বিপিএলের সঙ্গে বড় নাম এ পর্যন্ত কম যোগ হয়নি। টি–টোয়েন্টির এক সময়কার ফেরিওয়ালা ক্রিস গেইল নিয়মিত মুখ ছিলেন বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। শহীদ আফ্রিদি তো এই টুর্নামেন্টের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত মুখ হয়ে থাকতেন। এর বাইরেও বিপিএল রাঙিয়ে গেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট মাতানো আন্তর্জাতিক অনেক তারকা ক্রিকেটারই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২০১২ সাল থেকে শুরু বিপিএলের সবচেয়ে বড় মুখ বলতে হবে দেশের দুই ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানকে। একটা সময় তো মাশরাফির দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা নিয়মই হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম পাঁচটি বিপিএলের চারটিতে ট্রফি হাতে নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। সাকিব চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন দুবার। টুর্নামেন্ট–সেরা হয়েছেন চারবার। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স আর বিতর্ক–আলোচনা মিলিয়ে সাকিব–মাশরাফিকে বলা যায় বিপিএলের অন্যতম চৌম্বক শক্তি।
ক্রিকেটার পরিচয় ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে মাশরাফি–সাকিবের রাজনৈতিক পরিচয়। দুজনই ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
বিপিএল এবার এই দুই তারকা ক্রিকেটারকে তাই ভীষণভাবেই মিস করবে। টুর্নামেন্টের জন্মলগ্ন থেকে যাঁরা এর ছায়াসঙ্গী, ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু একাদশ বিপিএলটা হতে যাচ্ছে সম্ভবত তাঁদের ছাড়াই।
‘সম্ভবত’ শব্দটা জুড়ে দেওয়া মূলত ঝুঁকিমুক্ত থাকতে। যদি অলৌকিকভাবে এই বিপিএলটাও খেলে ফেলেন সাকিব–মাশরাফি! তবে বাস্তবতা হলো, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুজনের কারোই খেলার সম্ভাবনা নেই আসন্ন বিপিএলে।
ক্রিকেটার পরিচয় ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়। মাশরাফি, সাকিব ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দুজনই ব্রাত্য হয়ে পড়েন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। হত্যা ও নাশকতার মামলায় জড়িয়েছে তাঁদের নাম।
মাশরাফি তবু দেশে আছেন বলে জানা যায়, সাকিব তো আসতেই পারছেন না। নিরাপত্তার কারণে ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা পূরণ হয়নি, খেলেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। বিসিবির পক্ষ থেকে তাঁদের কারোই বিপিএলে খেলতে বাধা নেই। এ–ও বলা হচ্ছে, বিপিএলে খেলা বা না খেলাটা সাকিব–মাশরাফির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপিএলের পরিবেশ তাঁদের খেলার অনুকূলে থাকার কোনো কারণ নেই।
সিলেট স্ট্রাইকার্স দলে থাকা মাশরাফি তো দীর্ঘদিন ধরে খেলা–অনুশীলন–ফিটনেস ট্রেনিং, কিছুর মধ্যেই নেই। এবার চিটাগং কিংসে থাকা সাকিব বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেললেও আছেন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে জটিলতায়। ইংলিশ কাউন্টিতে অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর ২ ডিসেম্বর বার্মিংহামের লাফবরো ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া পরীক্ষায় তাঁর অ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ে। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়েছেন সাকিব। রিপোর্ট পাওয়ার কথা দু–এক দিনের মধ্যে।
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা যদি থেকেও যায়, সাকিব চাইলে বিপিএলে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেও খেলতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি নিজেও সে চিন্তা করেন বলে মনে হয় না। চিটাগং কিংসের মালিক সামির কাদের চৌধুরী অবশ্য এখনই আশা ছাড়ছেন না। আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী সাকিবকে পাব। তাঁর খেলার সম্ভাবনা এখনো ফিফটি–ফিফটি বলব আমি।’ এ নিয়ে কথা বলতে সাকিব–মাশরাফির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাঁদের।
সাকিব–মাশরাফিকে ছাড়াই অবশ্য একাদশ বিপিএলের জন্য প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুশীলনে মাঠে নামছে দলগুলো। আসতে শুরু করছেন বিদেশি ক্রিকেটাররাও। ফরচুন বরিশাল যেমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, আগামীকাল রাতে ঢাকা নামছেন তাঁদের দলের আফগান ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী।