মাইক প্রক্টরের টেস্ট ক্যারিয়ারকে ডানা মেলতে দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতি। মাত্র সাতটি টেস্ট খেলার পরই যে দলকে নিষিদ্ধ হয়ে যেতে দেখলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। এ কারণেই কখনো ওয়ানডে বা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি গত শনিবার মারা যাওয়া সাবেক এই ক্রিকেটারের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেলেও প্রক্টরের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার রেকর্ডই বুঝিয়ে দেয়, অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা ভিনদেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতেন। প্রক্টরকে তো ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিদেশি ক্রিকেটার বলে মানা হয়।
সেই প্রক্টর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঈর্ষণীয় কিছু রেকর্ডের মালিক। আর সেসব রেকর্ডে তাঁর অলরাউন্ডার সত্তাই প্রবলভাবে ফুটে ওঠে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ক্রিকেট ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান ও সিবি ফ্রাইয়ের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন প্রক্টর। রেকর্ডটা টানা ছয় সেঞ্চুরির। ফ্রাই ১৯০১ সালে, ব্র্যাডম্যান ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে ও প্রক্টর ১৯৭০-৭১ মৌসুমে টানা ছয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন প্রথম শ্রেণিতে।
ব্যাটিংয়ে যাঁর এমন রেকর্ড, সেই প্রক্টর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন চারবার। আর সেই চার হ্যাটট্রিকের দুটিতেই হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি একই ম্যাচে সেঞ্চুরিও করেছেন। প্রথম শ্রেণির ইতিহাসে একই ম্যাচে কারও হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরি করার ঘটনা মাত্র ১৭টি। অলরাউন্ড কীর্তির এমন তালিকায় চোখ রাখলে বাংলাদেশের দুজনের নামও দেখা যাবে—সোহাগ গাজী ও মাহমুদউল্লাহ।
প্রক্টর ছাড়া একাধিকবার এই কীর্তি আছে শুধু বাংলাদেশের সোহাগ গাজীরই। একদিক দিয়ে সোহাগ প্রক্টরের চেয়েও এগিয়ে। প্রক্টর হ্যাটট্রিক-সেঞ্চুরির যুগলবন্দী দুবারই করেছেন ইংলিশ কাউন্টি দল গ্লস্টারশায়ারের হয়ে। যেখানে ২০১২-১৩ মৌসুমে জাতীয় লিগে বরিশালের হয়ে প্রথম এই কীর্তি গড়া সোহাগ পরে টেস্টেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর পুনরাবৃত্তি করেছেন। টেস্ট ইতিহাসে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের কীর্তিতে সোহাগ এক ও অদ্বিতীয়।
মাহমুদউল্লাহর একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরির কীর্তি ২০১৩-১৪ মৌসুমের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে। বিকেএসপিতে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে হ্যাটট্রিক পেয়েই থামেননি মধ্যাঞ্চলের হয়ে খেলা মাহমুদউল্লাহ, টানা ৪ বলে উইকেট নিয়ে ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’ও পেয়েছিলেন। আর হ্যাটট্রিকের মাঝে মধ্যাঞ্চলের প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানে অপরাজিত ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ও টানা ৪ বলে উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে অবশ্য একা নন মাহমুদউল্লাহ। ইংল্যান্ডের কেভান জেমস ও দক্ষিণ আফ্রিকার কেলি স্মাটসও এই রেকর্ডে তাঁর সঙ্গী।