দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আজ মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছে দারুণ এক জয়। আর ইংল্যান্ড বড় ব্যবধানে হেরেছে নিউজিল্যান্ডের কাছে। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষেও হারলে বেশ চাপে পড়বে ইংলিশরা। আর ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন আরও উজ্জ্বল হবে।
তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের কাজটা মোটেই সহজ হবে না। প্রথম ম্যাচ হেরে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া থাকবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে জহির খান-ওয়াসিম জাফররা মনে করেন, বাংলাদেশ যদি নিজেদের সেরা খেলা খেলতে পারে, তবে কাজটা মোটেই অসম্ভব নয়। আর এ লড়াইয়ে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজকে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বলে মনে করছেন তাঁরা।
ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবপোর্টাল ক্রিকবাজের ম্যাচপূর্ব আলোচনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের কৌশল কেমন হতে পারে জানতে চাইলে ভারতের সাবেক পেসার জহির খান বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড হয়তো এই ম্যাচে বাড়তি পেস নিয়ে আসতে পারে। হয়তো রিচ টপলির অতিরিক্ত বাউন্সও এখানে কাজে লাগতে পারে। আমরা বাংলাদেশকে অতিরিক্ত বাউন্সে সংগ্রাম করতে দেখেছি। সেটাই হয় কিনা দেখতে হবে।’
বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচে সাকিবকেই সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করছেন জহির, ‘সাকিব বেশ ভালো নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা সেটা এশিয়া কাপেই দেখেছি। এই শক্তিটা নিয়েই তারা মাঠে নামবে। অধিনায়কের অভিজ্ঞতা এবং যেভাবে সে খেলোয়াড়দের ব্যবহার করছে, সেটা দারুণ। যদি স্কোরবোর্ডে ভালো সংগ্রহ জড়ো করা যায়, তবে তারা যেকোনো দলকে চাপে ফেলতে পারে। ব্যাটসম্যানদের সাকিবকে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে। সে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আমরা এশিয়া কাপে সেটা দেখেছি। সে জানে কী করতে হবে। সে সবাই জাগিয়ে তুলতে পারে। আর ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারাতে হলে এ প্লাস খেলাই খেলতে হবে।’
এ সময় বোলারদের স্মার্টনেস দেখানোর পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে মুশফিকের ওপরও চোখ রাখতে বলেছেন জহির, ‘ইংল্যান্ডকে অল্প রানে থামাতে হলে বোলারদের স্মার্ট হতে হবে। যে ব্যাটসম্যান ম্যাচে ভালো করবে, তাকে থামানোর উপায় বের করতে হবে। আর ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হবে।’
অনুষ্ঠানটির অন্য অতিথি ভারতীয় ক্রিকেট–বিশ্লেষক জয় ভট্টাচার্য বাজি ধরেছেন মিরাজের ওপর, ‘আমার কাছে মেহেদী হাসান মিরাজই এ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আগের ম্যাচে সে ৫৭ রান করছে, ৩ উইকেট নিয়েছে। সে নতুন বলেও বল করতে পারে। ইংল্যান্ড হয়তো স্পিনার ভেবে তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আর ঠিকঠাক না হলেই উইকেট হারাতে হতে পারে। বাংলাদেশ এটাই করার চেষ্টা করবে।’
বাংলাদেশকে হারানোর কাজটা ইংল্যান্ডের জন্য কতটা কঠিন তা মনে করিয়ে দিয়ে জয় আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে হারানো কঠিন হবে। বাংলাদেশের যা করবে না তা হলো কোনো অবস্থাতেই হাল ছাড়বে না। তারা নিজেরা হেরে যাবে না, তাদের হারাতে হবে। তরুণ দলগুলো অনেক সময় নিজেরাই হেরে বসে থাকে। বাংলাদেশ সেটা করবে না। সব মিলিয়ে লড়াইটা মজার হবে।’
একইভাবে ক্রিকইনফোর ম্যাচপূর্ব আলোচনায় ইংল্যান্ড চাপে থাকবে জানিয়ে ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফর বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড চাপে থাকবে কারণ প্রথম ম্যাচে তারা হেরেছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তারা, ফেবারিটও। কিন্তু তাদের ভালো খেলতে হবে। বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হচ্ছে এই মাঠে তারা প্রথম ম্যাচ খেলেছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়া ভুল হবে। তারা কনফিডেন্ট থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ভালো করছে। মেহেদী হাসান ছন্দে আছে। যদিও টপ অর্ডার ভালো করছে না। তবু ইংল্যান্ডের জন্য দুশ্চিন্তা তো আছেই।’
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের গভীরতা নিয়ে বলতে গিয়ে জাফর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার আমার মনে হয় না বদলাবে। হয়তো তিন ও চার নম্বর পজিশন ডানহাতি-বাঁহাতির ওপর ভিত্তি করে বদলাতে পারে। সাধারণত শান্ত তিনে খেলে। বাঁহাতি আউট হলে শান্তকে তিনে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মিরাজ চার নেমে আসতে পারে। আমার মনে হয়, এই কম্বিনেশন খুব ভালো।’
এরপরও অবশ্য ইংল্যান্ডকে কিছুটা রাখার কথা বলেছেন জাফর। সঙ্গে ইংলিশদের হারাতে বাংলাদেশকে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন সাবেক এই ব্যাটসম্যান।