ফলোঅন এড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ—প্রশ্নটি বাংলাদেশের ইনিংসের প্রায় শুরু থেকেই উঠেছে। ব্যাটসম্যানদের একের পর এক ভুল শট খেলায় শেষ পর্যন্ত ফলোঅনের সীমানা পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও ভারত ফলোঅন করায়নি। নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে তারা ১৪৯ রানে। ভারতের প্রথম ইনিংস থেকে ২২৭ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ দল।
দ্বিতীয় দিন সকালে আজ ভারতকে ৩৭৬ রানে অলআউট করে দিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। যশপ্রীত বুমরার করা ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিটি ছিল লেগ সাইডে। সেটি দেখেশুনে ছেড়ে দেন সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয় বলে নেন ২ রান। পরের তিনটি বলও ভালোভাবে সামলে নেন সাদমান। মনে হচ্ছিল, শুরুটা বাংলাদেশ ভালোই করতে যাচ্ছে। কিন্তু বুমরার ষষ্ঠ ডেলিভারিটি আর সামলাতে পারেননি তিনি।
অফ স্টাম্পের ওপর লেংথ ডেলিভারি ছিল। সাদমান অফ স্টাম্প কাভার না করেই ছেড়ে দেন সেটি। বল অফ স্টাম্প থেকে আরেকটু ভেতরে ঢুকে মিডল স্টাম্পের চূড়ায় লেগে তুলে নেয় বেলস। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন উইকেটে এসে চেষ্টা করেন জাকির হাসানকে নিয়ে শুরুর ধাক্কাটা সামলাতে। কিন্তু সেটা বাংলাদেশ পারল কই! আকাশ দীপের পরপর দুই বলে জাকির ও মুমিনুল হককে হারিয়ে বরং আরও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
নাজমুল মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে এরপর চেষ্টা করে যেতে থাকেন। কিন্তু ৪ রানের মধ্যে ফিরে যান তাঁরাও। নাজমুলকে মোহাম্মদ সিরাজ আর মুশফিককে তুলে নেন বুমরা। ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ পড়ে যায় ফলোঅনের শঙ্কায়। বাংলাদেশকে ফলোঅন করানোর পথে ভারতের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাকিব-লিটন জুটি।
কিন্তু ভারতের বোলারদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে একপ্রকার ‘আত্মহত্যা’ করে বাংলাদেশের শেষ ভরসাও শেষ করে দেন লিটন-সাকিবের দুজনই। সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ৯৪ বলে ৫১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ভাঙে লিটনের আউটে।
ভারতের বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজাকে প্রথম সুইপ খেলার চেষ্টা করেছিলেন লিটন। ‘স্পিনের বিরুদ্ধে’ এমন শট মোটেও সহজ নয়। এর ওপর ৪১ বল খেলা লিটন জাদেজার বিপক্ষে পুরোপুরি সেটও ছিলেন না। কিন্তু কী ভেবে শটটি খেলতে গিয়েছেন সেটা তিনি-ই ভালো জানেন। তুলে খেলতে গিয়ে বল তুললেন আকাশে। লং লেগ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচটি নিয়েছেন বদলি ফিল্ডার ধ্রুব জুরেল। ৯১ রানে পড়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেট।
লিটনের আউটের পর উইকেটে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাস্তব বিবেচনায় বাংলাদেশের ফলোঅন এড়াতে ভরসা করার মতো শেষ জুটি ছিল সাকিব-মিরাজ। কিন্তু লিটনের ‘আত্মহত্যা’ থেকে কিছু শেখেননি সাকিব। একই পথে হাঁটেন তিনি। আউট হয়েছেন লিটনের চেয়েও বেশি আত্মঘাতী শট খেলে। জাদেজাকেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন সাকিব। রিভার্স সুইপ করার পর বলটি তাঁর বুটে লেগে যায় উইকেটকিপার ঋষভ পন্তের গ্লাভসে। ৯৪ রানে পড়ে বাংলাদেশের সপ্তম উইকেট।
‘ডাবল স্পিন অ্যাটাক’ শেষে ভারতের অধিনায়ক আবার বোলিংয়ে ফেরান তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র বুমরাকে। ফিরেই তিনি তুলে নেন হাসান মাহমুদকে। ৮ উইকেটে ১১২ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এটি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বুমরার ৪০০তম। এরপর তাসকিনকে তুলে নিয়ে ইনিংসের নিজের উইকেটসংখ্যা নিয়ে যান চারে।
তাসকিন যখন আউট হন, বাংলাদেশের রান তখন ৯ উইকেটে ১৩০। ফলোঅন এড়াতে তখনো বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩৭ রান। যার মানে, এই ইনিংসে শেষবারের মতো বাংলাদেশের সমর্থকদের ফলোঅন এড়ানোর প্রহর গোনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সেই প্রহর গোনা শেষ হয় সিরাজের বলে নাহিদ রানা ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরলে।
এর আগে আগের দিনের ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা ভারত আজ যোগ করতে পারে ৩৭ রান। আগের দিনের ৮৬ রানেই আউট হয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। অশ্বিন আউট হয়েছেন ১১৩ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। এটা টেস্ট ক্যারিয়ারে ইনিংসে তাঁর দ্বিতীয় ৫ উইকেট। তাসকিন নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ৯১.২ ওভারে ৩৭৬ (অশ্বিন ১১৩, জাদেজা ৮৬, জয়সোয়াল ৫৬, পন্ত ৩৯, আকাশ ১৭, বুমরা ৭; হাসান ৫/৮৩, তাসকিন ৩/৫৫, নাহিদ ১/৮২, মিরাজ ১/৭৭)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৭.১ ওভারে ১৪৯ (সাকিব ৩২, মিরাজ ২৭*, লিটন ২২, নাজমুল ২০, রানা ১১, তাসকিন ১১, হাসান ৯, মুশফিক ৮, জাকির ৩, সাদমান ২, মুমিনুল ০; বুমরা ৪/৫০, জাদেজা ২/১৯, আকাশ ২/১৯, সিরাজ ২/৩০)।
* ১ম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৭ রানে পিছিয়ে।