রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে জিততে হতো অস্ট্রেলিয়ার।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে ২০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে জেতার ঘটনাই মাত্র তিনটি। অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ দৌড় ছিল ২০০৯ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৭ রান তাড়ার।
এবার তাই নিউজিল্যান্ডের ২০০ রান তাড়া করতে হলে রেকর্ডই গড়তে হতো অ্যারন ফিঞ্চদের। কিন্তু রানতাড়ার রেকর্ড গড়বে কি, উল্টো ঘরের মাঠে ১১১ রানের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবল অস্ট্রেলিয়া।
গতবারের শিরোপাজয়ীরা এবার প্রথম ম্যাচেই ধরাশায়ী ৮৯ রানের বড় হারে।
এ জয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১১ বছর পর প্রথম জয় পেল নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১১ সালে হোবার্ট টেস্টে জয়ের পর প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে টানা ১৫ ম্যাচ জয়হীন ছিল কিউইরা।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের ব্যবধানেও রেকর্ড গড়েছে নিউজিল্যান্ড। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৯০ রানের জয়ই সবচেয়ে বড়, এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় এখন কেইন উইলিয়ামসনদের।
গত বছর দুবাইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ সিডনিতে আরেকটি বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর দিন ২০০ রানতাড়ায় কখনোই কক্ষপথে ছিল না চ্যাম্পিয়নরা।
দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির বলে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্ভাগ্যজনক বোল্ড দিয়ে যার শুরু। এরপর স্পিন হোক কি পেস– মেরে খেলতে গিয়ে সব ধরনের বোলারের কাছেই উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিপর্যয় সামাল দিতে গেলে স্লথ হয়েছে রান–তোলার গতিও।
তবে ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬২ রানের পরও কিছুটা ভরসা হয়ে টিকেছিলেন টিম ডেভিড আর ম্যাথু ওয়েড।
গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়া ডেভিড এরইমধ্যে একাদশের নিয়মিত মুখ, তাঁকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ স্টিভেন স্মিথ। আর উইকেটকিপার ব্যাসম্যান ওয়েড তো রীতিমতো ফিনিশারই।
কিন্তু এ যাত্রায় আর ত্রাতা হতে পারেননি কেউই। মিচেল স্যান্টনারকে ছয় মারার পরের বলেই জিমি নিশামকে ক্যাচ দেন ডেভিড। আর লকি ফার্গুসনের বলে ওয়েড ক্যাচ দেন ডেভন কনওয়েকে। ১২.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৮২। সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা।
এরপরও খেলা যে ১৭.১ বল পর্যন্ত ওভার ম্যাচ চলেছে, তাতে শুধু ব্যবধানই কমেছে। প্যাট কামিন্সকে কনওয়ের ক্যাচ বানিয়ে কিউইদের জয়ের মুহূর্তটি এনে দেন সাউদি। ২.১ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট দিয়ে ৩ উইকেট এই পেসারের। ৩১ রানে ৩ উইকেট বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনারের।
আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ‘হাইলাইটস’ ছিল প্রথম আর শেষের চার ওভার। ওই ৮ ওভারে ১০৪ রান তোলেন কনওয়ে–ফিন অ্যালেন–জিমি নিশামরা। শুরুটা করেন ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান অ্যালেন।
স্টার্কের করা প্রথম ওভার থেকেই দুই চার এক ছয়ে তুলে নেন ১৪ রান। পরের ওভারে জস হ্যাজলউডের ওপর চড়াও হন ডেভন কনওয়েও। প্রথম চার বলেই হাঁকান দুই চার। শেষ বলে সুযোগ পেয়ে অ্যালেন মারেন আরেকটি। তিন চারসহ এই ওভার থেকে আসে ১৫ রান।
তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে একই পরিণতি প্যাট কামিন্সেরও। দুই চার এক ছয়সহ তাঁর ওভার থেকে ১৭ রান তোলেন অ্যালেন। মাত্র ৩ ওভারেই নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪৬ রান।
তবে স্টয়নিস এসে রানের গতিতে কিছুটা বাদ সাধেন। তা–ও অবশ্য কনওয়ে স্ট্রাইকে ছিলেন বলে। পঞ্চম বলে অ্যালেন স্ট্রাইকে যেতেই আবারও ছক্কা। ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যানের তোপে তখন দিশাহারা অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। কার হাতে বল তুলে দিয়ে অ্যালেনের ঝড় থামাবেন?
চার পেসারের সবাইকে ব্যবহার করে ফেলায় কেউ একজনকে আবার ডাকা ছাড়া উপায় ছিল না ফিঞ্চের। প্রান্ত বদল করে পঞ্চম ওভারের বল হাতে নেন হ্যাজলউড। গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেট এই পেসারের। দরকারের সময় দলের ত্রাতা হলেন এবারও।
প্রথম বলটিই দিলেন ইয়র্কার, এগিয়ে এসে মারতে চেয়ে মিস করে বোল্ড অ্যালেন। অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচের প্রথম উইকেট, কিন্তু ফিঞ্চ–হ্যাজলউডদের উদ্যাপনে মনে হচ্ছিল জয় নিশ্চিতের উইকেট।
অ্যালেন–ঝড়ে নীরব হয়ে পড়া এসসিজির গ্যালারিও প্রাণ ফিরে পায় এই উইকেটে। মাত্র ১৬ বলের ইনিংসে ৫ চার ৩ ছয়ে ৪২ রান করে যান অ্যালেন।
অ্যালেনের আউটে চুপসে যায় নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতিও। প্রথম ২৪ বলে ৫৬ রান তোলা নিউজিল্যান্ড উইকেট হারানোর পরের ৩৫ বলে তোলে মাত্র ৪১ রান। এর মধ্যে ১৯ বলে ২৮ রানই কনওয়ের, অধিনায়ক উইলিয়ামসনের খেলা ১৬ বল থেকে আসে মাত্র ১২।
কিউই অধিনায়ক রান তুলতে পারেননি থিতু হওয়ার পরও। শেষ পর্যন্ত ২৩ বলে ২৩ রানের ইনিংস থামে অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবি হয়ে। নিউজিল্যান্ড রান পায়নি চারে নামা গ্লেন ফিলিপস থেকেও। হ্যাজলউডের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ১০ বলে ১২ রান করে যান তিনি।
তবে উইলিয়ামসন–ফিলিপস ডানা মেলতে না পারলেও নিউজিল্যান্ড রান পেয়েছে প্রতি ওভারেই। ৩৬ বলে ফিফটি ছোঁয়া কনওয়ের ব্যাটে চড়ে ১৬ ওভারে দেড় শ পেরিয়ে যায় কিউইরা। শেষ চার ওভারে কনওয়েকে দারুণ সঙ্গ দেন জিমি নিশাম। এই ২৪ বলে ৪৮ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ১৩ বল খেলে দুই ছয়সহ ২৬ রান তোলেন নিশাম, যার মধ্যে ইনিংসের শেষ বলের ছয়ে ২০০ স্পর্শ করে নিউজিল্যান্ড।
কনওয়ে মাঠ ছাড়েন সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। ৭ চার ২ ছয়সহ ৫৮ বলে অপরাজিত ৯২ রানে। ২৯ টি–টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তৃতীয়বার নব্বইয়ের ঘরে আটকা। তিনটিই অপরাজিত।
তবে দিন শেষে আর এই সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ থাকার কথা না কনওয়ের। তাঁর ইনিংসে ভর করেই যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ বছর পর প্রথম জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ড।