পল কম্পটন (বাঁয়ে)। পাশে ম্যাচের একটি ছবি
পল কম্পটন (বাঁয়ে)। পাশে ম্যাচের একটি ছবি

৪০ বছরের ক্যারিয়ার, ৬০ বছর বয়স, অবশেষে হাজারতম উইকেট

সিনিয়র ক্রিকেটে তাঁর যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। এর পর থেকে একটানা ক্রিকেট নিয়েই পড়েছিলেন পল কম্পটন। অন্যরা যেখানে নিজেদের বয়স ৪০ হওয়ার আগেই খেলা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেন, সেখানে কম্পটন ক্রিকেট মাঠেই কাটিয়ে দিয়েছেন চার দশক!

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ডে লা সালে কিংসগ্রোভের (ডিএলএসকেসিসি) হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার সম্প্রতি নতুন এক মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। ৬০ বছর বয়সী কম্পটন কমিউনিটি ক্রিকেটে পেয়েছেন নিজের হাজারতম উইকেট। সম্প্রতি পিকহার্স্ট পার্কে কোগি বের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এই উইকেট পান কম্পটন। কেগি বের ব্যাটসম্যান ফিন ও’নেইল পুল করার চেষ্টা করেছিলেন, কানায় লেগে ক্যাচ যায় শর্ট মিডউইকেটে। কম্পটনের হাজারতম উইকেটের ক্যাচটি নেন অ্যাকিলিয়েস স্পানোস।

অনন্য এই অর্জন নিয়ে ফক্স ক্রিকেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কম্পটন বলেন,‘অবশেষে (পেলাম)! শেষ ১০০ উইকেট পাওয়াটা সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমি কোনোভাবে কাজটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম। একপর্যায়ে হতাশও হতে শুরু করেছিলাম। আর যখন হতাশ থাকি, আমার বোলিংও খারাপ হয়।’

ক্লাবের হয়ে পল কম্পটনের ১০০০ উইকেট নেওয়ার মুহূর্ত

ডিএলএসকেসিসির ৯ উইকেটের জয়ে এদিন কম্পটন ১৯ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ক্যারিয়ারের ১ হাজার উইকেটের মধ্যে কম্পটন ৪২২টি উইকেট পেয়েছেন বোল্ড করে, ১১৩টি ছিল এলবিডব্লু, ২টি ছিল স্টাম্পিং এবং ১টি ছিল হিট উইকেট। স্কোরবুক হারিয়ে যাওয়ায় বাকি ৪টি উইকেটের ধরনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। অবশ্য কম্পটনের বিশ্বাস, আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্বের কারণে বেশ কিছু এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত তাঁর বিপক্ষে না গেলে তিনি হয়তো আরও আগেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারতেন।

নিজের বোলিং স্টাইলকে কম্পটন তুলনা করেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার ডগ ওয়াল্টার্সের সঙ্গে। আর নিজের বোলিং কৌশল নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা আমার ভেতর এটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে আমাকে সোজা বল করতে হবে। যদি তারা মিস করে, তবে বল স্টাম্পে আঘাত করবে। আমি কখনো দ্রুতগতির বোলার ছিলাম না। খুব বেশি জোরে বল করতে পারতাম না।’

ক্যারিয়ারে ডিএলএসকেসিসির হয়ে কম্পটন সাতটি প্রিমিয়ারশিপ জিতেছেন। ২০১১ সালে হয়েছে ক্লাবের আজীবন সদস্যও। তাঁর ক্যারিয়ারসেরা ৩০ রানে ৮ উইকেটের বোলিং ফিগার এসেছিল ১৯৮৭ সালে আলওয়াহ হান্টার্সের বিপক্ষে। আর গত বছরের জানুয়ারিতে ইলাওয়ারা ক্যাথলিকের হয়ে পেয়েছেন প্রথম হ্যাটট্রিক। হ্যাটট্রিকের সেই মুহূর্ত স্মরণ করে কম্পটন বলেন, ‘হ্যাটট্রিক করার যে উত্তেজনা, সেটি হাজারতম উইকেট পাওয়ার চেয়ে বেশি ছিল। হিসাব করে দেখেছি, আমি ৮০ বার এ জন্য চেষ্টা করেছি। এই বোঝা পিঠ থেকে নামাতে পেরেও ভালো লেগেছে।’

পল কম্পটনের হ্যাটট্রিকের মুহূর্ত

পেশায় ব্যাংকার কম্পটনের অন্য চার ভাইও ক্রিকেট খেলেন। তাঁদের ক্রিকেটের প্রতি এই ভালোবাসার অনুপ্রেরণা মূলত তাঁদের বাবা কেইথ। এ ছাড়া কম্পটনের দুই ছেলেও ডিএলএসকেসিসির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একজন অবশ্য এখন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব লুকের হয়ে খেলেন।

৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কম্পটন অনেক চোটের সঙ্গেও লড়াই করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি। এমনকি হাজারের চূড়ায় উঠেও এখনই ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কোনো পরিকল্পনা নেই কম্পটনের। তিনি বলেন, ‘নিজের শরীর ভেঙে পড়ার আগপর্যন্ত আমি খেলা চালিয়ে যেতে চাই।’

তবে কি এবার লক্ষ্য ১৫০০ উইকেটের? এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিমুখে কম্পটন বলেন, ‘এটার জন্য আমাকে আরও ২০ বছর খেলতে হবে। নিশ্চিত নই আরও ২০ বছর চালিয়ে যেতে পারব কি না। কিন্তু হলে ভালোই লাগবে। দেখা যাক কী হয়। আপনি জানেন না কখন কী হয়।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের কমিউনিটি ক্রিকেটের প্রধান ক্রেইগ ম্যাকলিন কম্পটনকে নিয়ে বলেন, ‘কম্পটনের মতো কমিউনিটি ক্রিকেটাররাই ক্রিকেটের সত্যিকারের চেতনাকে মূর্ত করে তোলেন। আমরা ক্লাবের প্রতি তার আনুগত্য এবং হাজার উইকেটের অর্জনকে উদযাপন করছি। ক্রিকেট সবার জন্য। এটা এমন মুহূর্ত, যা আমাদের নতুন ক্রিকেটারদের খেলার জন্য উৎসাহিত করবে এবং আজীবন খেলাটিকে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা দেবে।’