নাজমূল আবেদীনের বিশ্লেষণ

চাপটা বাংলাদেশের ওপরই বেশি

এ ম্যাচে জেতা দল পরের রাউন্ডে যাওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। ফলে আজ রোমাঞ্চকর এক লড়াই আশা করাই যায়। বাংলাদেশের কথা যদি বলি, শ্রীলঙ্কার মতো পরিণত দলকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শীর্ষস্থানীয় দলকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই দলের আত্মবিশ্বাস ভালো জায়গায় থাকার কথা। অন্যদিকে নেপালকে সহজে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকারও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে নেদারল্যান্ডস।

সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের এ ভেন্যুতে এবারের বিশ্বকাপে এর আগে খেলা হয়নি। ফলে উইকেটের আচরণ কেমন হবে, সেটি বলা মুশকিল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটগুলো সম্পর্কে যত দূর জানি, সেগুলো একটু ধীরগতির হয়, স্পিনারদের সহায়তা থাকে। ফলে সব মিলিয়ে উইকেট বাংলাদেশের পক্ষেই থাকার কথা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচের পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে সন্তোষজনক হলেও টপ অর্ডার নিয়ে শঙ্কাটা থেকেই গেছে বাংলাদেশ দলের। অবশ্য নেদারল্যান্ডসের মতো মাঝারি মানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নিজেদের ফিরে পাওয়ার একটা দারুণ সুযোগ বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যাটিংয়ের ঘাটটিতা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য। এমনিতে বোলিংয়ের পাশাপাশি লেট অর্ডারের ব্যাটিং আর ফিল্ডিং ভালোই হচ্ছে। এ ম্যাচে টপ অর্ডারে উন্নতিটা করতে পারলে পরের রাউন্ডে যাওয়ার পথ তো সুগম হবেই, সেখানে গিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।

এখানে একটা ব্যাপার বলে রাখা ভালো, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টপ অর্ডারের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল, তাদের বোলিং আক্রমণ বেশ ভয়ংকর। কিন্তু ততটা যে নয়, সেটি মাহমুদউল্লাহ আর তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিংয়েই বোঝা গেছে। মানে প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণের শক্তির চেয়েও টপ অর্ডারে নিজেদের ব্যাটিং-দুর্বলতার কারণেই এগুলো ফুটে উঠছে। অনেক সময় দেখা যায়, বিপক্ষ দলের বোলিংয়ের শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি আমরা। সেটি মূলত আমাদের ব্যাটারদের দক্ষতার অভাব। আজ সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার দিন।

আজ কি বাংলাদেশের এমন উৎসব দেখা যাবে

কন্ডিশন বিবেচনায় মেহেদী হাসানকে দলে নেওয়ার কথা হয়তো ভাবা হতে পারে। তবে যেহেতু মাহমুদউল্লাহ ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করছে, সে ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়াতে তাই জাকেরকেই হয়তো আবার খেলানো হবে।

সাকিব আল হাসানের ফর্ম নিয়েও কথা হচ্ছে, সেটিই স্বাভাবিক। দীর্ঘ দিন শীর্ষ পর্যায়ে পারফর্ম করে আসা একজনের দলের জন্য অবদান রাখতে না পারার ব্যাপারটা চোখে পড়ার মতোই। তবে আমার বিশ্বাস, সে নিজেও এটি নিয়ে কাজ করছে এবং ফেরার পথ খুঁজছে। হয়তো শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভালো করেনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, খুব দ্রুতই আমরা সেই চেনা সাকিবকে ফিরে পাব।

ডাচরাও যে পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেটি নিয়ে কোনো সংশয় নেই। দলটা মানসিক দিক দিয়ে বেশ শক্তিশালী। হয়তো বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতা নেই, তবে গুছিয়ে খেলে। টপ অর্ডারে ম্যাক্স ও’ডাউড নেপালের বিপক্ষে ফিফটি পেয়েছে, বাঁহাতি স্পিনার টিম প্রিঙ্গলের বোলিংও ভালো লেগেছে। শেষ যে কবার তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তাতে খুব একটা সুখকর নয়। অবশ্যই তাদের হালকাভাবে বাংলাদেশ নেবেও না। তারাও জানে, হারাতে গেলে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তবে ওপরের সারির ও তুলনামূলক অভিজ্ঞ দল হিসেবে চাপটা বাংলাদেশের ওপরই বেশি থাকবে।

লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক