ভারতে আসার পর অস্ট্রেলিয়া কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি। বেঙ্গালুরুতে নিজেদের মতো করে চার দিন অনুশীলন চালিয়ে গেছেন প্যাট কামিন্সরা। সেই অনুশীলনে ছিলেন একজন ‘অশ্বিন’।
এই ‘অশ্বিন’ রবিচন্দ্রন অশ্বিন নন, অশ্বিনের মতো বোলিং করেন এমন একজন। মহেশ পিথিয়া নামের সেই ভারতীয় তরুণকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল ‘অশ্বিন–রেপ্লিকা’ হিসেবে। মাঠে অশ্বিনকে সামলানোর মানসিক জড়তা কাটাতেই এমন অনুশীলন করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু নকল অশ্বিনে অনুশীলন করে অস্ট্রেলিয়ার লাভ হলো কই?
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম ম্যাচে মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে ইনিংস ও ১৩২ রানে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে কামিন্সদের হারানো ২০ উইকেটের ১৫টিই পেয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। এর মধ্যে ৮টিই আবার অশ্বিনের একার। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। অশ্বিন এ নিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট তুললেন ৩১তম বারের মতো, ম্যাচে ৮ বা এর বেশি উইকেট ১৭তম বারের মতো।
অশ্বিন–রেপ্লিকায় যে কাজ হয়নি, সেটি তো বোঝাই যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াও বুঝল, নেট অনুশীলনে অশ্বিনকে পাওয়া গেলেও অশ্বিনের মস্তিষ্ক তো আর ‘ধার’ নেওয়া সম্ভব নয়। এক যুগ ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলা অশ্বিনের কাছ থেকে এমন কিছু অবশ্য নতুন নয়। নাগপুর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসেই একটি বড় মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছিলেন।
অ্যালেক্স ক্যারিকে বোল্ড করা উইকেটটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ৪৫০তম। মাত্র ৮৯ টেস্টেই সাড়ে ৪০০ উইকেট—ভারতীয়দের মধ্যে এটিই দ্রুততম, বৈশ্বিক রেকর্ডে মুরালিধরনের পর দ্বিতীয়। ভারতীয়দের মধ্যে টেস্ট উইকেটের ৫০ ছোঁয়া সব কটি মাইলফলকেও অবশ্য অশ্বিনই দ্রুততম। ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০, ৪০০, ৪৫০—সব মাইলফলকই আগে ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই স্পিনার।
উইকেটের এসব সংখ্যাগত সাফল্যের আড়াল ফুঁড়ে বেরিয়েছে অশ্বিনের ‘বাঁহাতি ব্যাটসম্যানশিকারি’ সত্তাও। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেওয়ার পথে অশ্বিন যে পাঁচজনকে আউট করেছেন, চারজনই ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ম্যাট রেনশ ও উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি—তিন বাঁহাতিই অশ্বিনের অফ স্পিনে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন। আর টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান উসমান খাজা আউট হন স্লিপে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে।
সাধারণত বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে ভালো অ্যাঙ্গেল পেয়ে থাকেন অফ স্পিনাররা। তবে সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে অশ্বিনের মতো সফল হতে পারেননি আর কেউ। টেস্টে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট অশ্বিনের। ১৬৬টি ইনিংসে তাঁর শিকার ২৩০ উইকেট।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে সফল ডানহাতি বোলারের তালিকায় শীর্ষ তিনে বাকি দুজনই পেসার। দুজনই ইংল্যান্ডের। বাঁহাতিদের বিপক্ষে জিমি অ্যান্ডারসন ৩১৪ ইনিংসে নিয়েছেন ২০৯ উইকেট। ২৭৬ ইনিংসে ১৭৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে স্টুয়ার্ট ব্রড।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে থাকা পাঁচ বাঁহাতির চারজনকেই কীভাবে শিকার বানিয়েছেন অশ্বিন? ম্যাচ শেষে তাঁর কথায় ব্যাখ্যাটা পাওয়া গেল, ‘উইকেটটা খুব ধীর ছিল। আমার জন্য দরকার ছিল ব্যাটসম্যানদের দিয়ে ড্রাইভ খেলানোর। বল ঝুলিয়ে দিয়ে ওদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে গেছি।’