ঘোরি, লোদি, খিলজি হয়ে মোগল—যখন যে রাজবংশ সুযোগ পেয়েছে, দিল্লির মসনদে বসেছে। ঘোরি বংশের মুহাম্মদ ঘোরি থেকে শুরু করে মোগল সম্রাট বাবর—কতবার কতজন যে দিল্লি জয় করেছেন, তার হিসাব রাখা কঠিন। দিল্লি জয় করেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিও। ২০১৩ সালে গলফে (হিরো কাপ) দিল্লি জয় করেছেন সিদ্দিকুর রহমান। জয়ের অর্থটাকে একটু বিস্তৃত করে দিলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে আবার দিল্লি জয় করে এসেছে ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বিরিয়ানিও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটও কি দিল্লি জয় করেনি! সেটিও দুইবার। প্রথমটি ২০১৯ সালে। সেবার ভারতের মাটিতে ভারতকে টি–টোয়েন্টিতে হারিয়ে দিল্লি জয় করেছে বাংলাদেশ। এরপর গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে রচিত হয় বাংলাদেশের আরেকটি দিল্লি জয়ের অধ্যায়। সেটি অবশ্য ভারতের মাটিতে লঙ্কানদের হারিয়ে।
তা ক্রিকেট দিয়ে দিল্লি জয়ের কথা যখন বলাই হচ্ছে, ক্রিকেটীয় একটা বিষয় না বললেই নয়। যেকোনো ম্যাচে মাঠে নামার আগে লড়াইয়ের মঞ্চ সম্পর্কে দুই দলের কোচ–খেলোয়াড়েরা ধারণা নেন। কোন মাঠে খেলা হচ্ছে আর সেই মাঠ কেমন অথবা সেখানে দুই দলের অতীত পরিসংখ্যান কী—এসব নিয়ে ভাবেন ক্রিকেট লিখিয়ে, পণ্ডিত, বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকও।
আজ বাংলাদেশ–ভারত দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিটি হচ্ছে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে, যেটির আগের নাম ছিল ফিরোজ শাহ কোটলা। এই ফিরোজ শাহর সঙ্গেও দিল্লি নিয়ে লড়াই আর দিল্লি শাসনের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ফিরোজ শাহ ছিলেন দিল্লি শাসন করা তৃতীয় রাজবংশ তুঘলকের রাজা। সেই ইতিহাস থাক, জানা যাক অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারত ও বাংলাদেশের অতীত পরিসংখ্যান বা এই দুই দলের লড়াইয়ের ইতিহাস।
এই ম্যাচে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে টস করতে নামার সময় বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন গর্ব করে বলতেই পারেন—এই মাঠে কখনো আমরা হারি না। নাজমুল এই গর্ব এ কারণেই করতে পারেন যে দিল্লিতে বাঘা বাঘা শাসকদের পরাজয় হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনো হারেনি! এখানে ভারত ক্রিকেট দলও হেরেছে, বাংলাদেশ নয়! এই গর্ব আজকের ম্যাচের পর থাকবে কি না, সেই আলোচনা এখন না করাই ভালো। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
দিল্লিতে অবশ্য এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর প্রথম। সেবার রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত শক্তিশালী দলই মাঠে নামিয়েছিল। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে আর মুশফিকের ৪৩ বলে অপরাজিত ৬০ রানের এক ইনিংসে ভারতকে হারিয়ে দিল্লি জয় করেছিল বাংলাদেশ। যা এখন পর্যন্ত টি–টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয় হয়ে আছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয়বারের মতো দিল্লি জয় গত বছর। বাকি সব ছাপিয়ে যে ম্যাচের পরিচয় হয়ে আছে ‘টাইমড আউট’–এর ম্যাচ। শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টাইমড আউটের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার ম্যাথুজকে আউটও দেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইমড আউটের একমাত্র ঘটনা বলে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল, যা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই। সাকিবকে টাইমড আউটের আবেদন করার বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন। পরে এই দুজনের যুগলবন্দিতেই ৫৩ বল হাতে রেখে ম্যাচটি ৩ উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। দুজনের ১৬৯ রানের জুটিতে সাকিব খেলেন ৬৫ বলে ৮২ রানের এক ইনিংস। বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে ব্যর্থ নাজমুল এখানে দারুণ খেলে সাকিবের চেয়ে ৮ রান বেশি করেও ম্যাচসেরার লড়াইয়ে হেরে যান। কারণ, ব্যাটিংয়ে নামার আগেই ২ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন সাকিব।
দিল্লিতে বাংলাদেশের মতো অজেয় নয় ভারত। শুধু টি–টোয়েন্টির হিসাব করলে তো দিল্লিতে জয়ের চেয়ে হারই বেশি। তিনটি টি–টোয়েন্টি খেলে এর দুটিতেই হেরেছে ভারত। যার একটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশের কাছে।
তাহলে কি পরিসংখ্যান বলছে দিল্লিতে বাংলাদেশই এগিয়ে? পরিসংখ্যান খুব মজার জিনিস। কখনো কখনো যা মায়াবী এক বিভ্রমও! আগামীকালের ম্যাচ শেষে পরিসংখ্যান বাংলাদেশের কাছে কী রূপে ধরা দেবে, কে জানে! মায়াবী বিভ্রম হয়ে, নাকি দিল্লিতে বাংলা–রাজের নতুন আরেকটি অধ্যায়ের জন্ম দিয়ে!