সাকিব আল হাসান যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, এমনটাই চান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আমিনুল হক। তাঁর কথা, ‘আমি গত ১৫ বছর ধরে যে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি, সেটি যেন আর কারও প্রতি না হয়। সাকিবের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে, কিন্তু এই মামলার সূত্র ধরে তাঁকে যেন কোনো প্রকার হয়রানি না করা হয়, আমি এটাই চাই।’
৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিবকে।
এরপর হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে সাকিবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিসিবিকে আইনি নোটিশ পাঠান একজন আইনজীবী। যদিও এরই মধ্যে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন সাকিব। দরকার হলে বিসিবি তাঁকে সব রকমের আইনি সহায়তাও দেবে।
হত্যা মামলা মাথায় নিয়েই সাকিব রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলছেন। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে বল হাতে পেয়েছেন ৪ উইকেট, ব্যাট হাতে করেছেন ১৫ রান। সাকিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলাকে হয়রানি দাবি করে এর নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় দলের তাঁর সতীর্থ মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন ও মুমিনুল হক। মামলাটি নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও। তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হবে না।
সাকিবের ব্যাপারে আমিনুল আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সাকিব গত জানুয়ারিতে একদলীয় ডামি নির্বাচনে অংশ নিয়ে অপরাধ করেছে বলেই আমি মনে করি। সে নির্বাচনটা ইচ্ছা করলেই এড়াতে পারত, নির্বাচন না করলে তাঁকে হয়তো এত সমালোচনার শিকার হতে হতো না। শুধু সাকিব নয়, মাশরাফি বিন মুর্তজাও জাতীয় দলে খেলা অবস্থায় নির্বাচন করে ভুল করেছেন।’
নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তাঁর কথা, ‘আমি খেলা থেকে অবসর নিয়েই রাজনীতি করেছি। যেটা সাকিব কিংবা মাশরাফি করেনি। আমি দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, খুন–গুমের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেছি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি। এ জন্য গত ১৫ বছর আমাকে বহুবার গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমার বেলায় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের পরিচয়টি সামনে আসেনি, এসেছে আমার রাজনৈতিক পরিচয়। রিমান্ডে নিয়ে আমাকে শারীরিক আঘাতও করা হয়েছে।’
তবে নিজের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন সাকিবের বেলায় না হয়, সেটিই নিশ্চিত করার পক্ষে জাতীয় দলের সাবেক এই গোলকিপার, ‘আমরা একটা অন্ধকার সময় পেরিয়ে এসেছি। আমরা গত ১৫ বছরের কোনো অন্যায়েরই পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা এমন একটা সমাজ ও দেশ চাই, যেখানে শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার জন্য কাউকে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে না হয়। সাকিবের ব্যাপারেও আমার একই চাওয়া। সে যদি অপরাধী হয়, তাহলে তার বিচার হবে, কিন্তু কোনো ধরনের অন্যায়ের শিকার যেন সে না হয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে।’