ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের চক্র পূরণের প্রস্তুতি
ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের চক্র পূরণের প্রস্তুতি

উৎপল শুভ্রর লেখা

সাকিব-তামিম বিতর্কেই আরও জ্বলে উঠবে বাংলাদেশ?

দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে এসে প্রথমবারের চেয়েও বেশি ‘এনজয়’ করছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে গেলে নিশ্চয়ই আরও বেশি করবেন। তা বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কান কোচ উপভোগ করার এমন কী কারণ খুঁজে পেলেন?

কারণটা ব্যক্তিগত। প্রথমবার এসেছিলেন অচেনা এক দেশে, অচেনা ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে। এবার সবই তাঁর চেনা। এই ঢাকা, এই মিরপুর স্টেডিয়াম, এই তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ...। সিরিজ শুরুর তিন–চার দিন আগে বোর্ড সভাপতির অবিশ্বাস্য সব মন্তব্যে এটাও নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, মাঝখানের ছয় বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি একটুও বদলায়নি। আগের মতোই ক্রিকেট–বিশ্বে যা অনন্য হয়ে আছে। দলে ভয়াবহ গ্রুপিং আবিষ্কার করে বোর্ড সভাপতি তা সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং দুই দিন পরই বলছেন, সব শোনা কথা। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথায় এটা সম্ভব? আহা, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।

মিরপুরে অনুশীলনে ইংল্যান্ড দল

কোনো সিরিজ শুরুর আগে একটা দলের অনেক চাওয়া থাকতে পারে। ইংল্যান্ডের চাওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই এটা ছিল না যে প্রতিপক্ষ শিবিরে খেলার চেয়ে খেলার বাইরের বিষয় নিয়েই বেশি কথা হোক। না চাইতেই পেয়ে যাওয়া এই ‌‘উপহার’ নিশ্চয়ই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন জস বাটলাররা।

তার মানে এই নয় যে এ কারণেই আজ শুরু তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খুব বড় একটা সুবিধা পেয়ে গেছে ইংল্যান্ড। একটার পর একটা অকারণ বিতর্ক গা সওয়া হয়ে যাওয়ার কারণেই কি না, বাংলাদেশ দল বরং এসব সময়ে কীভাবে যেন আরও ভালো খেলে ফেলে। আর ওয়ানডেতে ভালো খেলাটা তো মোটামুটি অভ্যাসই বানিয়ে ফেলেছে এই দল। দেশের মাটিতে খেলা হলে তো কথাই নেই। টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সেটিরই ঘোষণা। সাত বছর আগে সর্বশেষ পরাজয়টা এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই, একটু এদিক-ওদিক হলেই বাংলাদেশ যা জিততে পারত।

তা জিতলে চক্র পূরণ নিয়ে এবার এত কথা হতো না। কিসের চক্র? সব দলের বিপক্ষেই সিরিজ জয়ের। কাকতালীয়ই বলতে হবে, সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের চক্র পূরণেও শেষ বাধা হয়ে ছিল এই ইংল্যান্ডই। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে তা সম্পন্ন হওয়ার পর আরও তিনটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। যার দুটি বিশ্বকাপে বলে ইংল্যান্ড তা কখনোই ভুলবে না।

২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড তো আরও নয়। ইংলিশ ক্রিকেটে সেই ম্যাচের সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে এত কথা হয়েছে যে আবারও তা বলাটা চর্বিত চর্বণ মনে হবে। যদিও ইংল্যান্ড এখন সাদা বলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এই তথ্যটাই তা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ঠিক আছে, তারপরও এই ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ কি একটু হলেও ফেবারিট? খেলাটা বাংলাদেশে হচ্ছে, এটাই এমন ভাবার একমাত্র কারণ নয়। কারণ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও। দুই দলের সর্বশেষ ১২টি ওয়ানডের হিসাব নিলে দেখা যাবে, একটা দল মাত্র ৪টিতে জিতেছে, আরেকটা দল হেরেছে মাত্র ৪টি। বিস্ময়করভাবে প্রথম দলটির নাম ইংল্যান্ড। যারা বাংলাদেশে এসেছে টানা চারটি সিরিজ হেরে। নানা কারণে প্রায় কখনোই পুরো শক্তির দল না পাওয়াও অবশ্য এর একটা কারণ। এবারের দলেও ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের একাধিক খেলোয়াড় নেই। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজজয়ী বাংলাদেশ দলে যেখানে যোগ হয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

অধিনায়ক ও কোচ: হাথুরুসিংহে ও তামিম

হ্যারি ব্রুকস ও বেন ডাকেটের মতো ব্যাটসম্যানের এই সিরিজে না থাকার কারণটা অবশ্য ইংলিশ ক্রিকেটের গভীরতাও বুঝিয়ে দেয়। ইংল্যান্ডের টেস্ট দল নিউজিল্যান্ডে থাকতেই বাংলাদেশে চলে এসেছে ওয়ানডে দল। সূচিতে একটু এদিক-ওদিক হলেই দেখা যেত, একই দিনে ইংল্যান্ড পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে। যেটির উদাহরণ পেতে ফিরে যেতে হয় ৯৩ বছর আগে, সেই ১৯৩০ সালে। যখন একই সময়ে ইংল্যান্ড নামের দুটি দল নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে যুগপৎ টেস্ট খেলেছে। সেটি ছিল ক্রিকেটের অভিভাবক এমসিসির বিশ্বব্যাপী খেলাটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায় থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ–অধ্যুষিত আধুনিক ক্রিকেটের মহাব্যস্ত সূচিকে এবারের কারণ বলতে পারেন। তবে একই সঙ্গে তা ইংলিশ ক্রিকেটে প্রতিভার প্রাচুর্যের কথাও কি জানিয়ে দিচ্ছে না! চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো আর এমনিতেই বলছেন না, ইংল্যান্ড এখন বাকি ক্রিকেট–বিশ্বের জন্য ঈর্ষার কারণ।

এই ইংল্যান্ডও তাই বাংলাদেশের জন্য যথেষ্টই বড় চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ক জস বাটলার এই সিরিজকে দেখছেন স্পিনিং উইকেটে ভালো করার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। বাংলাদেশের জন্য স্পিন যতটা চ্যালেঞ্জ, তার চেয়ে বেশি ইংল্যান্ডের গতিময় পেস আক্রমণ। মার্ক উড, জফরা আর্চার, সাকিব মেহমুদদের গতির ঝড় ভালো একটা পরীক্ষাই নেবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। উইকেটে অবশ্যই আসে–যায়, তবে ঘণ্টায় ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারলে হয়তো অতটা নয়।

তাহলে কি এই সিরিজের ট্যাগলাইন—ইংল্যান্ডের পেস বনাম বাংলাদেশের স্পিন? হয়তো, হয়তো না। এমন তো হতেই পারে, তাসকিন-মোস্তাফিজরাই জ্বলে উঠলেন আর বাংলাদেশ হাবুডুবু আদিল রশিদ-রেহানের ঘূর্ণিতে। ক্রিকেট তো বিস্ময় উপহার দিতে বড় ভালোবাসে!