ঘোষণা দিয়েই লর্ডসে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছেন জিমি অ্যান্ডারসন। এ ধরনের ক্ষেত্রে যা হয়, প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা বিদায়ী ক্রিকেটারকে মাঠে নামার সময় গার্ড অব অনার দিয়ে থাকেন। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া এই পেসারকেও একইভাবে সম্মান জানানোর পরিকল্পনা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক কারণে ক্যারিবীয়রা সেটা করতে পারেনি।
সাধারণত গার্ড অব অনার দেওয়া হয় ব্যাটিংয়ে নামার সময়। অ্যান্ডারসনের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিকল্পনাও ছিল এমনই। কিন্তু লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে অ্যান্ডারসন যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন উইন্ডিজ দলের খেলোয়াড়েরা তাঁর আশপাশেই ছিলেন না! কাছাকাছি থাকা জেসন হোল্ডারই দৌড়ে গিয়ে যা একটু হাত মিলিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, পরিকল্পনা থাকার পরও এমন কেন হলো?
লর্ডস টেস্টে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জেডেন সিলস। ৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসনের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সবার অভিবাদন জানানোর পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আগেই কথা হয়েছিল, অ্যান্ডারসন ব্যাটিংয়ে নামলে গার্ড অব অনার দেব।’
অ্যান্ডারসন ছিলেন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে শোয়েব বশিরের রানআউটই মূলত তাঁর গার্ড অব অনার পাওয়াটা ‘আটকে’ দিয়েছে। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা বশির রান তুলতে না পারলেও একের পর এক বল খেলে যাচ্ছিলেন। ইনিংসের নব্বইতম ওভারে মিকাইল লুইস দূর থেকে সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট করে দেন বশিরকে (১৭ বলে ০)।
সরাসরি থ্রো এবং আউটের ধরনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন যে উদ্যাপন করতে করতে মাঠের একপ্রান্তে চলে যান সবাই। এর মধ্যেই ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাট নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন অ্যান্ডারসন। তাঁকে ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতে দেখেই লর্ডস গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা দাঁড়িয়ে করতালি দেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা দূরে থাকায় তাঁরা খেয়াল করার আগেই মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়েন অ্যান্ডারসন। কিছুটা কাছাকাছি থাকা হোল্ডার দৌড়ে গিয়ে কিংবদন্তি পেসারের সঙ্গে হাত মেলান। এ বিষয়ে সিলস বলেন, ‘রানআউটটা আমাদের সবাইকে সুইস কটেজের (যেখানে লর্ডসের অবস্থান) দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের জন্য গার্ড অব অনার দেওয়াটা তাই কঠিনই ছিল। সৌভাগ্যবশত হোল্ডার ওর দেখা পেয়েছে।’
অ্যান্ডারসন অবশ্য মাঠে নেমে এক বলও খেলার সুযোগ পাননি। তাঁকে ননস্ট্রাইকে রেখে একই ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে আউট হন জেমি স্মিথ। এ নিয়ে পরে আক্ষেপও ঝরে অভিষেকেই ১১৯ বলে ৭০ রান করা এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানের মুখে, ‘জিমিকে একটা বলও খেলতে না দেখাটা বড় মিস। আমার ইনিংসে আক্ষেপ এই একটাই। আমি যদি আরেকটা ছক্কা মারতে পারতাম, তাহলে ব্যাট করতে পারত।’
টেস্টে দুই ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ থাকলেও অ্যান্ডারসনের সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ১২১ রানে অলআউট করে ইংল্যান্ড তুলেছে ৩৭১ রান। ২৫০ রানে পিছিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৯ রান তুলতেই হারিয়েছে ৬ উইকেট। শেষ চার উইকেট নিয়ে আরও ১৭১ রান তুলতে পারলেই কেবল ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করবে।
একপ্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়, গার্ড অব অনার এবং বল খেলা ছাড়াই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ইনিংস খেলে ফেলেছেন অ্যান্ডারসন।