নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ জয় তুলেছে অস্ট্রেলিয়া
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ জয় তুলেছে অস্ট্রেলিয়া

৭৭১ রানের ম্যাচে ৫ রানে জিতল অস্ট্রেলিয়া

শেষ ৬ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১৯ রান। বোলিংয়ে সময় বেশি নিয়ে ফেলার শাস্তি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বাউন্ডারির ফিল্ডার তখন মাত্র ৪ জন। মিচেল স্টার্কের ৫ ওয়াইড আর জিমি নিশাম-ট্রেন্ট বোল্টদের তিনটি ডাবলসে সমীকরণটা নেমে আসে ২ বলে ৭ রানে।

কিন্তু পঞ্চম বলে স্টার্কের কোমর-উচ্চতার ফুল টসে নিশাম না পেরেছেন বড় শট খেলতে, না পেরেছেন দুই রান নিতে। নিশামের রানআউটের পর শেষ বলে ছয়ের হিসাব মেলাতে পারেননি লকি ফার্গুসন। অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৮ রান তাড়ায় কিউইদের ইনিংস থামে ৩৮৩ রানে। রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের এই লড়াইয়ে দুই দল মিলে উঠেছে ৭৭১ রান, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ। ভেঙে গেছে এবারের আসরেই দিল্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ওঠা ৭৫৪ রানের রেকর্ড।

টানা দুই হারে টুর্নামেন্ট শুরু করা অস্ট্রেলিয়া টানা ৪ জয় তুলে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলেছে। ৬ ম্যাচ শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চারে অস্ট্রেলিয়া। সমান ম্যাচে সমান জয় তুলে নেওয়া নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহও ৮ পয়েন্ট। অস্ট্রেলিয়ার (০.৯৭০) চেয়ে রান রেটে এগিয়ে পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় নিউজিল্যান্ড (১.২৩২)।

৪০০–এর কাছাকাছি রান তাড়া করতে নেমে ৫.১ ওভারেই ৫০ তুলে ফেলেন দুই কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। তবে জশ হ্যাজলউড পরপর দুই ওভারে দুজনকেই তুলে নিলে নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে।

নিউজিল্যান্ডকে জয়ের পথে রেখেছিল রাচিন রবীন্দ্রর ইনিংস। তিনে নামা এই বাঁহাতি প্রথমে ড্যারিল মিচেল, এরপর অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিয়ে দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েন। একপ্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখলেও রবীন্দ্র টিকেছিলেন ৪১তম ওভার পর্যন্ত। উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি এই ম্যাচেও শতক তুলে নেন, থেমেছেন ১১৬ রানে। প্যাট কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মারনাস লাবুশেনের ক্যাচ হওয়ার আগে ৮৯ বলের ইনিংসটিতে মেরেছেন ৯টি চার ও ৫টি ছয়।

রাচিন রবীন্দ্র বিশ্বকাপে দ্বিতীয় শতক তুলে নিয়েছেন

রবীন্দ্র আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে শেষের রোমাঞ্চে নিয়ে যান নিশাম। রান আউট হওয়ার আগে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৩৯ বলে ৫৮ রান করে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসেও ছিল বাউন্ডারি আর রানের ছড়াছড়ি। হাতের চোট সেরে ৪৩ দিন পর ক্রিকেটে ফেরা ট্রাভিস হেড ২৫ বলেই তুলে ফেলেন অর্ধশতক, ৫৯ বলে শতক। আরেক প্রান্তে ডেভিড ওয়ার্নার খেলেন ৬৫ বলে ৮১ রানের ইনিংস। দুই বাঁহাতির ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভারে ১১৮ এবং জুটিতে ১৯.১ ওভারে ১৭৫ রান পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন হেড–ওয়ার্নার

নিউজিল্যান্ড ওয়ার্নার-হেডের ‘ঝড় থেকে মুক্তি’ পায় গ্লেন ফিলিপসের স্পিনে। খণ্ডকালীন এই অফ স্পিনার ম্যাচের ২০ থেকে ৩০তম ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারের পাশাপাশি স্টিভেন স্মিথের উইকেটও তুলে নেন। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পথে ফিলিপসের খরচ ৩৭ রান, ওভারপ্রতি ৩.৭। নিউজিল্যান্ডের বাকি বোলাররা ৪০ ওভার বলে করে দেন ৩৫০ রান, ওভারপ্রতি ৯.৯ রান।

ওয়ার্নারের ৮১ আর হেডের ৬৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংস বাদে অস্ট্রেলিয়ার আর কেউ ৫০–এ পৌঁছাতে পারেননি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান জশ ইংলিসের। একসময় অস্ট্রেলিয়ার রান ৪০০ পার হবে মনে হলেও শেষ আট বলের মধ্যে মাত্র ১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেমে যায় ৩৮৮ রানে।

যদিও এই রানটাই শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিয়েছে তাদের। ম্যাচসেরা হন প্রায় দেড় মাস পর মাঠে ফেরা হেড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ (হেড ১০৯, ওয়ার্নার ৮১, ইংলিস ৩৮, কামিন্স ৩৭, মার্শ ৩৬; ফিলিপস ৩/৩৭, বোল্ট ৩/৭৭)।

নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৮৩/৯ (রবীন্দ্র ১১৬, নিশাম ৫৮, মিচেল ৫৪, ইয়ং ৩২; জাম্পা ৩/৭৪, কামিন্স ২/৬৬, হ্যাজলউড ২/৭০)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: ট্রাভিস হেড।