যখন মাশরাফি ছিলেন অধিনায়ক, হাথুরুসিংহে কোচ
যখন মাশরাফি ছিলেন অধিনায়ক, হাথুরুসিংহে কোচ

বললেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন

‘হাথুরুসিংহের কাছে নিশ্চয়ই জাদুর কাঠি আছে’

‘আজকের সংবাদ সম্মেলন শুধুমাত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে নিয়ে।’—চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৬ উইকেটে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে এসেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মিডিয়া ম্যানেজারের এ কথাটা আলাদা করে উল্লেখ করলেন। সঙ্গে ছিলেন কুমিল্লার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি অবশ্য যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেই প্রস্তুত ছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই বললেন, ‘সমস্যা নেই।’

ম্যাচসংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের পরই বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ফেরার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচকে। উত্তরে সালাউদ্দিন বললেন, ‘আমরা যেভাবে হাথুরুসিংহকে চেয়েছি, তার কাছে নিশ্চয়ই অনেক জাদুর কাঠি আছে। কারণ, তা না হলে আসলে এভাবে আমরা...কেউ একজন হঠাৎ করে চলে গেছে, তাকে আবার আমরা জোর করে আনছি। নিশ্চয়ই জাদুর কাঠি আছে। আপনারাই ভালো বলতে পারবেন, আমি জানি না। তবে নিশ্চয়ই সবাই আশা করছে তার অধীনে অনেক ভালো ফল হবে।’

বিসিবি হাথুরুসিংহের সহকারী হিসেবে আরও একজনকে নিয়োগ দিতে চাচ্ছে। জানা গেছে, সহকারী কোচের সে পদের জন্য স্থানীয় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। প্রস্তাব পেলে সে দায়িত্ব নেবেন কি না, এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, বোর্ডের যাঁরা এমপ্লয়ি আছেন, তাঁদের থেকে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাঁরা অনেক দিন ধরে বোর্ডে কাজ করছেন। বিভিন্ন কোচের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁরা আসলে হাথুরুসিংহের সম্পর্কে জানেন। তাঁরা হয়তো তাকে বেস্ট সার্ভিসটা দিতে পারবেন।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন

সালাউদ্দিন আরও যোগ করেন, ‘আমি আসলে ডেভেলপমেন্টের ছেলেদের চিনি না, এমনকি এইচপির ছেলেদেরও চিনি না। আমার একটা জায়গায় কাজ করতে হলে সব নলেজ লাগবে এবং সেই কোচটা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। হাথুরুসিংহের মানসিকতা কেমন, সে কেমন কোচ, তা আমি জানি না। আমি যার সঙ্গে কাজ করব, তার ব্যাপারে আমার জানা দরকার। কারণ, আমার এখন যেই বয়স, নিজ থেকে অ্যাডজাস্ট করার মেন্টালিটি আমারও আছে কি না, আমি জানি না। কারণ, ৫-১০ বছর ধরে প্রধান কোচ হিসেবে আমি নিজেই কাজ করছি। এখন সহকারী কোচের রোলটা আমি পারব কি না, আমার সেই সার্বিক ক্ষমতা আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। কারণ, সহকারী কোচদের কাজ অনেক বেশি। তাই বোর্ডে যারা এমপ্লয়ি আছে, তাদের মধ্য থেকে দিলে তারা বেস্ট রেজাল্টটা পাবে।’

বিপিএলের শুরুতে বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সালাউদ্দিন। আজও স্থানীয়দের ক্রিকেট জ্ঞানের ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি, ‘লোকাল খেলোয়াড়দের কাছে আমি একটা সামান্য কমনসেন্স চাই। তাদের আসলে কমনসেন্স আছে কি না, এটা নিয়ে আমার সন্দেহ। এটা নিয়ে আমি হতাশ। আমাদের ছেলেরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করে কি না, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ। আমি আরেকটা প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, ‘আমাদের দেশে অনেকে হয়তো মাথা দিয়ে খেলে, অনেকে খেলে না। বেশির ভাগই মাথা ছাড়া খেলে। আল্লাহ যদি যেদিন মিলিয়ে দেয়, যদি প্রশ্ন কমন পড়ে, সেদিন ভালো খেলে, যেদিন পড়ে না সেদিন ভালো খেলে না। খুবই হতাশাজনক। আপনি যখন ১০–১২ বছর ক্রিকেট খেলছেন, তখন সামান্য কমনসেন্স থাকা উচিত কখন কী করতে হবে।’

বাংলাদেশের কোচিং সংস্কৃতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি। ক্রিকেটারদের স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে না দেওয়ার দায়টা তিনি এই কোচদের দিচ্ছেন, ‘আমরা আসলে ছোটবেলা থেকে তাদের ওভাবে গড়ে তুলছি। আমরা নিজেরাই সব সময় বেশির ভাগই কোচনির্ভর খেলোয়াড়, কোচ যেটা বলবে। প্রকৃতপক্ষে ভেতরে গিয়ে তো কোচ খেলবে না, তখনই ব্রেনটা লক হয়ে যায়। সিস্টেমেই গলদ। কম্পিউটারে আসলেও সেটআপটা ঠিকমতো হয়নি। ছোটবেলা থেকে যদি সেটআপ ভালোমতো হতো, তাদের যদি আমরা স্বাধীনভাবে গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে এ সমস্যাটা হতো না। আমরা যারা কোচিং করাই, তাদেরই সমস্যাটা বেশি, ছেলেদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। একটা পর্যায়ে এসে ব্রেনটা কাজও করে না। ছোটবেলা থেকে যদি আমাদের কোচিং ম্যাথড পরিবর্তন করি, তাহলে হয়তো কাজে আসবে।’