২২ নভেম্বর ২০১৯/: ইডেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরির পর
২২ নভেম্বর ২০১৯/: ইডেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরির পর

কোহলি কি বাংলাদেশের বিপক্ষে আবার সেঞ্চুরি করার ‘ঝুঁকি’ নেবেন

এমন আলোচিত সেঞ্চুরি বিরাট কোহলি আর করেননি। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, দলও জিতেছে ইনিংসে ব্যবধানে, তাহলে ১৩৬ রানের সেই ইনিংসটি নিয়ে এত আলোচনা কিসের? সেই ইনিংসে এমন কী–ইবা ছিল?

আসলে প্রতিপক্ষ, ম্যাচের ফল এসব কারণে নয়, ইডেন গার্ডেনে কোহলির সেই সেঞ্চুরি আলোচনায় ছিল শুধু কোহলির জন্যই। সেটাও এক-দুই দিনের জন্য নয়, বরং তা নিয়ে কথা হয়েছে হাজার রাত।

২০১৯ সালে ১৩৬ রানের সেই ইনিংস খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০২০ দিন সেঞ্চুরি পাননি কোহলি। ইনিংসের হিসাবে সংখ্যাটা ছিল ৭৯। সম্ভাবনা জেগেছে অনেকবার, তবে আসি আসি করেও সেঞ্চুরি আর আসেনি। কবে সেঞ্চুরি করবেন কোহলি? ঘুরেফিরে করা হতো এই প্রশ্নটি। এর উত্তরে কোহলির বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে আসত।

সেই টেস্টে কোহলিকে আউট করার পর ইবাদত হোসেন ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশনে স্যালুট দিয়ে তাঁকে বিদায় দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করে অনেকে কোহলির সেঞ্চুরি না পাওয়ায় ইবাদতের স্যালুটের দায়ও দেখতেন। এটা অবশ্য ‘ভদ্রসমাজের’ আলাপ ছিল না! ইডেন গার্ডেনে সেই সেঞ্চুরির অভিশাপ কাটে ২০২২ সালের এশিয়া কাপে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

১২
কোহলি যে সময়টাতে টেস্টে কোনো সেঞ্চুরি করেননি, সেই সময়টাতে রুটের সেঞ্চুরি সংখ্যা

১০০০ দিনের বেশি সেঞ্চুরি না পাওয়া কোহলির ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলেছে। কোহলির এই বাজে সময়টাকে কাজে লাগিয়েছেন তাঁর সমসাময়িক কয়েকজন শীর্ষ ব্যাটসম্যান। জো রুট, স্টিভ স্মিথ আর কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে তাঁকেও যোগ করে যে ‘ফ্যাব ফোর’, তাতে কোহলিকে কিছুটা হলেও এগিয়েই রাখা হতো। তবে সেঞ্চুরিহীন হাজার দিনে দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে যায়। এখন ‘ফ্যাব ফোর’-এ প্রথম নামটাই আসে জো রুটের।

বাংলাদেশের বিপক্ষে কোহলির সেঞ্চুরিটি ছিল তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম। সে সময় রুটের টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ১৬টি। এরপর কোহলি যে সময়টাতে টেস্টে কোনো সেঞ্চুরি করেননি, রুট করে ফেলেছেন ১২টি সেঞ্চুরি। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারিতে রুটের টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি, তখন উইলিয়ামসনের ছিল ২৩টি, স্মিথের ২৬টি আর কোহলির ছিল ২৭টি।

৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক এখন রুট

এখন ফ্যাব ফোরের সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরি জো রুটের—৩৪টি। দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে উইলিয়ামসন ও স্মিথ—৩২টি। কোহলির সেঞ্চুরি ২৯টি। রুট কোহলির চেয়ে তখন ১০টি সেঞ্চুরিতে পিছিয়ে ছিলেন, এখন এগিয়ে ৫ সেঞ্চুরিতে। বোঝাই যাচ্ছে, একটা ব্যাডপ্যাচ কতটা পিছিয়ে দিয়েছে কোহলিকে।

কোহলি সেঞ্চুরি করেননি, মানে খারাপ খেলেছেন এমন ভাবলে ভুল হবে। এ সময়েও তিনি রান করছেন। সেঞ্চুরিও পেতে পারতেন। কলকাতার ওই সেঞ্চুরির পরের ইনিংসেই তা পেয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। যদিও তা ছিল টি-টোয়েন্টিতে।

৫৪.৬২
বাংলাদেশের বিপক্ষে কোহলির গড়

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ওই ইনিংসে কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৯৪ রানে। এর কিছুদিন পরই সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন টেস্ট সেঞ্চুরিরও। কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেডের ওই টেস্টে রানআউট ৭৪ রানে।

২০২২-এর জানুয়ারিতে কেপটাউন টেস্টে সঙ্গী পেলেও হয়তো সেঞ্চুরি-খরাটা এমন দীর্ঘ হয় না। ৭৯ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট কোহলি। ওয়ানডেতেও সুযোগ এসেছিল কয়েকবার, তবে নিজের দোষেই সেগুলোকে তিন অঙ্কে নিতে পারেননি। এ সময়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৪টি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস, তবে প্রতিটিই দীর্ঘশ্বাসের গল্প হিসেবে রয়ে গেছে।

তবে নামটা যখন কোহলি, এমন ফিফটিতে সমর্থকেরা খুশি হবেনই–বা কেন। তাই এ সময়ে কোহলিকে নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। কলকাতার সেই সেঞ্চুরির পর টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে আর কোনো সেঞ্চুরি পাননি কোহলি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে দুটি টেস্ট খেলেছেন তিনি। যে সিরিজে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২৪। এরপর দেশের মাটিতে খেলবেন এবারই প্রথম, চেন্নাই টেস্টে।

গতকাল অনুশীলনে ফিরেছেন কোহলি। সঙ্গে বুমরা।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আট মাস পর ফিরছেন কোহলি। তিনি সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন এ বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। এরপর পারিবারিক কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে খেলতে পারেননি।

সব মিলিয়ে টেস্টে কোহলি বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ করেছেন। ৬ টেস্টে এক ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৪৩৭, গড়টা ৫৪.৬২। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের ভেন্যুতে ৬ ইনিংসে ৪৪.৫০ গড়ে রান করেছেন, সেঞ্চুরি আছে একটি। পরিসংখ্যান যতই ভালো হোক, দীর্ঘতম সংস্করণে দীর্ঘদিন না খেলা যে কারও জন্য কঠিনই। আর প্রতিপক্ষ সেই বাংলাদেশ। কোহলি কি আরও একটি সেঞ্চুরি করার ঝুঁকি নেবেন!