বিশ্বকাপে আইসিসির ওয়েবসাইটে সাবেকদের অনেকে নানা বিষয় নিয়ে কলাম লিখছেন। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসের কলাম প্রকাশ করেছে আইসিসির ওয়েবসাইট। বিরাট কোহলির ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন ভিভ। কলামের সংক্ষিপ্তসার নিচে তুলে ধরা হলো—
আইসিসি ২০২৩ বিশ্বকাপ আমি ভীষণ উপভোগ করছি এবং কিছু পারফরম্যান্স আমার খুব ভালো লেগেছে। সাবেক ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপটা দারুণ লাগছে। ভক্তরা এর চেয়ে ভালো কিছু চাইতে পারতেন কি না, আমি ঠিক নিশ্চিত নই। কিছু পিচ রান করার জন্য খুব ভালো এবং আমরা উঁচু মানের কিছু পারফরম্যান্সও দেখেছি। এইডেন মার্করাম, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও কুইন্টন ডি কক রেকর্ডভাঙা শতক পেয়েছে আর তরুণ রাচিন রবীন্দ্রকে বিশেষ প্রতিভা বলেই মনে হচ্ছে।
আসলে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব নেই। তবে তাদের মধ্যে থেকে সেরা বাছতে বিরাট কোহলিকেও এড়ানোর পথ নেই। আমি অনেক আগে থেকেই বিরাট কোহলির বড় ভক্ত, সর্বকালের অন্যতম সেরাদের কাতারে কেন তাকে শচীনের পাশাপাশি রাখতে হবে, সেটা সে প্রমাণ করে চলছে। বিরাট বিশ্বকাপের আগে বাজে সময়ের মধ্য দিয়েও গিয়েছে এবং তখন কেউ কেউ সাহস দেখিয়ে তার মুণ্ডুপাতও করেছেন। সে সময় তার পাশে যারা ছিলেন এবং ড্রেসিংরুমকেও ধন্যবাদ দিতে হয়। তার ফর্ম নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে কিন্তু এখন সে নিজের সেরা খেলায় ফিরে এসেছে। বাজে সময় কাটিয়ে কারও সেরা ফর্মে ফিরতে দেখাটা দুর্দান্ত ব্যাপার। সবাই বলে, ফর্ম ক্ষণস্থায়ী—সে প্রমাণ করেছে মানটা চিরস্থায়ী। তার জন্য আমার খুব ভালো লাগছে। তাকে খুব মনোযোগী লাগছে এবং ক্রিকেটের জন্য সে সম্পদ।
মানসিক শক্তির জায়গায় বিরাট বাকিদের চেয়ে আলাদা। তার সঙ্গে কথা বলার সময়ও এটা বুঝেছি, সামনে এগোতে নিজেই নিজেকে তাড়না দেয়। খুব কম খেলোয়াড় কিংবা মানুষ এমন হয়। অনেকেই আমাদের দুজনের মধ্যে তুলনা করেন। মাঠে আমরা দুজনই আক্রমণাত্মক। লং অন কিংবা লং অফে থাকলেও ক্রিকেটের প্রতি বিরাটের আগ্রহটা খুব ভালো লাগে। দলের বোলার ব্যাটসম্যানের প্যাডে বল লাগালেও আউটের আবেদন করে সে। মাঠে এমন খেলোয়াড় দেখতে ভালো লাগে।
শুবমান গিল আরেকজন যে ব্যাটিংয়ে স্টাইলিশ এবং এমন এক গুচ্ছ খেলোয়াড়দের একজন, যাদের হাতে প্রায় সব শটই আছে। আমার প্রত্যাশা হলো, কেউ ভুলে না যায় যে তাদের মতো একজন খেলোয়াড় ছিল যে হেলমেট ছাড়াই মাঠে গিয়ে ওভাবে খেলত। এখন কিছু শট খেলা হয়, যেগুলো আমিও পারতাম, হয়তো রিভার্স সুইপ বাদে। এখনকার খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার স্কোরিং রেট মিলে যায়, এটাও ভাবতে ভালোই লাগে। যদিও খেলাটা অনেক বদলে গেছে—তবে ভক্ত হিসেবে বলতে পারি, খেলাটা এখন যে অবস্থানে আছে, সে জন্য আমি আনন্দিত।
এবার বিশ্বকাপে ভারত এভাবে খেলেই শিরোপা জিততে চায়। চিন্তাভাবনাটা এমনই হওয়া উচিত এবং আমি ড্রেসিংরুমে থাকলে আলাদা কিছু ভাবতাম না। একদম আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলো। এই মানসিকতা এখন পর্যন্ত কাজে লেগেছে এবং এখান থেকে সরে আসাটা ভালো কিছু হবে না। আমার মনে হয়, তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হতে পারে।
আফগানিস্তানকে এই বিশ্বকাপে অন্যতম উজ্জ্বল দল মনে হচ্ছে। তারা ২৫০–এর বেশি স্কোর করলে, যে বোলিং আক্রমণ তাতে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলা খুব কঠিন। যদিও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সম্প্রতি তাদের হারিয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলটা যেমন খেলছে, তাতে আফগানিস্তানে যারা ক্রিকেট খেলছে, তারা অনুপ্রাণিত হবে।
ঠিক উল্টোভাবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ব্যাপারটা লজ্জার যে তারা এই বিশ্বকাপে নেই। আমি প্রত্যাশা করি, এই অনুপস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট জেগে উঠবে। কারণ, যে টুর্নামেন্টটি চলছে, সেটি আমাদের কাছে অনেক কিছু। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে জেতা বিশ্বকাপই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়।