১১২ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন টেক্টর
১১২ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন টেক্টর

টেক্টরের সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে আয়ারল্যান্ড

বৃষ্টির শঙ্কা ছিলই, পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ চেমসফোর্ডের সকালটাও ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৫ ওভারে। কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু চেমসফোর্ডের মেঘলা আবহাওয়াতেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন হ্যারি টেক্টর। ১১২ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন এই আইরিশ তরুণ। ৪৭ বলে ৭৪ রান করে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন জর্জ ডকরেল। দুজনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে আয়ারল্যান্ড গড়েছে ৬ উইকেটে ৩১৯ রান।

বল হাতে এমন কন্ডিশনের সুবিধা সবচেয়ে বেশি যার নেওয়ার কথা, সেই হাসান মাহমুদ সেটি নিয়েছেনও। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাঁর ইনসুইং অভিজ্ঞ ওপেনার পল স্টার্লিংয়ের ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। আম্পায়ার অবশ্য অতিমাত্রার ইনসুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে প্রথমে আউট দেননি। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরতে হয় স্টার্লিংকে।

চেমসফোর্ডের মেঘলা কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে হাসান একের পর এক দেখিয়ে গেছেন আউটসুইং-ইনসুইংয়ের খেল। যখন ইচ্ছে হয়েছে করিয়েছেন সিম মুভমেন্টও। হাসানের বোলিংয়ের সময় স্লিপ থেকে নাজমুল হোসেন বারবার বলছিলেন, ‘বল ভেতরেও আসছে, বাইরেও যাচ্ছে। জায়গায় করে যাও হাসান।’

বল হাতে হাসান ছাড়া সফল হতে পারেননি কেউ

আইরিশ ব্যাটসম্যানদের কানে পৌঁছানোর জন্যই নাজমুল কথাগুলো বলেছেন ইংরেজিতে। নাজমুলের স্লেজিং কাজে দিয়েছে কি না কে জানে, তবে হাসানের বল আইরিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের পাশ দিয়ে গেছে বেশ কয়েকবারই। হাসান সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন স্টিফেন ডোহেনিকে। শেষ পর্যন্ত তাঁর বেরিয়ে যাওয়া বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ডোহেনি। আউট হওয়ার আগে ২১ বল খেলে তাঁর রান ১২।

তবে নতুন বলে বাংলাদেশ দলের সাফল্য বলতে এই দুই উইকেটই। হাসানের মতো দলের বাকি দুই পেসার কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি। শরীফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন নতুন বলে যে লেংথে বল করেছেন, তা উপমহাদেশের কন্ডিশনের জন্য ঠিক থাকলেও ইংলিশ কন্ডিশনের জন্য নয়। সুযোগটা নিয়েছেন টেক্টরও।

চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নির সঙ্গে ৯৮ রানের জুটি গড়েন টেক্টর। ২৪তম ওভারে শরীফুল ভাঙেন সে জুটি। ফুল লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ৫৮ বলে ৪২ রান করে কট বিহাইন্ড হন বলবার্নি। পাঁচে নামা লরকান টাকারের ইনিংসও দীর্ঘ হয়নি। শরীফুলকে মেরে খেলতে গিয়ে ১১ বলে ১৬ রান করে আউট হন আইরিশ উইকেটকিপার।

টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম

তাতে অবশ্য রানের গতি কমেনি। অন্য প্রান্ত থেকে মেরেই খেলছিলেন টেক্টর। ৫৩ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ফিফটি করে তিনি এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। গতির বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেখে দুই বাঁহাতি সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিন দিয়ে টেক্টরের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেন তামিম। সে পরিকল্পনাও ভেস্তে যায় তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে। তাইজুলের এক ওভারেই মেরেছেন তিন ছক্কা।

তাইজুল কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফেরানোর পর জর্জ ডকরেলকে নিয়ে টেক্টর চার-ছক্কায় আইরিশদের রান বাড়াতে থাকেন। ৯৩ বল খেলে স্পর্শ করেন ওয়ানডেতে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। এই চার সেঞ্চুরিই এসেছে সর্বশেষ ৯ ইনিংসে। টেক্টর বাংলাদেশের বড় ক্ষতিটা করেছেন সেঞ্চুরির পর। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৪০ রান যোগ করেন মাত্র ১৯ বলে!

ইবাদতের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে ১১২ বল খেলে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪০ রান, ৭টি চার ও ১০টি ছক্কা ছিল তাতে। আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা এখন তাঁরই। আগের রেকর্ডটি ছিল অ্যান্ডি বলবার্নির, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে মেরেছিলেন ৮টি ছক্কা।

হাত খুলে খেলেছেন ডকরেলও। ৩১ বলে ফিফটি করে আইরিশদের রান তিন শ’এর ওপারে নিয়ে যান এই অলরাউন্ডার। ইনিংসের ৪১তম ওভারে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউটও হতে পারতেন ডকরেল। কিন্তু ৪৩তম ওভারে কাভারে থাকা সাকিব সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইনিংস দীর্ঘ করেছেন ডকরেল। ৪৭ বল খেলে ৭৪ রান করে অপরাজিত, ১৫৭ স্ট্রাইক রেটের সে ইনিংসে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা। শেষের দিকে ৮ বলে ২০ রান আসে মার্ক অ্যাডাইরের ব্যাট থেকে।