ডেভিড ওয়ার্নার সিরিজটি শুরুই করেছিলেন দলে জায়গা হারানোর শঙ্কা নিয়ে। লর্ডসে ‘জীবন’ পেয়ে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, প্রথম দুই টেস্টেই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। হেডিংলিতে লড়াইটা আবার হয়েছে রোমাঞ্চকর, এবার বদলে গেছে ফলটা। গতকাল সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হারের পর আরেকবার আলোচনা উঠেছে ডেভিড ওয়ার্নারের দলে জায়গা নিয়ে।
হেডিংলিতে ওয়ার্নার দুই ইনিংসেই আউট হয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে, এ নিয়ে ইংলিশ পেসারের বলে রেকর্ড ১৭ বার আউট হলেন অস্ট্রেলিয়া ওপেনার। ওয়ার্নারের জায়গা শঙ্কায় পড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হেডিংলিতে মিচেল মার্শের পারফরম্যান্স। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন এই অলরাউন্ডার, যিনি দলে এসেছিলেন ক্যামেরন গ্রিনের জায়গায়। গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের দেখাও পেয়েছেন মার্শ।
১৯ জুলাই ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে খেলা কথা গ্রিনের, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়া দলে যাঁর জায়গাটা মোটামুটি পাকা। হেডিংলি টেস্টের শেষ দিন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বদলি ফিল্ডার হিসেবেও নেমেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজেও এমন ‘সমস্যা’র মুখে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথের কনকাশন-বদলি হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা মারনাস লাবুশেনকে সেবার জায়গা করে দিয়েছিলেন উসমান খাজা।
এবার অবশ্য সিরিজে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক খাজা। ওয়ার্নার সেখানে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার নিচে। বেশ কিছুদিন ধরেই রান–খরায় ভুগছেন তিনি। ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ার্নারের গড় মাত্র ২৮.১৭। ওভালে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে টানা চারটি ম্যাচেই খেলেছেন ওয়ার্নার, খাজার ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন তিনি। ওয়ার্নার ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ কেউ ওপেন করেছেন ট্রাভিস হেড, গত মার্চে আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে। তৃতীয় টেস্টের দলে ওপেনিংয়ে বিকল্প হিসেবে আছেন মার্কাস হ্যারিস।
ওয়ার্নারের জায়গা নিয়ে অবশ্য অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সরাসরি কিছু বলেননি। তবে গ্রিন যে নিশ্চিতভাবেই নির্বাচনের জন্য বিবেচ্য হবেন, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তা জানিয়েছেন, ‘আপনি সব দরজাই খোলা রাখবেন। আমাদের ৯ বা ১০ দিন সময় আছে, আপাতত একটু বিশ্রাম নেব। তবে সবাই ফিরবে। গ্রিনি (গ্রিন) ম্যানচেস্টারে ফিট হয়ে ওঠার কথা। জশ (হ্যাজলউড) ফিরবে। ফলে আমাদের পুরো দলই থাকবে। এরপর উইকেট দেখে আমাদের সেরা একাদশটি ঠিক করব।’
মার্শকে বাদ দেওয়া কঠিন, সেটিও স্বীকার করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। গ্রিন ও মার্শ—দুই অলরাউন্ডারকে খেলালে স্বাভাবিকভাবেই একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বা বোলারকে বাদ দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ার। ফর্মের কারণে ওয়ার্নারের ওপরই খড়্গটি নেমে আসার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। চার বছর আগে হেডিংলিতে বেন স্টোকসের স্মরণীয় ইনিংসে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া, তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে পরের টেস্টে জিতে ঠিকই অ্যাশেজ ধরে রেখেছিল তারা। এবারও তেমন কিছুরই আশা তাদের। ওভালে শেষ টেস্টটি যাতে সিরিজ-নির্ধারণী হয়ে না ওঠে, সেটিই চান কামিন্সরা। হেডিংলিতে জয়ের পর মোমেন্টাম ইংল্যান্ডের পক্ষে থাকবে, সেটিও মনে করেন না অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।
স্বাভাবিকভাবেই ওল্ড ট্রাফোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ টেস্টে দল নির্বাচনটাও জুতসই হতে হবে তাদের। এমনিতে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠ সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এ সংস্করণ থেকে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন ওয়ার্নার। অবশ্য ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়া তাঁকে ধরে রাখবে, এমন মনে করেন সাবেক কোচ ড্যারেন লেম্যান। আরএসএন রেডিওকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, তাকে রাখা হবে। ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেট সাধারণত ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। আমার ধারণা, আরেকটি টেস্টের জন্য তার ওপর আস্থা রাখা হবে।’
ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেট ওয়ার্নারের ব্যাটিংয়ের জন্য মানানসই, এমন উল্লেখ করেছেন লেম্যান। সুযোগ পেলে ওয়ার্নার জ্বলে উঠবেন বলেও বিশ্বাস লেম্যানের, ‘সে পরের টেস্টে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে, চড়াও হবে। ডেভির (ওয়ার্নার) জন্য এ ম্যাচে ভালো করার সব উপকরণই আছে। কিছুটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই টেস্টের মতো, যেখানে ২০০ করেছিল।’
ওয়ার্নার সেই ডাবল সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে সেটি বাদ দিলে ২০২০ সালের জানুয়ারির পর থেকে ওয়ার্নারের একমাত্র সেঞ্চুরি সেটিই।