সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল
সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল

অধিনায়ক তামিম যেমন ছিলেন

সত্যিই বাংলাদেশের জার্সিতে আর দেখা যাবে না তামিমকে!

হুট করে তামিমের অবসরের ঘোষণা শোনার পর ভক্তদের মনে এমন অনুভূতি জাগবেই। মনে পড়বে পোর্ট অব স্পেনে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে জহির খানকে মারা সেই ছক্কা কিংবা লর্ডসে সেঞ্চুরির পর শূন্যে লাফিয়ে ওঠা সেই তামিমকে। মনে পড়ে, মন পোড়ে!

ব্যাটসম্যান তামিমের অন্য কোনো স্মৃতি মনে করেও কিছুটা আবেগপ্রবণ হতে পারেন। কিন্তু এই তামিমকে মিস করা কিংবা তাঁর অবসর নিয়ে আলোচনায় শুধুই কি ব্যাটসম্যান তামিমকে রাখবেন? তামিমের অন্য কোনো পরিচয় কি উঠে আসবে না?
হ্যাঁ, অধিনায়ক তামিমের কথাই বলা হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, তামিম তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কিন্তু কেন যেন এই অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে আলোচনাটা হয় না বললেই চলে। এটা কি ব্যাটসম্যান তামিম এতটাই ভালো যে অন্য সবকিছু তাঁর ছায়ায় পড়ে যায় সে কারণে, নাকি অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে আলোচনাটা বরাবরই কম? বোধ হয় দ্বিতীয়টাই সঠিক। তবু তামিম অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিলেন, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাক।

কে কোন বিষয়ে ভালো না খারাপ, সেটা যাচাই করার প্রাথমিক উপায় তাঁর অতীত রেকর্ড দেখা। অধিনায়ক তামিম কেমন ছিলেন, সেটা খুঁজতেও চোখটা পরিসংখ্যানেই দেওয়া যাক। সংখ্যা যা বলছে, তাতে ওয়ানডেতে তামিমকে চোখ বুজে দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বলে ঘোষণা দেওয়াই যায়। কীভাবে?

অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তামিম

ওয়ানডেতে তামিম অধিনায়কত্ব করেছেন ৩৭ ম্যাচে, যেখানে তাঁর জয় ২১টি, অর্থাৎ জয়ের হার ৫৬.৭৫। জয়ের শতকরা হারে যদি আপনি খুশি না হন, তাহলে আরও একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। বাংলাদেশ ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে যাঁকে আলাদা জায়গা দেওয়া হয়, সেই মাশরাফির চেয়ে তামিমের জয়ের শতাংশ মাত্র দশমিক শূন্য ৬ কম। ৮৮ ম্যাচে ৫০ জয়ে অধিনায়ক মাশরাফির সাফল্যের হার ৫৬.৮১। অঙ্ক বলছে, সাফল্যের বিচার তামিম মাশরাফির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

সমস্যা হচ্ছে, সংখ্যা নাকি সব সময় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারে না। সে কারণে শুধু সংখ্যায় নির্ভর না করে তামিম কেমন অধিনায়ক, তা বুঝতে তাঁর অধীন খেলা সিরিজগুলোয় একটু তাকাতে হবে।

তামিম পূর্ণ মেয়াদে বাংলাদেশের অধিনায়ক হন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর আগেও ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তবে সেটা আপত্কালীন। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটের কারণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়েছিল তামিমকে।

২০১০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল

ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারা তামিম পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ হারে তামিমের বাংলাদেশ। তবে সেই হারের পর শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে তামিম অধিনায়ক হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশ ভালো দল। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে—এদের হারানো কোনো অর্থেই নতুন কিছু নয়। তবে ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে তামিম যে সফল, এর সবচেয়ে বড় সাইনবোর্ড দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওয়ানডে সিরিজ। ২০ বছর অপেক্ষার পর গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।

২০০২ সালে প্রথম সফর দিয়ে শুরু। এরপর ২০০৮, ২০১৭ ও ২০২২ সাল। মাঝে তিন সংস্করণেই সিরিজ খেলে কোনো জয় না পাওয়া বাংলাদেশ তামিমের অধীন দাপটের সঙ্গে জিতেছিল ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য আরও বাড়বে একটা পরিসংখ্যানে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের ওয়ানডে সিরিজ জিততে সময় লেগেছে ২৬ বছর, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার মতো দল কখনো জিততেই পারেনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে এসেছিলেন তামিম

এসব সংখ্যাও কি ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে আলোচনার জন্য যথেষ্ট নয়! যদি যথেষ্ট হয়, তাহলে তামিমের অবসর নিয়ে আলোচনায় তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা হতেই পারে। খেলোয়াড়দের কতটা আগলে রেখেছিলেন, কতটা ভরসা দিয়েছেন, সেটা তাঁর সতীর্থরাই ভালো জানেন। এই যা, মুখ ফসকে ভুলটা হয়েই গেল! তামিম তো এখন সাবেক, তাই ‘তাঁর সাবেক সতীর্থরা’ বলাই সঠিক। কিন্তু এখনই এতটা সঠিক হতে কে চেয়েছিল? তামিম নিজেও কি চেয়েছিলেন?

পরিসংখ্যান এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। কোনো একদিন উত্তরটা দিয়ে দেবে সময়। তত দিন পর্যন্ত ব্যাটসম্যান তামিমের সঙ্গে আলোচনায় থাকুক অধিনায়ক তামিমও।