চাইলে বলতে পারেন, এটিও তো ডেভিড বনাম গোলিয়াথ লড়াই!
ডেভিড মানে টিম ডেভিড, অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে এখন পর্যন্ত যিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫টি। আর ‘গোলিয়াথ’ বলতে পারেন স্টিভেন স্মিথকে। এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, ২৮৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে অর্জন ও অধিনায়কত্ব মিলিয়ে স্মিথ তো ‘পুঁচকে’ ডেভিডের তুলনায় সত্যিই ‘দৈত্যাকার’ গোলিয়াথ।
বাইবেলে বর্ণিত ডেভিড বনাম গোলিয়াথের সেই লড়াইয়ের ছাপ অস্ট্রেলিয়ার দুই ক্রিকেটারে এসে ঠেকছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই ডেভিড যেভাবে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে চলেছেন, তাতে বিশ্বকাপ একাদশে জায়গা না পাওয়ার সংশয়েই আছেন স্মিথ।
আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া–ইংল্যান্ড তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজেই নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে এই লড়াইয়ের। যিনি ভালো করবেন, তিনিই হয়তো এগিয়ে থাকবেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার দৌড়ে।
প্রশ্ন উঠতে পারে ডেভিড কীভাবে স্মিথের প্রতিদ্বন্দ্বী হন?
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারে ডেভিড খেলেন ছয়ে, স্মিথ খেলেন তিনে বা চারে। ডেভিডের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কথা তো নিয়মিত ছয়ে খেলা মার্কাস স্টয়নিসের।
কিন্তু পজিশন এক হলেও স্টয়নিস–ডেভিডের আসলে মিল নেই। স্টয়নিস ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংও করেন, আর ডেভিড শুধু ব্যাটিং। চোট কাটিয়ে ফেরা অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ এখনো বোলিংয়ে নিশ্চিত নন।
এমন সময়ে একাদশে বিশেষজ্ঞ চার ব্যাটসম্যান রাখার বিলাসিতায় হয়তো যেতে চাইবে না অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট। আর এখানেই লড়াইটা হবে ডেভিড বনাম স্মিথের।
ডেভিড ওয়ার্নার তো বলেই দিয়েছেন, টিম ডেভিডকে নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হয়েছে নির্বাচকদের। ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন সপ্তাহ তিনেক আগে।
ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ঝলক দেখান—মাত্র ২৭ বলে ৫৪ রানের ঝোড়ো ইনিংসে। এরপর শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছেন ২০ বলে ৪২ রানের আরেকটি বিস্ফোরক ইনিংস।
রান তোলার পাশাপাশি নজর কেড়েছেন গায়ের জোর আর উচ্চতা (৬ ফুট ৫ ইঞ্চি) ব্যবহার করে বড় শট খেলার সামর্থ্যেও। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে যে তিনটি ছক্কা মেরেছেন, তার একটি আছড়ে ফেলেন গ্যাবার ওপরের স্টান্ডে, আরেকটি পড়েছে ১১০ মিটার দূরে!
ম্যাচে ডেভিডের মতো তিন ছক্কা হাঁকিয়েছেন ওয়ার্নারও। ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলা ওয়ার্নার ম্যাচ শেষে প্রশংসায় ভাসান ডেভিডকে, ‘এ ধরনের খেলোয়াড় আপনি প্রতিদিন পাবেন না। ওকে সঙ্গে নিয়ে এগোনো আমাদের জন্য ভালো হবে। আশা করি (দলে) জায়গাও পেয়ে যাবে, কারণ নির্বাচকদের এখনই মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে।’
ডেভিডের মা–বাবা অস্ট্রেলিয়ান হলেও তাঁর জন্ম সিঙ্গাপুরে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকও এশিয়ান দেশটির হয়ে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির আগে সিঙ্গাপুরের হয়ে মোট ১৪টি টি–টোয়েন্টি খেলেন। চার ফিফটিসহ ৪৬.৫০ গড়ে তোলেন ৫৫৮ রান।
ডেভিডকে নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ভাবতে শুরু করে তাঁর মারমুখী ব্যাটিংয়ের জন্য। দুই বছর বয়স থেকে পার্থে বসবাস করা ডেভিড গত তিন বছর ধরে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দারুণ খেলছিলেন। ডেভিড ক্রিজে মানেই যেন মারমুখী ব্যাটিংয়ের রান তরতরিয়ে বাড়তে থাকা।
বিশ্বের কোনো টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেই তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪০–এর নিচে নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১০ স্ট্রাইক রেট আইপিএলে। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে ৬০৬ রান তোলায় স্ট্রাইক রেট ১৫৩, পিএসএলে ৪৫৮ রানে ১৮২, সিপিএলে ৩৬৭ রানে ১৪৪ আর টি–টোয়েন্টি ব্লাস্টে ৪৫০ রানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৭০ স্ট্রাইক রেট।
এ দুটি জাতীয় দলেও তাঁর স্ট্রাইক রেট দুর্দান্ত। সিঙ্গাপুরের হয়ে ৫৫৮ রান করেছেন ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে, আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১১৬ রানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৭০।
ডেভিডের এই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ ওয়ার্নার, ‘সে এখন আমাদের দলের অংশ। সবচেয়ে দরকারি সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি। শটে প্রচুর জোর আছে। ওর উচ্চতা আর শক্তিও আমাদের দলের জন্য খুব ভালোভাবে মিলে যায়।’
ওয়ার্নারের মতো নির্বাচকেরাও যদি ডেভিডকে বিশ্বকাপ একাদশে মেলাতে চান, তবে কোপ পড়তে পারে স্মিথের ওপর। একে তো বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বেশি রাখতে না পারার সমীকরণ, তাঁর ওপর স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় ডেভিডের চেয়ে বেশ পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক।
এ বছর খেলা আট টি–টোয়েন্টি ইনিংসে একটিও ফিফটি নেই স্মিথের; মোট ১৩৪ রান তোলার পথে স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২২.৯৪; বিপরীতে ডেভিডের স্ট্রাইক রেট ১৭০.৫৯!
আরেকটি গোলিয়াথ বনাম ডেভিড লড়াইয়ে ডেভিডের জয়ের পদধ্বনি কি শুনতে পাচ্ছেন?