১৯৮৬ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ইংলিশ তারকা গ্যারি লিনেকার। ইংল্যান্ড ফুটবলের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার খেলেছেন ১৯৯০ বিশ্বকাপও। টটেনহাম হটস্পার ও বার্সেলোনায় খেলা লিনেকার ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে পরিচিত। ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সাফল্যে লিনেকার টুইটারে সক্রিয় থাকেন। ইংলিশ ক্রিকেটের সাফল্যেও হন উদ্বেলিত।
ইংল্যান্ড–দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে লর্ডস টেস্টে বিবিসির বিখ্যাত অনুষ্ঠান টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন ইংলিশ ফুটবল তারকা। তিনি সেখানে এক আড্ডায় জানিয়েছেন নিজের ক্রিকেট–অভিজ্ঞতার কথা। ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশের বল খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। অম্ল–মধুর সে অভিজ্ঞতার কথা তিনি বলেছেন স্বভাবসুলভ রসিকতায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেদিন কোর্টনি ওয়ালশের মুখোমুখি হয়েছিলেন লিনেকার, সে রাতেই টটেনহামের হয়ে একটি ম্যাচ ছিল তাঁর। দিনের বেলা শতক হাঁকিয়ে, সন্ধ্যায় টটেনহামের হয়ে করেছিলেন হ্যাটট্রিক! টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে লিনেকার বলেছেন, সেই দিনটি তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের বিশেষ এক দিন।
ইংরেজ অভিনেতা ডেভিড স্টুয়ার্ট ইংলিশের আমন্ত্রণে সেই প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন লিনেকার। এই ডেভিড ইংলিশ পরবর্তী সময় বানবেরি ক্রিকেট ক্লাব ও বানবেরি টেইলস নামের একটি দাতব্য সংস্থা খুলেছিলেন। তিনি এই সংস্থার নামে বিভিন্ন প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করে তহবিল সংগ্রহ করতেন। তেমনই একটি উপলক্ষে এক সন্ধ্যায় গ্যারি লিনেকারকে ফোন করেন ডেভিড ইংলিশ। লিনেকার বলেছেন, ‘এক সন্ধ্যায় ডেভিড ইংলিশ আমাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, একটি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেছেন, সেখানে আমাকে খেলতে হবে। তিনি বেশ বিপদে পড়েই আমাকে ফোন করেছেন, কারণ বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ শেষ মুহূর্তে ম্যাচ থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। তাই তিনি আমাকে বলেছিলেন, “গ্যারি, আমার একজন পরিচিত মুখ লাগবে। দয়া করে তুমি ম্যাচটি খেলে আমাকে উদ্ধার করো।’
লিনেকার তখন উভয় সংকটে। যেদিন ক্রিকেট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সেদিন সন্ধ্যাতেই টটেনহামের হয়ে ম্যাচ তাঁর। লিনেকার অবশ্য টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল অনুষ্ঠানে ওই ম্যাচটি কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, নির্দিষ্ট করে সন, তারিখ কিছুই উল্লেখ করেননি। লিনেকার ম্যাচটি খেলার জন্য একটা শর্ত দিয়েছিলেন ডেভিড ইংলিশকে, ‘আমি ম্যাচটা খেলতে পারি, এক শর্তে, আমি ব্যাটিং উদ্বোধন করব। আউট হয়ে গেলে চলে যাব।’ ডেভিড রাজি হয়ে যান।
পরদিন ম্যাচ খেলতে গিয়ে বেশ ভড়কেই গিয়েছিলেন লিনেকার। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নামবেন, ওদিকে প্রতিপক্ষ দলে উদ্বোধনী বোলার আর কেউ নন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভয়ংকর ফাস্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশ। লিনেকার বলেন, ‘৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে বোলিং করবেন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ওয়ালশ। প্রথম বলটিই তিনি বাউন্সার দিয়েছিলেন। আমার মাথার অনেক ওপর দিয়ে সেটি চলে গিয়েছিল। সেটি ছিল মজা করেই। আমাকে ‘হত্যা’ করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। পরের চারটি বল করেছিলেন অফ স্টাম্পের বাইরে। আমি খেলতে পারছিলাম না। শেষ বলটিও একই রকম করলেন। তবে এবার আমি সুযোগ নিলাম। বাঁ পা বলের লাইনে নিয়ে মেরে দিলাম। আমাকে অবাক করে বল চলে গেল কাভার দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে।’
লিনেকার সে ম্যাচ ১১২ রান করেছিলেন, ‘মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই আমি ১১২ রানে অপরাজিত ছিলাম। ভাবা যায়! সেদিন সন্ধ্যায় টটেনহামের হয়ে হ্যাটট্রিকও করেছিলাম। ওই দিনটি ছিল আমার খেলোয়াড়ি জীবনের বিশেষ এক দিন। একদিনে ক্রিকেটে সেঞ্চুরি, ফুটবলে হ্যাটট্রিক, আর কী চাই!’