ট্রাভিস হেড এখন চাইলে অবসর নিতে পারেন।
তাঁর ২৯ বছর বয়স এবং দুর্দান্ত ফর্মের কারণে কথাটা শুনে তেড়ে আসতে পারেন। কিন্তু তার আগে একটি পরিসংখ্যান জেনে নিন। ২০২১ সালে দেশের মাটিতে অ্যাশেজ অভিষেকে ১৫২ রানের ইনিংসে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেও শতক তুলে নিয়েছিলেন এবং ম্যাচসেরার পুরস্কারও। এবার বিশ্বকাপ অভিষেকে তো ৬৭ বলে ১০৯ রানের সেই বিধ্বংসী ইনিংসেও ম্যাচসেরা।
এবার একটু দম নিয়ে আবার পড়ুন। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ২ উইকেট এবং ৪৮ বলে ৬২ রান—অবশ্যই ম্যাচসেরা। আর আজ বিশ্বকাপেরই ফাইনালে খেললেন স্মরণীয় ইনিংস। ভারতের ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত জিতেছে হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে। এমন জয়ের পর হেড ম্যাচসেরা না হয়ে পারেন? মোটেই না। ম্যাচসেরার পুরস্কার তাঁর হাতে ওঠার পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। আর বড় মঞ্চে এমন সব ইনিংস খেলেছেন যে এখন অবসর নিয়ে ফেললেও অসুবিধা নেই! অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর নামটা তো অমরত্ব পেয়েই গেল!
২০০৩ বিশ্বকাপে রিকি পন্টিং, ২০০৭ বিশ্বকাপে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর এবার হেড—বিশ্বকাপ ফাইনালে তিন অস্ট্রেলিয়ানের শতকের কীর্তি। আর বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে রান তাড়া করতে নেমে ১৯৯৬ সালে অরবিন্দ ডি সিলভার পর দ্বিতীয় শতকের কীর্তি, যেখানে দলও জিতেছে। মজার ব্যাপার দেখুন, এই হেডই হাত ভেঙে নেওয়ায় তাঁর বিশ্বকাপে খেলার নিশ্চয়তা ছিল না। লিগপর্বে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৫ ম্যাচে ছিলেন না। কিন্তু এখন সেই হেডই বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। কেমন লাগছে তাঁর?
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে সেই অনুভূতির কথাই জানালেন হেড, ‘অসাধারণ দিন। এর অংশ হতে পেরে গর্বিত। ঘরে সোফায় বসে বিশ্বকাপ দেখার চেয়ে এটা (খেলা) অনেক ভালো।’ চতুর্থ উইকেটে হেড ও মারনাস লাবুশেনের ২১৫ বলে ১৯২ রানের জুটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল জয়ের ভিত। ১১০ বলে অপরাজিকত ৫৮ রানের ইনিংসে দ্রুত উইকেট পতনের পর কাঁধে চেপে বসা চাপ শুষে নেওয়ার কাজটা দারুণভাবে করেছেন লাবুশেন। এ প্রসঙ্গে হেড বলেন, ‘আমি শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু মারনাস সব চাপ শুষে নিয়ে অসাধারণ খেলেছে।’
টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। বোলাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভারতকে সংগ্রহটা বড় করতে দেননি। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে হেড বলেছেন, ‘আগে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা দারুণ ছিল। ম্যাচ এগিয়ে চলার সঙ্গে উইকেটও (ব্যাট করার জন্য) সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। সেখানে ভূমিকা রাখতে পেরে ভালো লাগছে। এমন কিছুর জন্যই কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং টইটম্বুর গ্যালারির সামনে পারফর্ম করেও ভালো লাগছে।’ গিলক্রিস্ট ও পন্টিংয়ের প্রসঙ্গ তুলতেই হেড বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই তালিকায় আমি তৃতীয়। অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে।’
ফাইনালে হেডের এই অবদান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট যে কখনো ভুলবে না, তা নিশ্চিত।’