তোলে তারা। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে জোড়া আঘাত করেন শবনিম ইসমাইল—১৬ বলে ২৮ রান করা সোফিয়া ডাঙ্কলির পর কোনো রান না করেই ক্যাচ দেন অ্যালিস ক্যাপসি। এর মধ্যে ক্যাপসির ক্যাচটি মিডউইকেটে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্তভাবে নেন ব্রিটস।
ওই ২ উইকেটে রানের গতি অবশ্য ভালোভাবেই কমে আসে ইংল্যান্ডের, পাওয়ারপ্লের পর ৫ ওভারে আসে ৩৭ রান। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২তম—এ ৩ ওভারে ওঠে মাত্র ১১ রান। ওই চাপে পড়ে ড্যানি ওয়েইটের উইকেটও, ৩০ বলে ৩৪ রান করে আয়াবঙ্গা খাকার বলে ক্যাচ দেন তিনি। সে ক্যাচও নেন ব্রিটসই।
অধিনায়ক হিদার নাইট ও ন্যাট সিভার-ব্রান্টের জুটি এরপর টানছিল ইংল্যান্ডকে। ধীরগতির শুরু করা সিভার-ব্রান্ট ১৭ রানে কঠিন একটি সুযোগ দিয়েছিলেন, তবে সেটি নিতে পারেননি বোলার ক্লোয়ি ট্রিওন। সিভার শেষ পর্যন্ত ব্রিটসের চতুর্থ ক্যাচে পরিণত হন ৩৪ বলে ৪০ রান করে, নাডিন ডি ক্লার্কের বলে। এরপর যে কাজ বাকি ছিল, দুর্দান্ত প্রোটিয়াদের সামনে নাইট একা করতে পারেননি সেটি।
এর আগে লরা ভলভার্ট ও ব্রিটসের ওপেনিং জুটিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৯৬ রান। ফিফটির পরপরই সোফি একলস্টোনকে লেগ সাইডে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে লিডিং-এজে ক্যাচ দেন ভলভার্ট, ৪৪ বলেল ৫৩ রান করার পর। এর আগে পাওয়ারপ্লেতে শুরুটা ধীরগতির ছিলই ছিল তাদের, প্রথম ৬ ওভারে ওঠে ৩৭ রান।
ব্রিটস প্রথম ৩৯ বলে করেছিলেন মাত্র ৩৬ রান, যদিও পরে গিয়ে সেটি ভালোভাবেই পুষিয়ে দেন তিনি। পরের ১৬ বলে করেন ৩২ রান, ১৮তম ওভারে গিয়ে থামেন ৫৫ বলে ৬৮ রান করার পর। ৬টি চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা। তিনে নামা মারিজান কাপ অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২৭ রান করে।
১৫তম ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ১ উইকেটে ১১৬ রান, সে ভিতে দাঁড়িয়ে পরের ৫ ওভারে তারা তোলে ৪৮ রান। তবু হয়তো আরও কয়েকটি রান কম করার আক্ষেপ পুড়িয়েছিল স্বাগতিকদেরে। এর পেছনে দায় আছে একলস্টোনেরও, ১৯তম ওভারে এসে বাঁহাতি স্পিনার মাত্র ৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট, দিনে সেরা ইংলিশ বোলার ছিলেন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর বোলারই।
তবে একলস্টোনদের ছাপিয়ে কেপটাউনে উল্লাসে মেতেছেন ইসমাইলরা, উল্লাসে মেতেছে রংধনুর দেশের দলটিই।