৪০ বছর বয়সে টেস্ট খেলতে নামছেন অ্যান্ডারসন
৪০ বছর বয়সে টেস্ট খেলতে নামছেন অ্যান্ডারসন

লর্ডস টেস্ট

অ্যান্ডারসনের ম্যাচে আলোচনায় ‘বাজবল’

২০০৩ সালের ২২ মে। ক্রিকেটতীর্থ লর্ডসে টেস্ট খেলতে নেমেছিল ইংল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে।

ইংল্যান্ডের হয়ে সেদিন টেস্ট অভিষেক হলো ২০ বছর বয়সী ব্লন্ডচুলো এক পেসারের। তাঁর নাম জেমস অ্যান্ডারসন।

ইংল্যান্ড দলে ছিলেন ৪০ ছাড়ানো এক ক্রিকেটারও। ১৯৯৫ সালের পর ৪০ ছাড়ানো প্রথম ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন অ্যালেক স্টুয়ার্ট। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি খেলা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের পর ৪০তম জন্মদিন পালন করা কোনো খেলোয়াড় আর টেস্ট খেলেননি ইংল্যান্ডের হয়ে।

ইংলিশদের সেই ‘আক্ষেপ’ দূর হচ্ছে আজ। লর্ডসেই আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নামছেন ৪০ বছর ১৮ দিন বয়সী এক খেলোয়াড়—১৯ বছর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪০ বছর বয়সী স্টুয়ার্টের সঙ্গে টেস্ট খেলা অ্যান্ডারসন।

ইংল্যান্ড কাল একাদশই ঘোষণা করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় শুরু ম্যাচের আগে কোনো ঝামেলা না হলে অ্যান্ডারসনের ১৭৩তম টেস্ট খেলা নিশ্চিত। টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫৭ উইকেটের মালিক পেসার শুধু স্টুয়ার্টেরই নয়, ফিরিয়ে আনবেন আরও পুরোনো স্মৃতি।

৬১ বছর আগে ১৯৬১ সালে হেডিংলিতে দুই টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্টটি খেলেছিলেন ডানহাতি ইংলিশ পেসার লেস জ্যাকসন। ৪০ পেরোনো জ্যাকসন তাঁর অভিষেক টেস্ট খেলেছিলেন আরও ১২ বছর আগে, ১৯৪৯ সালে। জ্যাকসনের পর আরও দুই পেসার ৪০ পেরিয়ে টেস্ট খেলেছেন। নিউজিল্যান্ডের বেভান কংডন (১৯৭৮) ও ইংল্যান্ডের বাসিল ডি’অলিভিয়েরা (১৯৭২)। পরিচয়ের ঘরে অলরাউন্ডার শব্দটা থাকলেও কংডন-ডি’অলিভিয়েরারা যতটা না বোলার ছিলেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই।

বাসিল ডি’অলিভিয়েরা পৃথিবী ছেড়েছেন ২০১১ সালে। তবে তিনি না থেকেও আজ আছেন। তাঁর নামেই যে ২০০৪ সাল থেকে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের নামকরণ হয়েছে বাসিল ডি’অলিভিয়েরা ট্রফি। ট্রফিটা ২০১৫ সাল থেকেই ইংল্যান্ডের দখলে। সেই থেকে ঘরে-বাইরে মিলিয়ে টানা তিনবার ট্রফি জিতেছে ইংলিশরা। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম-বেন স্টোকস জুটির ইংল্যান্ডের সামনে সংখ্যাটাকে টানা চার বানানোর চ্যালেঞ্জ।

গত মে মাসে ইংলিশ ক্রিকেটে ম্যাককালাম-স্টোকস যুগ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভোজবাজির মতো বদলে গেছে ইংল্যান্ড। এর আগে খেলা সর্বশেষ ১৭ টেস্টে মাত্র ১টি জেতা ইংলিশরা এরপর ৪টি টেস্ট খেলে জিতেছে ৪টিতেই। সেই জয়গুলোও কীভাবেই না পেয়েছে দলটি! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের পর ভারতকেও একমাত্র টেস্টে বড় রান তাড়া করে হারিয়েছে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের নতুন উদাহরণ তৈরি করা ইংল্যান্ড ‘বাজবল’ শব্দটাও উপহার দিয়েছে ক্রিকেটকে।

এই বয়সেও যেকোনো কন্ডিশনে উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য রাখেন অ্যান্ডারসন

তিন ম্যাচের সিরিজ শুরুর আগে সেই ‘বাজবল’ নিয়েই ভাবতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। দলটির অধিনায়ক ডিন এলগারকে বলতে হচ্ছে, তাঁরা ‘বাজবল’কে ভয় পাচ্ছেন না। এলগার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ইংল্যান্ডের আগ্রাসী ব্যাটিং নিয়ে ভাবেন না তিনি, ‘ওরা যে স্টাইলে খেলছে, তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমাদের সিমারদের বিপক্ষে ওদের দেখতে আমি মুখিয়ে আছি।’

তবে ইংলিশ পেসার অ্যান্ডারসন সোমবার বলেছেন, ইতিবাচক মানসিকতা তাঁর দলের জন্য আরও ভালো ফল বয়ে আনবে, ‘এভাবে খেললে যে কোনো দিন কোনো বিপদ হবে না, আমি সেটি মনে করি না। তবে আমরা এখন জানি, আমাদের যেকোনো রান তাড়া করার সামর্থ্য আছে। আমাদের যেকোনো কন্ডিশনে উইকেট নেওয়ার সামর্থ্যও আছে।’

ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসও কাল কথা বলেছেন এ নিয়ে, ‘প্রতিপক্ষ এখন এ নিয়ে অনেক কথা বলছে। আমাদের দরকার শুধু নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করা। আমাদের খেলার একরকম ধরন, ওদের খেলার আরেক রকম। দিন শেষে তো এটা বল আর ব্যাটের লড়াই। যারা ভালো খেলবে, তাদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। ভালো লাগছে যে ডিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা বলে বেড়াচ্ছে যে তাদের এ নিয়ে উৎসাহ নেই, আবার এ নিয়ে বলতেও থামছে না।’