আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন তামিম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন তামিম

অবসরের ঘোষণায় যা বললেন তামিম

হুট করেই চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন তামিম ইকবাল। বড় কোনো ঘোষণা আসতে যাচ্ছে, সেটি বোঝাই যাচ্ছিল। তামিম সেটাই সত্যি প্রমাণ করে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। বিদায়বেলায় ঠিকমতো কথাই বলতে পারছিলেন না এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। বাষ্পরুদ্ধ হয়ে উঠছিল তাঁর কণ্ঠ। সংবাদ সম্মেলনে তামিম যা বলেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো—

আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি।

সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।

আমি সব সময়ই বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে। জানি না এই ১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনে তাঁকে কতটুকু গর্বিত করতে পেরেছি। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।

আমি আরও কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নাম আকবর খান, যাঁর হাত ধরেই আমি প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলেছি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, তাঁর কাছে আমি ঋণী।

বিদায় ঘোষণার সময় তামিম ছিলেন আবেগী

আমি যত ক্রিকেটারের সঙ্গে এই পর্যন্ত খেলেছি, সেই অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে, এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৯, প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, এ দল, জাতীয় দল—সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বাংলাদেশের সব অধিনায়কদের ধন্যবাদ জানাই।

আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই সেটি হলো, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। আমি আসলেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কিনা, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।

আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে, কিন্তু আপনারা দেখছেন, আমি কথাই বলতে পারছি না। আমি আশা করি আপনারা পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করবেন। কথা বলার জন্য এটা খুব আদর্শ পরিস্থিতি নয়। বিশেষ করে এত বছর পর খেলার পর এই খেলাটাকে বিদায় বলাটা খুব সহজ কিছু নয়। তাই, আমি আশা করি আপনারা আমাকে বোঝার চেষ্টা করবেন।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম

আমি খুবই দুঃখিত এত অল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের সবাইকে ডাকা হয়েছে এখানে। আপনারা এসেছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমি একটা অনুরোধ করতে চাই আপনাদের। আগামী দিনে যারা ক্রিকেট খেলতে আসবে। আপনারা তাদের নিয়ে ভালো কথা লিখবেন। খারাপ লিখবেন। কী লিখবেন, সেটা আপনাদের বিষয়, কিন্তু দয়া করে ক্রিকেটের মধ্যেই থাকবেন। দয়া করে ক্রিকেটের বাইরে যাবেন না। যদি তারা ভালো করে ভালো লিখবেন, খারাপ খেললে, সেভাবে লিখবেন, সমালোচনা করবেন। খুবই ভালো কথা। আমি মনে করি, আমরা সবাই জানি, অনেক সময় আমরা আমাদের সীমা অতিক্রম করে যাই।

এটা ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর। সামনে বিশ্বকাপ। সুতরাং আমি আশা করব আপনারা বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকবেন। সেটা নিজেদের দলের অংশ মনে করেই। দলকে সমর্থন জানিয়ে যাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমি আবারও একটা জিনিস বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম আমার প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। কতটুকু পেরেছি আমি জানি না। আমি দুঃখিত যদি ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে কারও নাম উচ্চারণ না করে থাকি। কিন্তু এটা বলতে চাই, একজন ক্রিকেটার হিসেবে, গড়ে উঠতে, মানুষ হতে যারাই আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের আমি হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই।

সংবাদ সম্মেলনের জন্য তামিমের হোটেলে ঢোকার মুহূর্ত

আমি আমার মাকে কীভাবে ভুলি! আমার ভাইয়েরা, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান—আমার এই যাত্রাপথে তাদের অনেক ভুগতে হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আনন্দিত হওয়ারও অনেক উপলক্ষ ছিল। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

আরেকটা অনুরোধ করব, আমার এই বিষয়টা এখানেই শেষ করে দেন। এটা নিয়ে বেশি গুঁতোগুঁতি করার দরকার নেই। কেন, কী, আরও কী হতে পারত, কেন হতে পারত—এসব।

আমি সব সময়ই বলি, ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়। আমরা সবাই দলের দিকে মনোযোগ দিই। সিরিজে এখনো দুটি ম্যাচ বাকি আছে। আমি সব সময়ই মনে করি এই সিরিজটা আমাদের জেতা উচিত। এরপর দুটি বড় টুর্নামেন্ট আছে।

আমার আর কিছু বলার নেই। আশা করি আপনাদের সঙ্গে অন্য কোথাও দেখা হবে।