বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

নাজমুল ভালো না করলে অধিনায়কত্বেও প্রভাব পড়বে

গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। দলের শক্তিমত্তার জায়গা কোথায়, কোথায় দুর্বলতা, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনাই-বা কতটুকু? লিখেছেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন

বাংলাদেশ দল খুব খারাপ একটা জায়গা থেকে হঠাৎ করে ফিরে আসতে পারে। আগেও অনেকবার সেটি দেখা গেছে। দলের যখন হারানোর কিছু থাকে না, তখন কোনো না কোনোভাবে ফিরে আসার একটা উদ্যম খেলোয়াড়দের ভেতর দেখা যায়। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের শক্তির জায়গা। 

বাংলাদেশ ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হারানোর মেকি আত্মবিশ্বাস নিয়ে। আবার সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তামিম-বিতর্কের সঙ্গে ছিল প্রস্তুতির ঘাটতি। সে তুলনায় এবার বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ খেলে জিতলেও বাংলাদেশ কিন্তু কন্ডিশনের সুবিধা সেভাবে নেয়নি এবং ভালোও খেলেনি। ফলে এক ধরনের চাপ দলের উপর ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সিরিজ হারে সেই চাপ আরও বেড়েছে। 

এমন চাপ নিয়ে বাংলাদেশ এ ধরনের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলতে গেছে কমই। এটি হয়তো দলের সবাইকে আরও কাছাকাছি আনবে, ভালো করার তাড়না বাড়াবে, সবাই আরও সচেতন হয়ে খেলবে। অতি-আত্মবিশ্বাস কাজ করবে না। যেহেতু বিশ্বকাপের আগে ফল মোটেও ভালো কিছু নয়, সেটি সবাই ভালো খেলায় ফেরার জন্য তাড়িত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

এমনিতে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এবার অন্য যেকোনো বারের তুলনায় সমৃদ্ধ। মোস্তাফিজুর রহমান তো আছেই, পাশাপাশি তাসকিন আহমেদকে যদি শুরু থেকে পাওয়া যায়, পেস আক্রমণটা আরও সমৃদ্ধ হবে। স্পিনে রিশাদ হোসেনের মতো লেগ স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি দলকে অনেক সাহসী ও শক্তিশালী করে তুলবে। 

স্পিনে রিশাদ হোসেনের মতো লেগ স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি দলকে অনেক সাহসী ও শক্তিশালী করে তুলবে

ব্যাটিংয়েও ইতিবাচক কিছু দিক আছে। গত বেশ কিছু দিনের মধ্যে মিডল অর্ডার এখনই বেশ শক্তিশালী। বিশেষ করে তাওহিদ হৃদয়ের উপস্থিতি এই জায়গায় শক্তি বাড়িয়েছে। ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলতে পারে, ম্যাচ টেনে নেওয়ার সামর্থ্য তার আছে। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলীও মোটামুটি ধারাবাহিক। আগের তুলনায় ব্যাটিং ভালো হবে বলে আশা করি। 

দুর্বলতার জায়গা যদি বলি, প্রথমেই আসবে প্রস্তুতির কথা। যেটি মোটেও ভালো হয়নি। দল নির্বাচনেও বেশ দেরি হয়েছে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেরিতে। ব্যাটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের পরও টপ অর্ডার নিয়ে শঙ্কার জায়গা থেকেই গেছে। বোলিংয়ে তাসকিনকে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে পাওয়া নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা আছে।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের ফর্মটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হবে। যে কোনো পর্যায়েই দলের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য অধিনায়কের ভালো পারফর্ম করাটা জরুরি। ব্যক্তিগত ভালো পারফরম্যান্স যে কোনো অধিনায়ককে সাহসী করে তোলে, চ্যালেঞ্জ নিতে উদ্বুদ্ধ করে। নাজমুলের ভালো পারফর্ম করতে না পারা তার অধিনায়কত্বেও প্রভাব ফেলতে পারে। টপ অর্ডার ভালো করলে হয়তো  বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার আশা পূর্ণ হবে। তবে মিডল অর্ডার ও লেট মিডল মোটামুটি একটা অবস্থানে থাকলেও ধারাবাহিকতার অভাব আছে। সেটা কাটিয়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত এবং দলীয় দিক দিয়ে সেটা জরুরি। বিশ্বকাপের মতো আসরে চাপ থাকবেই। সে চাপ সামলানোর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। 

গ্রুপপর্বের প্রতিপক্ষদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা সবসময়ই বাংলাদেশের জন্য কঠিন। এই দুই দলের মধ্যে সবসময়ই একটা দ্বৈরথ চলে। তাদের সঙ্গে ভালো করলে সেটি দুটি দিক দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেবে—টুর্নামেন্টটা ভালোভাবে শুরু হবে, সামনে সব পথও খোলা থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও কঠিন  পরীক্ষাই দিতে হবে আমাদের। 

বাংলাদেশ দল খুব খারাপ একটা জায়গা থেকে হঠাৎ করে ফিরে আসতে পারে

আইসিসির সহযোগী সদস্য নেপাল কিংবা নেদারল্যান্ডসের যে বোলিং শক্তি, এর চেয়ে অনেক ভালো মানের বোলিং খেলে বাংলাদেশ অভ্যস্ত। এ দুই দলের সঙ্গে ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজে, যেখানে উইকেট খানিকটা স্পিন সহায়ক হতে পারে। সে দিক থেকে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সঙ্গে ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই এগিয়ে থাকার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আস্থার সংকটে পড়ে বাংলাদেশ মাঝে মাঝে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে যায় । 

টুর্নামেন্টের উইকেটগুলো আইসিসির তত্ত্বাবধানে হচ্ছে বলে ভালোই হওয়ার কথা। শুরুতে মোটামুটি ফ্রেশ উইকেটেই প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। দিনে এবং রাতে দুই সময়েই খেলতে হবে। ১৭০-১৮০ রান করার মানসিকতা থাকা জরুরি। সে দিক থেকে বাংলাদেশকে ১৫০-১৬০ রানের মতো স্কোর করার যে মানসিকতা, সেটি ছাড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব রাখতে হবে।