‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’—লিটন দাসের শূন্যের গল্পটা যেন ছোটগল্প নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া সংজ্ঞাটার মতো হয়ে গেল। এ বছর খেলা ৫ ওয়ানডের ৩টিতেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন লিটন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতেও তাঁর নামের পাশে ছিল শূন্য।
তবে এ বছর বাংলাদেশের আর কোনো ওয়ানডে ম্যাচ না থাকায় মনে হচ্ছিল, লিটনের শূন্য–ফাঁড়া বোধ হয় শেষই হলো। কিন্তু কিসের কী! ওয়ানডের কাছ থেকে ব্যাটনটা যেন এবার টি–টোয়েন্টি নিয়ে নিল। সেন্ট ভিনসেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতেও আজ ‘গোল্ডেন ডাক’ নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন লিটন। আকিল হোসেনের বলে তাঁকেই দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করলেন লিটন। ২০২১ সালে এই সংস্করণে নেতৃত্বের অভিষেকেও মারেন ‘গোল্ডেন ডাক’। সেই ম্যাচেও নামেন ব্যাটিং–অর্ডারের তিন নম্বরে। শুধু প্রতিপক্ষ আর ভেন্যু আলাদা। সেবার স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে, এবার স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট ভিনসেন্টে।
কাকতালীয়ই বটে! চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৮টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাট করেছেন লিটন। যেখানে এটি তাঁর দ্বিতীয় শূন্য। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের প্রথম ম্যাচটি শূন্য দিয়ে শুরু করেছিলেন ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
শূন্যের এই সাতকাহনের মধ্যেও লিটন যে একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে আছেন, তা নয়। আধুনিক ক্রিকেটে শুধু উইকেটকিপিং দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া কঠিন হলেও লিটন এই মুহূর্তে কিপিং দিয়েই দলকে ভরসা দিচ্ছেন।
এমনকি আজকের ম্যাচে তো ডিসমিসালের একটি রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন লিটন। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারটি ক্যাচ নিয়েছেন এবং একটি স্টাম্পিং করেছেন লিটন। ম্যাচে তাঁর ডিসমিসাল পাঁচটি, যা কিনা টি–টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো উইকেটকিপারের সর্বোচ্চ। এর আগে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩টি ডিসমিসাল ছিল মুশফিকুর রহিম, নুরুল হাসান ও লিটনের নিজের। আজ মুশফিক–নুরুলের সঙ্গে নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন লিটন।
কিপিংয়ের বাইরে নেতৃত্বেও বাংলাদেশকে ভরসা দিচ্ছেন লিটন। বিশেষ করে শেষ দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ম্যাচটা প্রায় বেরই করে ফেলেছিল, তখন বোলারদের তিনি ব্যবহার করেছেন বুদ্ধিদীপ্তভাবে। বিশেষ করে শেষ ওভারের জন্য হাসান মাহমুদকে রেখে দেওয়া দারুণ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া শুরুতে উইকেট বুঝতে ভুল হলেও পরে যেভাবে কৌশল বদলেছেন, সেটাও প্রশংসার দাবিদার।
লিটন এই ম্যাচে ডিসমিসাল করেছেন পাঁচটি, যা কিনা টি–টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো উইকেটকিপারের সর্বোচ্চ।
উইকেট নিয়ে লিটনের ভাবনা কীভাবে বদলেছে, ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীর সময় নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমরা এই মাঠে আগেও খেলেছি। আমি যখন উইকেট দেখি, তখন যেমন মনে হয়েছিল, পরে সেভাবে আচরণ করেনি। আমরা যখন ব্যাট করছিলাম, তখন বুঝতে পারলাম, এটা (ব্যাটিংয়ের জন্য) খুব ভালো উইকেট নয়। আমাদের মনে হয়েছিল, ১৫০ থেকে ১৬০ রানই এখানে যথেষ্ট। জানতাম, আমাদের যে বোলাররা আছে, তা দিয়ে লড়তে পারব।’
বোলাররা লিটনের এই আস্থার প্রতিদান ভালোভাবেই দিয়েছেন। যখন যাঁকে প্রয়োজন হয়েছে, এগিয়ে এসে দলের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দল নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা লিটন জানালেন এভাবে, ‘আমি চেয়েছিলাম দল আগ্রাসী ক্রিকেট খেলুক। নিজেদের মান কেমন, তারা সেটা দেখিয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। শুরুটা আমাদের ভালো হলো। আরেকটি ম্যাচ ভালো খেললে আমরা সিরিজ জিততে পারি।’
সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ মাঠে নামবে ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন লিটন নিশ্চয়ই শুধু গ্লাভস ও নেতৃত্বে নয়, ব্যাট হাতেও অবদান রাখতে চাইবেন।