বিপিএলের সমালোচনা করে সাকিব আল হাসান যা বলেছেন, সেটিকে ‘স্পট অন’ মনে করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে বিপিএলের ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলেও মনে করেন তিনি। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কীভাবে লাভ করতে পারে—এ ব্যাপারগুলো ভাবতে হবে বলেও মনে করেন বিপিএলের নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক।
আগামীকাল বিপিএলের এ মৌসুমের উদ্বোধনী ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে সিলেট। এ ম্যাচের আগে আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন মাশরাফি। সেখানেই উঠে এসেছে গতকাল বিপিএলের সমালোচনা করে করা সাকিবের মন্তব্যের প্রসঙ্গ। সেখানে মূলত বিসিবির দিকে সরাসরিই আঙুল তুলেছেন সাকিব।
আজ বিপিএলের টাইটেল স্পনসর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকেও। পরে মাশরাফিকে প্রশ্ন করা হলে শুরুতে তিনি বলেন, সাকিব কী বলেছেন, সেটি পুরোপুরি জানা নেই তাঁর। পরে সাকিবের কথার সারাংশ বলার পর এ নিয়ে মুখ খোলেন মাশরাফি।
বিপিএলকে সাকিব বলেছেন যা-তা। আজ মাশরাফি বললেন, এটি হযবরল, ‘পরিবেশ দেখলে আপনার তা–ই মনে হবে। কারণ, এক মাঠে ছয়-সাত দল অনুশীলন করছে। রংপুর যেমন তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদের মাঠে অনুশীলন করছে, এ বিষয়গুলো কিন্তু ম্যাটার করে। আমাদের ওই নির্দিষ্ট দলের সুযোগ-সুবিধা, ওই যে বললাম না, আয়োজনটা সঠিক পন্থায় করতে হবে। তখন হয়তোবা এটা হবে। খালি চোখে যে কেউ এসে দেখে যে একই মাঠে সবকিছু হচ্ছে, অনুশীলন হচ্ছে। এটা হযবরল ব্যাপার, এটা বলতে পারে।’
তবে মাশরাফি বলেছেন, মাঠের খেলায় বিপিএলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ থাকে ঠিকই। তবে বিপিএলের হাইপ তোলা থেকে শুরু করে আয়োজনে অব্যবস্থাপনা, বিসিবি বা আয়োজকদের সদিচ্ছার অভাবের ব্যাপারে সাকিবের সঙ্গে একমত মাশরাফি।
এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলেও মনে করেন বিপিএলের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক, ‘সাকিবের সঙ্গে একমত, ইচ্ছার জায়গা, সীমাবদ্ধতার জায়গাও মাথায় এনেছি। লাভ না হলে তো আপনি থাকতে চাইবেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকগুলো লোকসান করে। ওই জায়গায় ক্রিকেট বোর্ডকে দেখতে হবে। সেটা “কমফোর্ট জোনে” আনলে টুর্নামেন্টের চেহারা বদলে যাবে। সিলেটের দলেরই কত নাম। তিন বছর পর আল্লাহ না করুক যদি স্ট্রাইকার্স না থাকে, যারা কিনেছে, তারা যাতে টিকতে পারে, সেই কমফোর্ট জোনটা তৈরি করা। এটা ক্রিকেট বোর্ডকেই করতে হবে। কিন্তু দিন শেষে খেলার মাঠে খেলা কিন্তু খেলার মতোই হয়। একটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য আছে, শুরুর দিকে একটা হাইপ তোলার ব্যাপার আছে—এ জিনিসটা হয়তো আমরা শুরু থেকেই পারিনি, এটা সত্য।’
লভ্যাংশ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বনিবনা না হওয়াতে এর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছিল বিসিবি। মাঝে মৌসুম ধরে ধরে কখনো ফ্র্যাঞ্চাইজি, কখনো স্পনসর ঠিক করে বিপিএল চালানোর পর এবার তিন বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে।
মাশরাফি আপাতত এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চান, ‘এত কিছু সাকিব বলেছে, আমিও কিছু না কিছু বললাম। এই যে পরবর্তী বছরে যদি ছয় মাস আগে পরিকল্পনা করে, যেহেতু তিন বছরের জন্য দলগুলো দিয়েছে, এটা ভালো হয়েছে, দারুণ হয়েছে। অন্তত তিন বছরের জন্য নিয়েছে। দলগুলো এখন ক্লিয়ার, দলগুলোকে সমর্থন করতে হবে। কোন উপায়ে সমর্থন করবে, দলগুলো কী চায়, তারা কী চায়—বিপিএল গভর্নিং বডির সঙ্গে বসলে কিন্তু সমাধান হয়। টুর্নামেন্টের তিন মাসে একটা নিলাম, তারপর টুর্নামেন্টের আগে মাঠে অনুশীলন করে এভাবে পরিবর্তন হবে না। বিস্তর আলোচনার বিষয় আছে। রমিজ রাজা (পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে) এক বছরে এসে লাভ কত করেছে (পিএসএলে)। এমন কিছু তো করেনি। অর্গানাইজড ছিল। সাকিব যেটা বলেছে, স্পট অন মনে হয়। একটু যদি পরিবর্তন আনি, বাংলাদেশে কিছুটা বাধা আছে। তাদের একটু সহায়তা দিলে এটা হবে।’
সব মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প দেখছেন না মাশরাফি, ‘আমি তো এটা বললাম, কাজ না করলে তো বোঝা যাবে না। এটা তো দীর্ঘ সময়ের একটা কাজের ব্যাপার। বাজারদর, আপনার দলের কাছে স্পনসরশিপ কতটুকু আসতে চাচ্ছে—এগুলো তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। একটা দল যখন জানে যে আমি এই দলটার মালিক, আমি পরবর্তী ১০ বছর–৭ বছর এটার মালিক। তখন সে দুই বছর লোকসান করতে পারে। ঠিক আছে, আমি আমার দলকে নিয়ে কাজ করব, মার্কেটে প্রমোট করব, ডিসিপ্লিনড ওয়েতে, তখন কিন্তু তার যে দুই বছরের মুনাফা, সেটা চলে আসবে। এটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য ব্যবসা। ব্যবসায় যদি লাভ না–ও করেন, লোকসান হলে তো সমস্যা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এ জন্য দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারছে না। তবে যদি এটি ঠিকঠাক করে আয়োজন করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে, আমার কাছেও মনে হয়, অন্তত ৫-৭-১০ বছরের চুক্তি করা। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে করা। তাহলে কিন্তু অনেক পরিবর্তন সম্ভব।’