তৃতীয় দিন শেষে
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৫৩১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৭৮
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১০২/৬
টেস্ট জেতায় বোলাররা—ক্রিকেটের এই আপ্তবাক্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আপাতত প্রযোজ্য নয়। কারণ বোলারদের লড়াই করার জন্য যে পুঁজি দরকার, সেটা জোগান দেওয়ার কাজ ব্যাটসম্যানদের। আর এই কাজটাই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা করতে পারছেন না। গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংস দিয়ে শুরু, এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট টেস্টের আরও দুই ইনিংসের পর চট্টগ্রামেও বাংলাদেশ দলের রান দুই শ ছাড়ায়নি। টানা পাঁচ ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বোলারদের বেশি কিছু করার থাকে না।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের কথাই ধরুন। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৫৩১ রান সামনে রেখে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৫৫ রানে দিনের খেলা শুরু করে অলআউট হয় ১৭৮ রানে। ৩৫৩ রানের বিশাল লিড নিয়েও বাংলাদেশকে ফলো অন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে ধস নামান হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ। হাসান নিয়েছেন ৪ উইকেট, খালেদ ২টি। শ্রীলঙ্কা দিন শেষ করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১০২ রান তুলে। লিড দাঁড়িয়েছে ৪৫৫। ক্রিজে আছেন ৩৯ রানে অপরাজিত অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও প্রবাত জয়সুরিয়া (৩)।
অথচ আজকের দিনটা হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের। আগের দিন ভালো শুরু করা জাকির হাসান ও তাইজুল ইসলাম প্রথম ঘণ্টাটা নির্বিঘ্নেই পার করে দিয়েছিলেন। পানি পানের বিরতির পরও ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির কিছুক্ষণ আগে ছোটখাটো একটা ধস নামে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে। ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪ উইকেটে ১১৫ রানে প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ।
ধসের শুরু জাকিরের আউটে। ৯৬ বলে অর্ধশত করে ভালোই খেলছিলেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার। ভালো বোলিং করছিলেন বাঁহাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডোও। দুজনের লড়াইয়ে জয় হয় ফার্নান্ডোর। ৩৩তম ওভারে ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ থেকে অ্যাঙ্গেলে বল ভেতরে এনে জাকিরের লেগ স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। ১০৪ বলে ৫৪ রান করা জাকিরের বিদায়ে তাইজুলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি ভাঙে। চারে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে দ্রুত আউট করেছেন প্রবাত জয়সুরিয়া। ৩৬তম ওভারে স্টাম্পের ওপর ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে দিমুত করুনারত্নের হাতে ক্যাচ দেন নাজমুল (১)। পরের ওভারে জাকিরের মতো একই অ্যাঙ্গেল কাজে লাগিয়ে তাইজুলকেও থামিয়েছেন বিশ্ব। ৬১ বল খেলে ২২ রান করেন তাইজুল।
জাকির ও তাইজুলকে অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে আউট করার পর একই কৌশলে সাকিবকেও দমিয়ে রাখেন লঙ্কান পেসাররা। সাফল্য আসে ৪৫তম ওভারে। ফার্নান্ডোর ভেতরে আসা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। ২৩ বলে ১৫ রানে থামে তাঁর ইনিংস। একই ওভারে আউট হন লিটন দাসও (৪)। ফার্নান্ডোর অফ স্টাম্পের বাইরের নিরীহদর্শন একটি বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। দীর্ঘ হয়নি শাহাদাত হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের ইনিংসও। লাহিরুর বলে স্লিপে কামিন্দু মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তোলেন শাহাদাত (৮), মিরাজ ২ রানে জীবন পেলেও ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। প্রবাত জয়সুরিয়ার বলে থেমেছে তাঁর ইনিংস।
অন্য প্রান্তে আসা–যাওয়ার মধ্যে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের রানটাকে দেড় শর ওপারে নিতে সাহায্য করেন মুমিনুল। তাঁর ইনিংসের সৌজন্যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রানের মাইলফলক ছাড়িয়ে যান তিনি। মুমিনুলকেও ফিরিয়েছেন ফার্নান্ডো। ৬৯তম ওভারে খালেদকে বোল্ড করে বাংলাদেশ ইনিংসের ইতিও টেনেছেন তিনি। এটি ছিল তাঁর চতুর্থ উইকেট। অন্য দুই পেসার ফার্নান্ডো ও কুমারাও ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার পর সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররাও। নতুন বলে খালেদ ও হাসানের বোলিং ভুগিয়েছে লঙ্কানদেরও। শুরুটা হয় দিমুথ করুনারত্নেকে (৪) বিদায় করে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন করুনারত্নে। পরের ওভারে কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করেন খালেদ। দ্রুত দুই উইকেট পতনের পর অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন নিশান মাদুস্কা। হাসান নতুন স্পেলে বোলিংয়ে এসে জুটিও ভাঙেন। হাসানের বলে মাদুস্কা স্লিপে মিরাজের হাতে ক্যাচ তোলেন, ৩৪ রানের ইনিংসটি থামে তাতে। দিনেশ চান্ডিমালকেও ৯ রানে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন হাসান। স্থায়ী হয়নি এই সিরিজের আগের তিন ইনিংসেই সফল কামিন্দু মেন্ডিসের উইকেটও। ব্যক্তিগত ৯ রানের সময় খালেদের দ্বিতীয় স্পেলে লিটনের হাতে ক্যাচ তোলেন এই বাঁহাতি। প্রবাত জয়সুরিয়াকে নিয়ে দিনের বাকি সময় পার করে দেন ম্যাথুস।
শেষ বেলায় বোলিংয়ে আলো ছড়ালেও প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা যে এই টেস্টে বাংলাদেশের পরাজয় প্রায় অবধারিত করে তুলেছে, তা তো না বললেও চলছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৫৩১ ও ২৫ ওভারে ১০২/৬ (করুনারত্নে ৪, মাদুশকা ৩৪, মেন্ডিস ২, ম্যাথুস ৩৯*, চান্ডিমাল ৯, ধনাঞ্জয়া ১, কামিন্দু ৯, জয়াসুরিয়া ৩*; খালেদ ২/২৯, হাসান ৪/৫১, সাকিব ০/২০, তাইজুল ০/১)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৮.৪ ওভারে ১৭৮ (মাহমুদুল ২১, জাকির ৫৪, তাইজুল ২২, নাজমুল ১, মমিনুল ৩৩, সাকিব ১৫, লিটন ৪, শাহাদাত ৮, মিরাজ ৭, খালেদ ১, হাসান ২*; বিশ্ব ফার্নান্ডো ২/৩৮, আসিতা ফার্নান্ডো ৪/৩৪, কুমারা ২/১৯, জয়াসুরিয়া ২/৬৫, ধনাঞ্জয়া ০/১৪)।
* তৃতীয় দিন শেষে