এশিয়া কাপে দুই দলের প্রথম ম্যাচটিতে বারুদ পোড়াতে দেয়নি বৃষ্টি। এবার তাই বিতর্কিতভাবে রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা আজ হতে পারবে তো? ম্যাচে বাগড়া দিতে সাগরপারের শহর কলম্বোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। যদিও ম্যাচ আজ শেষ না হলেও ক্ষতি নেই। ফাইনাল বাদ দিলে এবারের এশিয়া কাপে একমাত্র আজকের ম্যাচেই আছে রিজার্ভ ডের বিলাসিতা।
মাঝ টুর্নামেন্টে শুধুই একটা ম্যাচে হুট করে রিজার্ভ ডে ঢুকিয়ে দেওয়ার অর্থ তো বোঝাই যায়। জয় শাহর নেতৃত্বাধীন এসিসির কাছে এই ম্যাচ হয়ে উঠেছে ফাইনালের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য একভাবে দেখলে এ রকম ভাবনা ঠিকই আছে।
কলম্বোয় ১৭ সেপ্টেম্বরের ফাইনালে যে ভারত-পাকিস্তানই খেলবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ক্যান্ডিতে দুই দলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় এশিয়ার ‘বিশ্বকাপে’ এবার এখনো উপমহাদেশের দুই পরাশক্তির লড়াই সেই অর্থে দেখা হয়নি। ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হলে তো ক্রিকেট বিক্রেতাদের জন্য পোয়াবারোই। না উঠলে সুপার ফোরের ম্যাচটাই সম্বল। তা ছাড়া দর্শক আগ্রহের কথা বিবেচনা করলেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চৌম্বকশক্তির তুলনা নেই। যে করেই হোক, ম্যাচটা তাই হওয়াতে হবে। ভারত পাকিস্তানকে হারাক বা পাকিস্তান ভারতকে, সেটা পরের কথা। আগে এসিসির হারাতে হবে বৃষ্টিকে।
ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে অনেকের মুখে শুনেছি, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচও এখন যথেষ্টই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। আসলেই কি তাই? এই উত্তাপ তো শুধু যখন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হয়, তখন। খেলার মাঠে যেকোনো দুটি দল মুখোমুখি হলেই খেলা নিয়ে পারস্পরিক একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর খোঁচাখুঁচি জমে ওঠে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ব্যাপারটাকে তার চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।
আসলে এই অঞ্চলের ক্রিকেটে কোন ম্যাচ কতটা বারুদ পোড়াবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে প্রতিপক্ষ দুই দেশের রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর। বাংলাদেশের সঙ্গে এক সাগর ব্যবধানের শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে সে রকম কোনো উপকরণ নেই যে মুখোমুখি হলেই চারদিকে সমরবাদ্য বাজা শুরু করবে। যা আছে খেলা থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র বানানো পর্যন্ত সব দিক দিয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দু্ই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে।
মজার ব্যাপার হলো, যে রাজনৈতিক কারণে ভারত-পাকিস্তান খেলা নিয়ে এত আগ্রহ, সেই রাজনৈতিক বৈরিতার কারণেই আবার দল দুটি সাড়ে ১০ বছর হলো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এত কাঙ্ক্ষিত, অথচ সেটা এখন হয় শুধুই বহুজাতিক টুর্নামেন্টে।
রাজনৈতিক ইতিহাস বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেটেও কিছুটা আগুন জ্বালায়। গায়ে গা ঘেঁষা প্রতিবেশী বলে, সঙ্গে রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক কারণ তো আছেই, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়েও খুঁজতে পারেন একই ঝাঁজ। তবে বিশেষ দুটি দলের খেলা নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা-রোমাঞ্চ তখনই বেশি ছড়ায়, যখন সেই দুটি দলের ক্রিকেটীয় সামর্থ্যও কাছাকাছি হয়। হার-জিতের সম্ভাবনা মোটামুটি সমান থাকে। ব্যবধান খানিক বেড়ে গেলেই রোমাঞ্চটা ঠিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসতে চায় না।
হ্যাঁ, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের মধ্যে দেখিয়ে দেওয়ার একটা জেদ হয়তো তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ইতিহাস, ওই ঘটনা টেনে এনে চেষ্টা চলে সেই জেদের আগুনে বাড়তি ঘি ঢালার—এ–ই তো!
ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপারটা সে তুলনায় ভিন্ন। রাজনীতি, ইতিহাস ও ধর্মীয় টানাপোড়েন মিলিয়ে এই দুই দলের ক্রিকেট যুগ যুগ ধরেই খেলার চেয়ে বেশি কিছু। শুধু উপমহাদেশ কেন, ক্রিকেটের আবরণে এ রকম বহুমাত্রিক দ্বৈরথ বিশ্ব ক্রিকেটেই দ্বিতীয়টি পাবেন না। সঙ্গে এই দুটি দেশের মানুষই যখন ক্রিকেট খায়, ক্রিকেটে ঘুমায় এবং ক্রিকেট পরে; তাদের মধ্যে খেলা হলে সেটা ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে উঠতে বাধ্য।
তবে ম্যাচের আগের দিন, মানে গতকাল রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কিন্তু ‘চাঁদরাতে’র কোনো লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে ম্যাচটাকে শুকনা রাখতে সম্ভব হলে লঙ্কার আকাশে হনুমানজিকে ডেকে এনে মেঘ সরিয়ে দিতে চায় এসিসি, সেই ম্যাচের আগের দিন কিনা ভারতের অনুশীলনটা হলো ঐচ্ছিক! যে ৯ ক্রিকেটার মাঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন না দুই মহাতারকা বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার কেউই।
সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ওপেনার শুবমান গিল। খেলার প্রসঙ্গ ছাড়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে যে বাড়তি উত্তেজনা, তার ছিটেফোঁটাও ছিল না সেখানে। প্রশ্ন-উত্তর সবই খেলার কৌশলগত দিক নিয়ে। ও হ্যাঁ, গিল একটা কথা বলেছেন। এবার ক্যান্ডিতেই জীবনে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন বলে ম্যাচটা তাঁর জন্য ছিল অন্য রকম। ব্যস, এটুকুই।
এর আগেই অধিনায়ক বাবর আজম এসেছিলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে। তখনো একই আবহ। খেলা থেকে একটু দূরের যে দুটি প্রশ্ন হলো, সেগুলোও খেলার সম্পূরক—প্রসঙ্গ দুই দেশ মিলিয়ে এশিয়া কাপ হচ্ছে বলে খেলোয়াড়দের ভ্রমণঝক্কি আর কলম্বোয় বৃষ্টির শঙ্কা। দুই প্রসঙ্গেই নির্লিপ্ত বাবর বইয়ের ভাষায় বলে গেলেন, বৃষ্টির ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেই আর ভ্রমণঝক্কির ব্যাপারটা আগে থেকেই জানা। পাকিস্তান দল প্রস্তুতিও সেভাবেই নিয়েছে।
আজকের ম্যাচ থেকে তারপরও বারুদপোড়া গন্ধ পাচ্ছেন? গিল, বাবররা শুনলে হয়তো বলবেন, ‘সবই মিডিয়ার সৃষ্টি।’ কিন্তু এই দুই দেশের ম্যাচে ক্রিকেটটা তো শুধু ক্রিকেটাররাই খেলেন না। এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় গোটা উপমহাদেশই।