কাল শতরান করেও নিউজিল্যান্ডকে জেতাতে পারেননি ড্যারিল মিচেল
কাল শতরান করেও নিউজিল্যান্ডকে জেতাতে পারেননি ড্যারিল মিচেল

ধর্মশালায় কুয়াশার চাদর মিচেলের কাছে ‘চমৎকার ব্যাপার’

এমনিতেই ছবির মতো সুন্দর ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। সবুজের ছোঁয়া চারদিকে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই মাঠ যে কারওরই চোখ জুড়িয়ে দিতে বাধ্য। গতকাল সন্ধ্যায় ধর্মশালা স্টেডিয়ামে পাহাড় থেকে ভেসে আসা কুয়াশা সৃষ্টি করল আরও চমৎকার এক দৃশ্যপট। হঠাৎ কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। যদিও ক্রিকেটের কাছে সেই কুয়াশা বেরসিকই বটে! কুয়াশার কারণে খেলা থামিয়ে দিতে বাধ্য হলেন দুই আম্পায়ার। কুয়াশার ‘আড়ালে’ গিয়ে ১৪ মিনিট বন্ধ ছিল ম্যাচ।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়েছে। খেলা বন্ধ হয়েছে দর্শক হাঙ্গামার কবলে পড়ে (১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন), কিন্তু কুয়াশার কারণে খুব সম্ভবত এই প্রথমবারের মতো খেলা থেমে গেল কিছুক্ষণের জন্য। তবে নিউজিল্যান্ডের হয়ে কাল ভারতের বিপক্ষে শতরান করা ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেলের কাছে ধর্মশালার পাহাড় থেকে ভেসে আসা সেই কুয়াশা ছিল ‘চমৎকার ব্যাপার’।

পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশের ধর্মশালা মাঠ কাল সাক্ষী হলো ‘চমৎকার’ এক ব্যাপারের

মিচেলের শতরানের সুবাদেই নিউজিল্যান্ড কাল ভারতের বিপক্ষে ২৭৩ রান তুলেছিল। সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারত। কিন্তু মোহাম্মদ শামির বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কিউইদের লেট অর্ডার। নিউজিল্যান্ড শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩৩ রানে। শামি ৫৪ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। রাচিন রবীন্দ্রের ৭৫ আর মিচেলের ১৩০ রানের ইনিংস দুটি ছাড়া বলার মতো কোনো সংগ্রহ নেই কিউইদের ইনিংসে। শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহলি শতরান না পেলেও তাঁর ইনিংসেই (৯৫) ভারত পেয়েছে চমৎকার এক জয়।

দূরের পাহাড়ের দিক দিয়ে এভাবেই ভেসে আসছিল কুয়াশা

ভারতের ইনিংসের ১৫.৪ ওভারে কুয়াশা ভেসে আসতে থাকে পাহাড় থেকে। ভারতের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ১০০। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বকাপে কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কুয়াশার কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা নজিরবিহীন হলেও মিচেল অবশ্য এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন, ‘কুয়াশায় খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা বেশ অদ্ভুত ব্যাপার। তাই নয় কি? তবে আমি একবার একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ওয়েলিংটনের কারোরি পার্কে এমন কুয়াশার মধ্যে পড়েছিলাম। ক্রিকেটে অনেক চমৎকার ঘটনা ঘটে। ধর্মশালার কুয়াশা তেমনই একটা ব্যাপার। দারুণ এক অভিজ্ঞতা হলো।’

কুয়াশার কারণে ১৪ মিনিট বন্ধ ছিল ভারত–নিউজিল্যান্ড ম্যাচ

এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ভেন্যু খুব সম্ভবত ধর্মশালার এই মাঠ। প্রকৃতি এখানে তাঁর সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়েছে যেন। হিমাচল প্রদেশের এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ক্রিকেট ভেন্যুগুলোর একটি। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ স্টেডিয়াম প্রথম আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টে ব্যবহৃত হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৭০০ ফুট ওপরে অবস্থান এ স্টেডিয়ামের। যদিও বিশ্বকাপে এই মাঠও বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল শুরুর দিকে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে বাজে আউটফিল্ডের ব্যাপারটি প্রথম সামনে চলে আসে। সে ম্যাচে আফগানিস্তানের ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রট অভিযোগ করেছিলেন মুজিব-উর-রেহমান নাকি আউটফিল্ডের কারণে চোটে পড়তে পারতেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারও এই আউটফিল্ডের কড়া সমালোচনা করেছিলেন।

ধর্মশালার কুয়াশা মিচেলের কাছে চমৎকার লেগেছে

গতকাল এই মাঠে খেলতে নেমেই ৫ উইকেট তুলে নেওয়া ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি ধর্মশালার আউটফিল্ড সম্পর্কে বলেছেন, ‘ধর্মশালার উইকেটে দুই দলেরই সমান সুযোগ থাকে। এই মাঠ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। গ্রাউন্ডসম্যান এই মাঠ ভালোভাবে তৈরি করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা উচিত হবে না। ভারত যখন বিদেশে খেলতে যায়, তখন আমরাও অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাই। কখনো আমাদের ভেজা মাঠে খেলতে হয়, কখনো খেলি শুকনা খটখটে মাঠে।’