আজ তাঁর ২৬তম জন্মদিন।
গতকাল রাতেই নাকি তাঁর স্ত্রী ফোন করে বলেছিলেন, ‘কাল যদি তোমরা জিততে পারো, দারুণ ব্যাপার হবে তোমার জন্য।’
হয়েছে তা-ই। বাংলাদেশ আজ রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ১০ উইকেটে। পাকিস্তানের মাটিতে তো বটেই, পাকিস্তানের বিপক্ষেই যেটি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন জন্মদিনে এর চেয়ে বড় আর কী উপহার পেতে পারতেন!
তবে শুধু নিজের জন্মদিন বলেই অসাধারণ এই জয়টাকে বিশেষ মনে করেন না নাজমুল। তাঁর চোখে এ জয় বাংলাদেশের মানুষেরও। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন, দেশের অস্থিরতা এবং চলমান ভয়াবহ বন্যায় আসলেই বাংলাদেশ এক কঠিনতম সময় পার করছে।
টেস্ট শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে নাজমুল সবার আগে স্মরণ করলেন গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের। মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই বাংলায় বললেন, ‘সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমাদের এই জয়টা তাদের উৎসর্গ করছি। তাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া।’
তারপরই নিজের জন্মদিনের আগের রাতে স্ত্রী সেই ফোন কলের গল্পটা শুনিয়ে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এই জয়টা বিশাল আমাদের জন্য।’
কেন বড়, সেটা আসলে বোঝা কঠিন কিছু না। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্ট খেলে একটাও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ড্র করতে পেরেছে মাত্র একটি টেস্ট। সেই বাংলাদেশ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়টা পেয়েছে প্রতিপক্ষের মাটিতে। এর চেয়ে দারুণ ব্যাপার আর কী হতে পারে! দেশের ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের মোট ২০টি টেস্ট জয়ের মধ্যে রাওয়ালপিন্ডির এই জয়টা ওপরের দিকেই থাকবে নিঃসন্দেহে।
নাজমুল অবশ্য সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, এই সিরিজটা জেতাই হবে তাঁর দলের লক্ষ্য। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের কারণে সেই কথা তখন ‘কথার কথা’ই মনে হয়েছিল। তবে অধিনায়ক যে আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথাটা বলেছিলেন, সেটা বোঝা গেল পুরস্কার বিতরণীতে তাঁর কথায়, ‘যখন আমরা সিরিজটা শুরু করেছিলাম, যখন বলেছিলাম, এবার আমরা জিততে চাই, সেটা বিশ্বাস থেকেই বলেছিলাম। বিশ্বাস ছিল, এবার আমরা বিশেষ কিছু করব। যেভাবে আমরা গত ১০-১৫ দিন পরিশ্রম করেছি, আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল, বিশেষ কিছু করতে পারব।’
দুর্দান্ত এই জয় দলীয় প্রচেষ্টার ফল। তবে সেই জয়ের সবচেয়ে বড় নায়ক নিঃসন্দেহে মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে যিনি ৩৪১ বলে ১৯১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। হয়েছেন ম্যাচসেরাও। নাজমুলের কণ্ঠেও মুশফিকের জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা, ‘মুশি ভাই অসাধারণ। যেভাবে তিনি ১৫-১৭ বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন, প্রতিদিন নিজেকে তৈরি করছেন, এটা অবিশ্বাস্য। এই কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ের জন্য যেভাবে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন, আমি খুব খুশি।’
সব শেষে অবশ্য এটাও বলেছেন, ‘আমি শুধু মুশি ভাইকে সব কৃতিত্ব দেব না, এই জয় দলের ১৫ জনের কঠোর পরিশ্রমের ফল। এই কৃতিত্ব সবারই পাওনা।’