ক্রিকেটীয় ভাষায় সুপার ওভারে জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াকার ইউনিসের ভাষায় সেই জয়টাই পাকিস্তানের জন্য এমন, ‘কে ভেবেছিল পাকিস্তানকে এমন দিন দেখতে হবে। অবিশ্বাস্য, অবাস্তব!’ বাকিটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। ডালাসে গতকাল রাতে কী ঘটেছে তা আপনার জানার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ধাক্কায় রিখটার স্কেলে ৭-৮ মাত্রার ‘ভূকম্পন’ অনুভূত হয়েছে সুদূর পাকিস্তানেও, ক্রিকেট বিশ্বেও নয় কী!
ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাই চোয়াল শক্ত করে আসতে হয়েছে বাবর আজমকে। মাঠে কিছুক্ষণ আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছে পাকিস্তান। কাগজে-কলমে সেটি হার হলেও আসলে কী শুধুই হার? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে, পাকিস্তান ক্রিকেটে এটাই সবচেয়ে দুঃখের দিন কি না! কেউ কেউ লজ্জার ব্যাপারটাও টেনে আনছেন। বাবরের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যাপারটা তিনিও এড়াতে পারছেন না। অবিশ্বাস্য এক হারের লজ্জা না হোক মাটিতে মিশে যাওয়া মতো অনুভূতিই হয়তো তাঁর হচ্ছিল।
বাবর অবশ্য ভাগ্যকেও দোষারোপ করে ইতালিয়ান স্ট্রাইকার মারিও বালোতেল্লির মতো বলতে পারেন, ‘হোয়াই অলওয়েজ মি’—অর্থাৎ কেন আমার সঙ্গে বারবার এমন হয়! জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র—বলা যায়, কোনো দল যে বাদ থাকছে না! শক্তিতে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা এমন সব দলের কাছে হেরেছে বাবরের পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ডালাস বিপর্যয়’ তার-ই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাবরের কথা শুনলে অবশ্য মনে হবে এই বিপর্যয়ের পেছনে তিনি দুষেছেন বোলারদের ব্যর্থতাকে। পাকিস্তান অধিনায়কের মতে, ম্যাচটা সুপার ওভারে যায় না। ৭ উইকেটে ১৫৯ রানের পুঁজি—যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তার আগেই জেতার মতো স্কোর।
বাবর বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসেও আমরা সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু বোলিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা মানসম্পন্ন ছিলাম না। প্রথম ১০ ওভারে এটার ঘাটতি ছিল। আমরা তারপর ফিরে এলেও ওরা তার আগেই মোমেন্টাম পেয়েছে। তবে আমাদের বোলিং বিচারে (রানের) পুঁজিটা ডিফেন্ড করা উচিত ছিল। এই পিচে আমাদের বোলিং বিচারে এটা ডিফেন্ড করার মতোই পুঁজি ছিল।’
ম্যাচটা সুপার ওভারে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকেই অভিবাদন জানিয়েছেন বাবর, ‘বোলিংয়ে আমরা এর চেয়ে ভালো। প্রথম ৬ ওভারে আমরা উইকেট নিতে পারিনি। মাঝের ওভারগুলোয় স্পিনারেরা উইকেট নিতে না পারলে চাপে পড়তেই হবে। ১০ ওভার পর আমরা ম্যাচে ফিরলেও সুপার ওভারে ওরা ম্যাচটা যেভাবে শেষ করেছে তাতে কৃতিত্বটা যুক্তরাষ্ট্রেরই।’
সুপার ওভারে ১৮ রান দিয়েছেন পাকিস্তানের অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ আমির। তিনটি ওয়াইডসহ ৭টি ‘এক্সট্রা’ও ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান অ্যারন জোন্স ও হারমিত সিং ওয়াইডেও দৌড়েছেন। তাড়া করতে নেমে ১৩ রান তুলতে পেরেছে পাকিস্তান। সংবাদ সম্মেলনে আমিরের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসাই করলেন বাবর, ‘সে অভিজ্ঞ বোলার। সে জানে কীভাবে বোলিং করতে হয় এবং আমরা সে অনুযায়ীই ফিল্ডিং সাজিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানেরা বেশ স্মার্ট। বল উইকেটকিপারের হাতে থাকতেও তারা দৌড়েছে (রানের জন্য)। সুপার ওভারে এটা তাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সহযোগী সদস্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের তুলনাই চলে না। বাবরের পাকিস্তান কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে একটু হালকাভাবেই নিয়েছিল?
উত্তরটি পাকিস্তান অধিনায়কের মুখেই শুনুন, ‘যেকোনো টুর্নামেন্টেই সেরা প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয়। এটা আসলে মানসিকতার ব্যাপার। (যুক্তরাষ্ট্রের মতো) এমন দলের বিপক্ষে একটু শিথিলতা থাকেই। তবে নিজেদের পরিকল্পনাটা কাজে লাগাতে না পারলে সেটা যে দলই হোক ভোগাবেই। তাই আমার মতে, পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগানোর ব্যাপারে আমরা ভালো ছিলাম না। প্রস্তুতিতে আমরা ভালো করেছি। কিন্তু ম্যাচে দল হিসেবে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি।’