সাকিবের অবসর নিয়ে প্রথম আলোকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের কোচ।
সব পেশায়ই ভালো কাজ করতে হলে কাজটা আপনাকে মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। কাজটা নিয়েই ধ্যানজ্ঞান রাখতে হবে। একজন ক্রিকেটার যখন ক্রিকেট খেলে, টেস্ট বা ওয়ানডে খেলে, তারও একটা মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সে কীভাবে প্রস্তুতি নেবে, কীভাবে সতেজ থাকবে, পরদিন কীভাবে ভালো খেলবে—এসব নিয়ে ভাবতে হয়। কিন্তু আমার মনে হয় এই মুহূর্তে সাকিবের মাথায় যতগুলো চিন্তা কাজ করছে, এটা আসলে ভালো পারফর্ম করার মতো অবস্থায় তাঁকে রাখেনি।
বাইরে থেকে অনেক কিছুই বলা যায়। আর সাকিব তো আগেও বাইরের চাপ নিয়ে খেলে ভালো করেছে। কিন্তু তখন হয়তো একটা বাড়তি চাপ নিয়েই মাঠে নেমেছে। সেটা সে সামলেও নিয়েছে। কিন্তু এখন তার চারপাশে অনেক সমস্যা, অনেক চাপ। এখানে রাষ্ট্রও সম্পৃক্ত। এ রকম পরিস্থিতিতে ভালো খেলাটা কঠিন হয়ে যাবে স্বাভাবিক। সত্যি বলতে, সে যে এত দিন মাঠে ছিল, সেটা দেখেই আমি আশ্চর্য হয়েছি। কীভাবে সে খেলছে এই পরিস্থিতে! আমরা হলে তো মাঠেই নামতে পারতাম না।
কাউন্টির একটা ম্যাচেও সাকিবের বোলিং অনেক ভালো হয়েছে। ফোনে আমি সেটা তাকে বলেছিলামও। চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংও ভালো করেছে। রান বেশি না করলেও অনেক দিন পর তাকে ভালো ব্যাটিং করতে দেখেছি। বুঝতে পারছিলাম সে ভালো খেলতে চাচ্ছে। কারণ অবসর নিলেও সে চাইবে যেন শেষটা ভালো করতে পারে।
সাকিব ও রকম খেলোয়াড়ও নয় যে দলের বোঝা হয়ে থাকবে। সাকিব কেন দলে—আমার চোখে এ রকম প্রশ্ন ওঠাটা তার জন্য একরকম অপমানজনকই। সে মানসিকভাবে এটা নিতে পেরেছে কি না, জানি না। ক্যারিয়ারের শুরুর পর এ রকম পরিস্থিতিতে তাকে কখনো পড়তে হয়নি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, এত কিছু একসঙ্গে সামলানোটা তার জন্য একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। যদি পারফরম্যান্স ভালো হতো তাহলে হয়তো অন্যভাবে চিন্তা করতে পারত। আবার যদি রাজনীতিতে না জড়াত তাহলে পারফরম্যান্স নিয়েও এত চাপে পড়তে হতো না।
সাকিবের কাছে ভালো খেলার প্রত্যাশা সব সময় বেশি থাকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে সাকিব যা–ই খেলে, আমরা বলি ভালো খেলেনি। কারণ ওই বিশ্বকাপে আমরা সাকিবের সেরা পারফরম্যান্সটা দেখেছি। এর চেয়ে ভালো পারফর্ম করা তো আসলে সম্ভব নয়।
কাজেই এর পর থেকে সাকিব যা–ই করছে, আমাদের মনে হয় সে ভালো খেলেনি। সাকিবের নিজেরও হয়তো সে রকমই মনে হয়। সাকিব দলে সব সময় পারফর্ম করে থেকেছে এবং সেভাবেই থাকতে চায়। সেদিক থেকে আমি বলব, ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে আমি জানি না সে টি–টোয়েন্টিটাও কেন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলল। টেস্ট ক্রিকেট যেহেতু ছেড়েছে, ওয়ানডে এবং টি–টোয়েন্টি দুটোই তো সাদা বলের ক্রিকেট। টেস্ট খেলবে না বলে এখন একটা বলেই সে অনুশীলন করবে। সেদিক থেকে আমার মনে হয় সে ওয়ানডের পাশাপাশি টি–টোয়েন্টিটাও চালিয়ে যেতে পারত। অবশ্য দেশে ওর জন্য অনুকূল পরিস্থিতি না থাকলে যেকোনোটা খেলাই সমস্যা। আপনাকে যখন নিজের দেশে আসতে অনেক কিছু চিন্তা করতে হবে, তখন সবই কঠিন হয়ে পড়ে। আর যা–ই হোক, দেশটা তো তার নিজের!
● লেখক: বাংলাদেশ দলের সাবেক সহকারী কোচ