শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিম
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিম

এশিয়া কাপ

অনেক প্রশ্ন রেখে গেল যে ইনিংস

টসে জিতে ব্যাটিংই কেনো? দুটি উইকেট পড়ার পর সাকিব আল হাসানকেই কেনো নামতে হলো? এক টানা তিনজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নামায় কী শ্রীলঙ্কার সুবিধা হলো না? পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল যখন আগে ব্যাট করে ৪২.৪ ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয়, তখন তো এ প্রশ্নগুলো আসবেই।

অথচ এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগের আলোচনা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। শ্রীলঙ্কা দলটার বোলিং যেহেতু চোটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা ভালো হবে, এমনই ছিল পূর্বানুমান। কিন্তু শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির বোলাররাও আজ বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলতে দিল না।

অনেকে মহীশ তিকশানা ও মাতিশা পাতিরানার উদাহরণ টানতে পারেন। দুজনই আইপিএলে নিয়মিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা মাত্র ২৬টি ওয়ানডে ম্যাচের। শেষ পর্যন্ত এই দুজনের ১৫.৪ ওভারে ভেঙেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। দুজন মিলে রান দিয়েছেন মাত্র ৫১, উইকেট নিয়েছেন ৬টি।

ভাঙনের শুরুটাই হয় তিকশানার হাত ধরে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অভিষিক্ত তানজিদ হাসানকে কোনো রান করার আগেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তিনি। যে ক্যারম বলের জন্য তিকশানার পরিচিতি, সেই বলটা ইনিংসে প্রথমবারের মতো করতেই তানজিদ আউট। কীভাবে? ডিফেন্স খেলতে গিয়ে তানজিদ একদম ফরওয়ার্ডও হলেন না, পুরোপুরি ব্যাকফুটেও এলেন না। খেললেন ক্রিজ থেকে। তাতে তিকশানার তানজিদের সামনে পা খুঁজে নিতেও সমস্যা হয়নি।

তানজিদের সঙ্গী মোহাম্মদ নাঈমের শুরুটা অবশ্য আশা জাগাচ্ছিল। কাভার ড্রাইভে দুটি বাউন্ডারি মারার পর নাঈমকে ভালোই মনে হচ্ছিল। তবে সেটা পেসের বিপক্ষে। লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও হয়তো তা খুব দ্রুত ধরতে পেরেছেন। তিকশানার তিন ওভারের ছোট স্পেলের পর ইনিংসের অষ্টম ওভারেই অনিয়মিত অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোলিংয়ে আনেন তিনি। নাঈম তাঁর বলেই ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন। ২৩ বল খেলে ১৬ রান থামে তাঁর ইনিংস।

৪ উইকেট নিয়েছেন পাতিরানা

দ্রুত দুই বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ে একজন ডানহাতি ক্রিজে আসবেন, এমনই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু তা হয়নি। অধিনায়ক সাকিব নিজেই এলেন চার নম্বরে। হয়তো প্রতি আক্রমণে চাপ সরানোর দায়িত্বটা তিনি নিজেই নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ সেটি কাজে লাগেনি। ৫ রান করে পাতিরানা প্রথম শিকার হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় সাকিবকে। বাংলাদেশ ইনিংস তখন মাত্র ১০.৪ ওভার পুরোনো, বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৩৬। উইকেট পতনের কারণেই কী না, বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের ৬০ বলের মধ্যে ডট বল খেলেছে ৪০টি।

এমন ঘোর অমাবস্যায় কিছুক্ষণের জন্য তিনে নামা নাজমুল ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তাঁর ৫৯ রানের জুটি গড়েন। ৮০ বলে হলেও সে জুটিটা বাংলাদেশের রানটাকে এক শ’র কাছাকাছি নিতে সাহায্য করে। তাওহিদ ৪১ বলে ২০ রান করে আউট হলে সে জুটি ভাঙে। শানাকার সাদামাটা একটি বল তিনি ক্রিজ ছেড়ে লেগ সাইড ফ্লিক করার চেষ্টা করে এলবিডব্লু হন।

সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও পারেননি নাজমুল

বাংলাদেশ ইনিংসটা এরপর আর ঘুরে দাঁড়ায়নি। নাজমুল শুধু একাই লড়ে গেছেন। ফিফটি করে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রানটাও দুই শ হবে, এমন আশার জন্ম নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। মুশফিকুর রহিম (১৩), মেহেদী হাসান মিরাজ (৫), শেখ মেহেদী হাসানের (৬) দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে খুব দ্রুতই লোয়ার অর্ডার ভেঙে পড়ে।

নাজমুল আউট হন তিকশানার ক্যারম বলে বোল্ড হয়ে। ১২২ বল খেলে তিনি ৮৯ রান করেন ৭টি চারে। বাংলাদেশের ইনিংসে অর্জন যদি কিছু থেকে থাকে, তা এই নাজমুলের ইনিংসই। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন পাতিরানা, ৩২ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি।