বিশ্বকাপে শুরুটা দারুণ হয়েছিল পাকিস্তানের। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮১ রানে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতেছিল পাকিস্তান। লঙ্কানদের দেওয়া ৩৪৫ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল বাবর আজমের দল।
কিন্তু শুরুর ছন্দটা আর ধরে রাখতে পারেনি পাকিস্তান। তৃতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে বাজেভাবে হেরে যায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও পেরে ওঠেনি। আর গত রাতে আফগানিস্তানের কাছে অপ্রত্যাশিত হারটা তো পাকিস্তানের অহমেই বড় আঘাত দিয়েছে। টানা তিন হারে দেয়ালেও পিঠ ঠেকে গেছে বাবর-রিজওয়ানদের।
বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগেই ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং পাকিস্তানের এই দলকে ‘সাদামাটা’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি বাবরের দলকে সেমিফাইনালে দেখছেন না।
দলটি আদৌ সেমিফাইনালে খেলার যোগ্য কি না, দর্শকদের কাছে সেই প্রশ্ন রেখেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার। আর সৌরভ গাঙ্গুলী তো ভারতের কাছে পাকিস্তান হারের পরেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপে বাবরদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। এখন সৌরভের কথাই মিলে যাচ্ছে!
তবে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। সবকিছু এখনো বাবর-আফ্রিদিদের হাতে আছে, তা–ও বলা যাবে না। সেমিফাইনালে যেতে হলে নিজেদের বাকি চার ম্যাচ জেতার সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর দিকেও।
৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে আছে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ারও পয়েন্ট ৪। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় অস্ট্রেলিয়া আছে চারে।
প্যাট কামিন্সের দল বাবরদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছে। আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে অস্ট্রেলিয়া। তর্কাতীতভাবে এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াই ফেবারিট। আরেকটি বড় অঘটন না ঘটলে ওয়ার্নার-স্মিথরা আজ রাতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বেন, সেটা বলাই যায়।
অস্ট্রেলিয়া আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলে দলটির পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬। তখন শুধু নেট রান রেটই নয়, পয়েন্টেও এগিয়ে থেকে শীর্ষ চার পাকাপোক্ত করে ফেলবে অস্ট্রেলিয়া। সেটা পাকিস্তানের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। তখন নিজেদের শেষ চার ম্যাচ শুধু জিতলেই চলবে না, নেট রান রেট বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে বাবরদের। কারণ, একাধিক দলের ১২ পয়েন্ট হলে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকা দল সেমিফাইনালে উঠবে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের নেট রান রেট -০.৪০০। ঋণাত্মককে নেট রান রেটকে ধনাত্মক বানাতে না পারলে শেষ চারে খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পাকিস্তানের পরের চার ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা (২৭ অক্টোবর), বাংলাদেশ (৩১ অক্টোবর), নিউজিল্যান্ড (৪ নভেম্বর) ও বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের (১১ নভেম্বর) বিপক্ষে। শেষ চার প্রতিপক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড পয়েন্ট তালিকায় পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা আছে দুর্দান্ত ছন্দে। প্রোটিয়ারা গত রাতে বাংলাদেশকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
পাকিস্তানের যে ফর্ম, তাতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখানো আপাতদৃষ্টে ‘অসম্ভব’ই মনে হচ্ছে। শেষ চার ম্যাচের একটি হারলেও ছোটখাটো সম্ভাবনা থাকছে। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর দিকে। একাধিক দলের পয়েন্ট ১০ হলেও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে হবে। তবেই এক যুগ পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে পারবে।
২০১৯ বিশ্বকাপেও নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সেমিফাইনালে ওঠা হয়নি পাকিস্তানের। সেবারও দলটি পাঁচে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছিল। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের পয়েন্ট ছিল সমান ১১ করে। তবে কিউইদের নেট রান রেট ছিল +০.১৭৫ আর পাকিস্তানের -০.৪৩০। ফলে চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেয় নিউজিল্যান্ড।