‘হোক খেলা, এ খেলায় যোগ দিতে হবে/ আনন্দকল্লোলাকুল নিখিলের সনে’—লাইন দুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেলা’ কবিতার। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, অ্যাথলেটিকস—সে যে খেলাই হোক, খেলাপ্রেমী মানুষের জন্য এ এক অপার আনন্দ। সেই আনন্দে নিখিল, মানে পুরো বিশ্বজুড়েই ওঠে আনন্দকল্লোল। তা–ই যদি হয়, খেলাপ্রেমী মানুষের জন্য তাহলে দারুণ একটা বছরই শুরু হচ্ছে।
প্রতিবছর যা হয়, সেসব নিয়মিত আয়োজন তো আছেই। এর সঙ্গে বড় বড় সব টুর্নামেন্টও রয়েছে এ বছর। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অলিম্পিক গেমস, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, কোপা আমেরিকা...। এককথায় বলা চলে, ২০২৪–এ শুধু খেলা আর খেলা!
২০২৪–এ খেলার আনন্দের শুরুটা হবে এশিয়া থেকে। ১২ জানুয়ারি কাতারে শুরু হবে এই ফুটবল আসর। এরপর পালা আফ্রিকা মহাদেশের। এমনিতেই আফ্রিকানরা আমোদপ্রিয়, খেলা হলে তো কথাই নেই। জানুয়ারির ১৩ তারিখেই শুরু আফ্রিকান নেশনস কাপ। জানুয়ারিতে শুরু হয়ে আফ্রিকান নেশনস কাপ শেষ হবে ফ্রেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এর আগেই অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হয়ে যাবে টেনিসের আনন্দ–আয়োজন। ১৪ জানুয়ারি থেকে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে দোহায় বসবে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ, একই মাসে বুসানে বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ।
নতুন বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ক্রিকেট–আনন্দ অবগাহনের শুরু হবে মার্চে, ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন সংস্করণেরই সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর প্রায় পুরো বছরই ব্যস্ততা থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ২ টেস্ট ও ৫টি টি–টোয়েন্টি খেলতে এপ্রিলে বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। মে মাসে বিরতির পর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
বছরের পরের অংশটায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বেশির ভাগ সময় কাটাতে হবে দেশের বাইরে। জুলাই–আগস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের ‘ঘরের মাঠ’–এ খেলবে বাংলাদেশ। ক্রিকেটে আফগানিস্তানের ‘ঘর’ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেখান থেকে ফিরে আগস্টেই আবার ২ টেস্টের সিরিজ খেলার জন্য পাকিস্তানে উড়াল দেওয়ার কথা। সেখান থেকে ফিরে সেপ্টেম্বরেই আবার প্রতিবেশী ভারতের বিমান ধরতে হবে। সেখানে ২ টেস্ট ও ৩ টি–টোয়েন্টির দুটি সিরিজ। অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা। নভেম্বরে শেষ হবে প্রোটিয়াদের সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজ। এই সিরিজ শেষে নভেম্বরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবে বাংলাদেশ। ব্যস্ত এ বছরে ১৪টি টেস্টের পাশাপাশি বাংলাদেশ ৯টি ওয়ানডে ও ১৭টি টি–টোয়েন্টি খেলবে। এর বাইরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো আছেই।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যস্ততার খবর জানাতে গিয়েই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা বলা হয়ে গেছে। এবার আবার ফেরা যাক অন্যান্য বৈশ্বিক ইভেন্টে। মার্চ, এপ্রিল ও মের বেশির ভাগ সময়ই দখল করে রাখবে বাস্কেটবল, গলফ, ঘোড়দৌড়, আইস হকি, অটো রেসিংয়ের মতো খেলাগুলো। এর মধ্যেই মে মাসে রোলাঁ গারোতে বসবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের আসর।
মে মাসের শেষ ভাগ থেকে আবার ফুটবল ও ক্রিকেটের দখলে চলে যাবে সময়। ২৫ মে এফএ কাপের ফাইনালের রেশ কাটতে না কাটতেই ১ জুন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। ৪ জুন থেকে শুরু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ইউরোপ–সেরা হবে কোন দল—আবারও কি ইতালি, নাকি কেইনের ইংল্যান্ড, এমবাপ্পের ফ্রান্স না রোনালদোর পর্তুগাল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১৪ জুন থেকে। এদিনই যে শুরু ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ইউরো চ্যাম্পয়নশিপ। এর ৬ দিন পর শুরু হবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা—লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে এবার জেতাতে পারবেন কোপা আমেরিকা?
ফুটবলের এই রোমাঞ্চ শেষ হওয়ার আগেই ১ জুলাই লন্ডনে উইম্বলডন গড়াবে কোর্টে। ইউরো, কোপা আমেরিকা ও উইম্বলডন—তিনটিরই ফাইনাল একই দিনে, ১৪ জুলাই। কী স্মরণীয় একটা দিনই না হতে যাচ্ছে এটি! জুলাই–আগস্টে বছরের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। প্যারিসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক গেমসের মশাল জ্বলে উঠবে ২৬ জুলাই, গেমসের বিদায় বিউগল বাজবে ১১ আগস্ট।
বছরের শেষ ভাগে এসে অবশ্য এত ঠাসা সূচি নেই। উল্লেখযোগ্য ইভেন্টের মধ্যে সেপ্টেম্বরে রাগবি লিগের গ্র্যান্ড ফাইনাল ও সাইক্লিংয়ের ইউসিআই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশে বসবে মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালটা খেলাময়ই বলা যায়।