শারজায় আফগানিস্তান–বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে প্রথম আলোর লাইভ বিবরণী ও বিশ্লেষণে স্বাগতম। গত বুধবার একই ভেন্যুতে প্রথম ওয়ানডেতে ৯২ রানে জিতে তিন ম্যাচের এই সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে আফগানিস্তান। আজ কি সিরিজে ফিরে স্বস্তি ফেরাতে পারবে বাংলাদেশ?
দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে গতকাল শারজায় সাংবাদিকদের আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বলেছিলেন, সিরিজে ফেরার সুযোগ আছে বাংলাদেশের।
প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দলের ভুল–ত্রুটি নিয়ে বিশ্লেষণ পড়তে চাইলে ক্লিক করুন নিচের লিংকে।
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের রহস্য–স্পিনার আল্লাহ গজনফরের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই ১৮ বছর বয়সী। আজ গজনফর খেললে তাঁকে সামলানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
গজনফরের বিষয়ে যদি জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে ক্লিক করুন নিচের লিংকে।
টসে জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী (উইকেটকিপার), মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ।
চোট পাওয়া মুশফিকের জায়গায় উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন জাকের আলী। একটি টেস্ট ও ১৯টি টি–টোয়েন্টি খেলা জাকেরের ওয়ানডে অভিষেক এই ম্যাচে। স্পিনার রিশাদ হোসেনের জায়গায় নেওয়া হয়েছে আরেক স্পিনার নাসুম আহমেদকে। এই সংস্করণে সর্বশেষ গত বছর বিশ্বকাপে খেলেছিলেন নাসুম।
মুশফিকের চোট নিয়ে জানতে চাইলে ক্লিক করুন নিচের লিংকে।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটকিপার), সেদিকুল্লাহ আতাল, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, গুলবদিন নাইব, রশিদ খান, আল্লাহ গজনফর, নানগেয়ালিয়া খারোতে ও ফজলহক ফারুকি।
তিন পেসার ও চার স্পিনার নিয়ে মাঠে নামছে আফগানিস্তান।
ফজলহক ফারুকীর করা ম্যাচের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই চার মেরেছেন তানজিদ হাসান। একই ওভারে দুই ওয়াইড আর এক সিঙ্গেলসহ এসেছে মোট ৭ রান।
এই ফারুকীই তৃতীয় ওভারে বোলিং ফিরলে দুটি চার মেরেছেন তানজিদ।
৩ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ২২।
চতুর্থ ওভারে গজনফরের প্রথম বল ছিল লো ফুলটস। আগের ওভারে ফারুকীকে দুই চার মেরে কিছুটা তেতেই ছিলেন তানজিদ হাসান। লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন ছক্কা।
কিন্তু পরের বলেই টাইমিংয়ে গড়বড়। আগের শটের পুনরাবৃত্তি করতে চাইলেও বল গেল মিড অনের দিকে। কিছুটা বাঁ দিকে সরে সহজ ক্যাচই নিয়েছেন মোহাম্মদ নবী। শুরুতেই থামল তানজিদের ১৭ বলে ৩ চার ১ ছয়ে গড়া ২২ রানের ইনিংস।
বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারাল ২৮ রানে। নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন।
তামিম ইকবাল দলে নেই বেশ কিছুদিন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে নেই সাকিব আল হাসান। আর সিরিজে থাকলেও আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলা হচ্ছে না মুশফিকুর রহিমের।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের একাদশে নেই তামিম, সাকিব ও মুশফিক—এমনটা দেখা গেল ২০০৬ সালের পর এই প্রথম।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে: ১৮ বছর পর সাকিব–তামিম–মুশফিককে ছাড়া ওয়ানডে খেলছে বাংলাদেশ
নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ নবীকে ফ্লিকে মিডউইকেট দিয়ে চার মারেন সৌম্য সরকার। এই চারে পঞ্চাশ রানের মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল।
নবীর একই ওভারের চতুর্থ বলে আরও বড় আনন্দ পাওয়ার কথা দর্শকদের। নবীর ফুল লেংথে পড়া বল সৌম্য সামনে পা বাড়িয়ে ইনসাইড আউট করে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি–ছাড়া করেছেন। চোখে লেগে থাকার মতো ছক্কা!
৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৫৭। সৌম্য ২২ বলে ১৭ আর নাজমুল ১৫ বলে ১২ রানে ব্যাট করছেন।
আজ ইনিংসের শুরু থেকেই সৌম্য সরকারকে ছন্দে মনে হচ্ছে। ১৪তম ওভারে ওমরজাইয়ের প্রথম বলে ফ্লিক করে চার মারার পর তৃতীয় বলে সৌম্য যেন স্বরূপে ফিরলেন! শর্ট পিচ বলে পুল শটে মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে! এমন সৌম্যকেই চায় বাংলাদেশ।
৩৮ বলে ৩২ রানে ব্যাট করছেন সৌম্য। ২১ রানে অপরাজিত নাজমুল।
বাংলাদেশ ১৪ ওভারে ১ উইকেটে ৮২।
সাকিব, তামিম, মুশফিকের একজনও ওয়ানডে দলে নেই, এমন ঘটনা বিরল। কতটা বিরল তা জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে।
সেই চেনা সৌম্যই! ভালো শুরু করেও টিকতে পারলেন না। ৪৯ বলে ৩৫ রানে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লুর শিকার। বলটা স্কিড করে ঢোকায় ফাঁদে পড়েন সৌম্য। আফগান খেলোয়াড়দের আবেদনে সাড়াও দেন আম্পায়ার। সৌম্য অন্য প্রান্তে অধিনায়ক নাজমুলের সঙ্গে কথা বলে হাঁটা ধরেন ড্রেসিংরুমের পথে।
দাঁড়ান!
ভিডিও রিপ্লেতে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেল, বলটি লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছে। রিভিউ নিলেও আর ফিরে যেতে হতো না সৌম্যকে। নন স্ট্রাইকার নাজমুলও বুঝতে পারলেন না, আশ্চর্য! দুর্ভাগ্যই বলতে হবে সৌম্যর।
মোহাম্মদ নবীর বলটি সোজা ব্যাটেই খেলেছিলেন নাজমুল হোসেন। কিন্তু বল সামন্য টার্ন করে তাঁর ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। জোরাল আবেদন করেন আফগানিস্তানের খেলোয়াড়েরা। সেই আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প মিস করত। রিভিউ হারাল আফগানিস্তান, আর কোনো রিভিউ হাতে নেই তাদের।
মোহাম্মদ নবীর ফুলার লেংথের বলতি অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল। মিড–অনে আলতো ড্রাইভ খেলেন নাজমুল। সিঙ্গেল নিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি। নাজমুলের ফিফটির পর এই ওভারে আরও ৩ রান করেছে বাংলাদেশ। ২৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১৩৭।
গজনফর লেংথ বলই করেছিলেন। যেটি টার্ন করে ভেতরে ঢোকার সময় নাজমুলের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। নাজমুল বুঝতে পেরেছিলেন, বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছিল ঠিকই, কিন্তু টার্ন বেশি থাকায় লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সেটি কাজেও লাগে।
ভালো ব্যাটিং করছিলেন নাজমুল হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে ৮৩ বলে ৫৩ রানও তুলে ফেলেছিলেন। তাঁদের এই জুটিতে ভর করে ১৫০ রান পেরিয়ে ভালো অবস্থানে চলে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু রশিদ খানের গুগলিটা বুঝতে পারেননি মিরাজ। যে কারণে ৩৩ বলে ২২ রান করে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। বাংলাদেশের রান ৩২.৪ ওভারে ১৫২। নাজমুলের সঙ্গে জুটি বাঁধতে এসেছেন তাওহিদ হৃদয়।
অফসাইডের একটু বাইরে পড়া বলটি গুগলি ছিল। গজনফরের সেই বল তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে লেগে প্যাডে আঘাত করে। এরপর পিচে ড্র করে যায় ফিল্ডারের হাতে। কিন্তু গজনফর করেন জোরাল আবেদন। সেই আবেদনে যোগ দেন আফগানিস্তানের রশিদ খানও। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি আর আফগানদের রিভিউও শেষ। ফলে মাঠের দুই আম্পায়ার আলোচনা করে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চান। টিভি রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার মাঠের আম্পায়ারের নটআউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
খারোতের বলটি ছিল স্লোয়ার। সেই বলে ৬ মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন তাওহিদ হৃদয়। বাতাসে ভেসে বল চলে যায় ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। সেদিকুল্লাহ আতালের ক্যাচটি নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি। প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া খারোতে এই ওভারে কোনো রান দেননি। ৩৯ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৭৫। নাজমুল ৭১ রান নিয়ে উইকেটে আছেন, তাঁর সঙ্গে জুটি গড়তে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ।
আগের ওভারেই তাওহিদ হৃদয়কে আউট করেছেন খারোতে। নিজের ষষ্ঠ ওভার করতে এসে হানলেন জোড়া আঘাত। নাজমুল হোসেনের পর ফিরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহকে। সব মিলিয়ে অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ৪১ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে রান ১৮৪। উইকেটে আছেন জাকের আলী ও নাসুম আহমেদ। নাজমুল আউট হয়েছেন ১১৯ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৭৬ রান করে।
ওয়ানডে অভিষেকে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছেন জাকের আলী। অভিষেক ম্যাচের স্নায়ুচাপ সামলে ভালোই ব্যাটিং করছেন তিনি। বিশেষ করে ফজলহক ফারুকির সর্বশেষ ওভারে তিনি টানা দুই বলে মেরেছেন ছক্কা। সব মিলিয়ে ২ ছক্কায় ১৮ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত আছেন জাকের।
বলে ব্যাটে আসছিল, নাসুম আহমেদও বড় শট খেলছিলেন। কিন্তু ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ২৫ রান করে গজনফরের বলে আউট হয়ে ফেরেন নাসুম। বাংলাদেশের রান ৪৭.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩০।
আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন জাকের আলী। কিন্তু ঠিকভাবে টাইমিং না হওয়ায় বল উঠে যায় ওপরে। কিন্তু ক্যাচ নিতে পারেননি ফিল্ডার হাশমতউল্লাহ শহীদি। বেঁচে যান জাকের।
টসে জিতে ব্যাটিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। প্রথম ম্যাচের বড় ধসের কথা মাথায় ছিল বলেই হয়তো শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। চতুর্থ ওভারেই দলের ২৮ রানে তানজিদ হাসানকে হারানোর পর সেই সতর্কতা আরও বাড়ে।
সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন মিলে ব্যাট করতে থাকেন ধীরলয়ে। মাঝারি জুটিও গড়েন তাঁরা। সৌম্য দুটি করে চার ও ছয়ে ৪৯ বলে ৩৫ রান করে আউট হওয়ার আগে দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুলের সঙ্গে মিলে তোলেন ৭১ রান। এরপর তৃতীয় উইকেটে মেহেদেী হাসান মিরাজকে সঙ্গে নাজমুল তোলেন ৫৩ রান।
দুটি ফিফটি জুটি হওয়ার পরও অবশ্য ধস আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৩২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ২ উইকেটে ১৫২ থেকে মিরাজ, হৃদয়, নাজমুল ও মাহমুদউল্লাহকে হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৮৪ রান। নাজমুল ১১৯ বল খেলে আউট হয়েছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে।
এই ধসের পর সপ্তম উইকেটে জাকের আলী ও নাসুম আহমেদের ৪১ বলে ৪৬ আর অষ্টম উইকেটে জাকের আলী ও তাসিক আহমেদের ১৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ২২ রানের জুটিতে ৭ উইকেটে ২৫২ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। ওয়ানডে অভিষেকে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১ চার ও ৩ ছয়ে ২৭ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন জাকের। ১ চার ও ২ ছয়ে নাসুম করেন ২৪ বলে ২৫ রান।
খারাতে ৮ ওভার বোলিং করে ২৮ রানে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন গজনফর ও রশিদ খান।
ক্রিকেট বিষয়ক খবরের ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর হিসাব মতে এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তারা বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা দেখছে ৬৪.১৬ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৩৫.৮৪ শতাংশ। হিসেবটা বাংলাদেশের ইনিংসের পর। প্রথম ওভারটা ভালোই করেছেন শরীফুল ইসলাম। দিয়েছেন মাত্র ২ রান।
অফ স্টাম্পের বাইরেই বলগুলো ফেলছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে স্লিপ রেখেছিলেন একটা। প্রথম স্লিপ থেকে একটু সরে দ্বিতীয় স্লিপের কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়ান সৌম্য সরকার। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিকে সৌম্যর পাশ দিয়েই হয়তো বের করতে চেয়েছিলেন রহমানউল্লাগ গুরবাজ। কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের কানা নিয়ে যায় সৌম্যর হাতে। প্রথম উইকেট হারাল আফগানিস্তান, ১ উইকেটে ৪ ওভারে তাদের রান ১৮।
বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পরের ওভারটিতে মেডেন নিলেন তাসকিন আহমেদ। তাঁর ৬ বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি রহমত শাহ। ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের রান ২৪।
উইকেট একটির বেশি ফেলতে পারেননি, তবে প্রথম পাওয়ার প্লেতে দারুণ বোলিং করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৪০ রান করেছেন আফগানিস্তান। উইকেট দুটিও পড়তে পারত, কিন্তু মিরাজের করা পাওয়ার প্লের শেষ বলটিতে উইকেটের পেছনে রহমত শাহর ক্যাচ নিতে পারেননি উইকেটকিপার জাকের আলী। আফগানিস্তানের উইকেটটি নিয়েছেন তাসকিন, ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়েছেন তিনি। শরীফুল ৫ ওভারে দিয়েছেন ২২ রান। মিরাজ ১ ওভারে ১ রান।
তাসকিন আহমেদ রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট নিয়েছিলেন ৩.৩ ওভারে। এরপর ভালো বোলিং করেও উইকেট পাচ্ছিলেন না বাংলাদেশের বোলার। অবশেষে দলকে উইকেট এনে দিলেন নাসুম আহমেদ। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই তিনি তুলে নেন সেদিকউল্লাহ আতালকে। চতুর্থ বলে হাশমতউল্লাহর বিপক্ষে রিভিউ নিয়েও অবশ্য সফল হয়নি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ৭০।
বলটি ইচ্ছে করেই স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফাঁদটা কাজেও লেগেছিল। রহমত শাহ ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বল তাঁকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটকিপার জাকের আলীর হাতে। জাকের অবশ্য অনেকটাই দেরি করে ফেলেন। তিনি স্টাম্প ভাঙার আগেই নিরাপদে ক্রিজে পৌঁছে যান রহমত। এর আগে মিরাজের বলে এই রহমতের ক্যাচ ফেলেছিলেন জাকের। সেই সময় রহমত ছিলেন ১১ রানে, এবার ‘জীবন’ পেলেন ৩০ রানে। আফগানিস্তানের রান ২২ ওভারে ২ উইকেটে ৮৭।
কঠিন ছিল, কিন্তু হাশমতউল্লাহর বুলেট গতির শটটি হাতে জমাতে পারেননি বদলি ফিল্ডার জাকির হাসান। বল লেগেছে তাঁর হাঁটুতে। ১৬ রানে ‘জীবন’ পেলেন হাশমত।
মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ নিলেন আরেক পেসার শরীফুল ইসলাম। মোস্তাফিজের বলটি সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন হাশমতউল্লাহ। কিন্তু ফাইন লেগ সীমানার ঠিক কাছে ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তিনি। মোস্তাফিজ উইকেট পেয়েছিলেন পঞ্চম বলে। নাসুমের করা পরের ওভারে রহমত শাহ ১ রান নেন। এর পরের বলেই আজমতউল্লাহকে আউট করেন নাসুম।
কোথা থেকে কী হয়ে গেল আফগানিস্তানের। ৬ বলের মধ্যে ১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে গেল তাদের ইনিংস। ২ উইকেটে আফগানিস্তানের রান ছিল ১১৮, সেখান থেকে ১১৯ রান করতেই নেই ৩ উইকেট। সর্বশেষ রানআউট হয়ে ফিরেছেন ৫ চারে ৭৬ বলে ৫২ রান করা রহমত শাহ। আফগানিস্তানের রান এখন ৩০ ওভারে ৫ উইকেটে ১১৯। উইকেটে আছেন নতুন দুই ব্যাটসম্যান গুলবদিন নাইব ও মোহাম্মদ নবী।
ফাইন লেগে একজন ফিল্ডার নিয়ে লেগ স্টাম্পে ইয়র্কার দেওয়ার মতো করে ফিল্ডিং সাজান শরীফুল ইসলাম। এর আগের তিন বলে ১২ রান দেওয়া শরীফুল এভাবে ফিল্ডিং সাজিয়ে বলটি করলেন অফে। লেগ স্টাম্পে ইয়র্কার পাওয়ার ভাবনা নিয়ে থাকা গুলবদিন ড্রাইভ শট খেললেন। কিন্তু বল সোজা চলে যায় হৃদয়ের হাতে।
দুর্দান্ত এক অফ স্পিন বলে মোহাম্মদ নবীকে বোল্ড করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার ৬ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়ে গেল আফগানিস্তান। ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৮ ওভারে তাদের রান ১৬৫।
খারোতেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের অনেকটাই কাছে নিয়ে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সামনে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাপিং হয়েছেন খারোতে। উইকেট মেডেন পেলেন মিরাজ। ৪২ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১৮১। জিততে হলে ৪৮ বলে করতে হবে ৭২ রান, বাংলাদেশের প্রয়োজন ২ উইকেট।
৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আফগানরা হয়তো তাকিয়ে ছিলেন রশিদ খানের দিকে। তাঁকেও মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানালেন মোস্তাফিজ। ১৮৪ রানে নবম উইকেট হারাল আফগানিস্তান। জিততে হলে এখন ৪২ বলে করতে হবে ৬৯ রান।
গজনফরকে বোল্ড করে ম্যাচের ইতি টানলেন নাসুম আহমেদ। শারজায় টানা ৯ ম্যাচ হারার পর জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ। এই জয়ে ব্যাটসম্যানদের মতো সমান অবদান আছে বোলারদেরও।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান করে বাংলাদেশ। ১১৯ বলে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। এ ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডে অভিষেক হওয়া জাকের আলী ২৭ বলে করেন অপরাজিত ৩৭ রান। সৌম্যর অবদান ৪৯ বলে ৩৫ রান। আর নাসুম আহমেদ করেন ২৪ বলে ২৫ রান।
২৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান। হেরেছে ৬৮ রানে। নাসুম ২৮ রানে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ও মোস্তাফিজ। একটি করে উইকেট তাসকিন ও শরীফুলের।
এই জয়ে সিরিজে ১–১–এ সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার।