চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: এবারও তারুণ্যের দিকে তাকিয়ে

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রোমাঞ্চ নিয়ে আবারও হাজির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। আগামী শুক্রবার পর্দা উঠবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের। কে জিতবে এবারের বিপিএল, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। ট্রফিটা হাতে তুলতে সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই–বা পিছিয়ে—বিপিএল শুরুর আগে এসব নিয়েই এই আয়োজন—

তারুণ্য ও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট—বিপিএলের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের স্লোগান এটি। ৬ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের নবম আসরে চট্টগ্রামের দলটির দিকে তাকালে বার্তাটা পরিষ্কার হবে। আফিফ হোসেনকে ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে নেওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিটি দল গড়েছে একঝাঁক স্থানীয় ও বিদেশি তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে।

ড্রাফটের প্রথম ডাকেই চট্টগ্রাম দলে নিয়েছিল বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে। গত বছর চট্টগ্রামের হয়েই বল হাতে মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন দুর্দান্ত। ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নেওয়া মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। হ্যাটট্রিক করে আলোচনায়ও এসেছিলেন এই তরুণ। তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়েই তৃতীয় হয়েছিল চট্টগ্রাম।

গতবারও চট্টগ্রাম তরুণদের নিয়ে দল সাজিয়েছিল। দেশি-বিদেশি কেউই তেমন অভিজ্ঞ ছিল না, কিন্তু সবাই প্রতিভাবান ছিল। অনেকেই প্রত্যাশা করেনি যে আমরা ভালো করব। এবারও আমাদের নিয়ে কেউ বড় কিছু প্রত্যাশা করছে না। তবে আমরা ভালো করার জন্য মুখিয়ে আছি।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
সর্বশেষ মৌসুমে বিপিএল অভিষেকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী

মৃত্যুঞ্জয় কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে গিয়ে জানিয়ে গেলেন নিজেদের প্রত্যাশার কথা, ‘গতবারও চট্টগ্রাম তরুণদের নিয়ে দল সাজিয়েছিল। দেশি-বিদেশি কেউই তেমন অভিজ্ঞ ছিল না, কিন্তু সবাই প্রতিভাবান ছিল। অনেকেই প্রত্যাশা করেনি যে আমরা ভালো করব। এবারও আমাদের নিয়ে কেউ বড় কিছু প্রত্যাশা করছে না। তবে আমরা ভালো করার জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করি, সেরাটা দিতে পারব।’

মৃত্যুঞ্জয় ছাড়াও এবার মেহেদী হাসান রানা ও ইরফান শুক্কুরের মতো পরীক্ষিতদের দলে ভিড়িয়েছে চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ টেস্ট দলের সদস্য বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও খেলবেন চট্টগ্রামের জার্সিতে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরমার শুভাগত হোম ও জিয়াউর রহমানও আছেন এ দলে।

পাকিস্তানের পেসার দাহানি খেলবেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে

বিদেশি ক্রিকেটার দলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছে চট্টগ্রাম। ভারতীয় ক্রিকেটার উন্মুক্ত চাঁদকে ড্রাফট থেকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম। দলটির টপ অর্ডার ব্যাটিং অনেকটাই তাঁর ওপর নির্ভর করবে। আইরিশ অলরাউন্ড কার্টিস ক্যাম্ফার চ্যালেঞ্জার্স একাদশে ভারসাম্য গড়ে দেবেন। পাকিস্তানি পেসার শাহনেওয়াজ দাহানি হবেন চট্টগ্রাম বোলিং আক্রমণের প্রথম পছন্দ।

তবে দলটির অধিনায়কত্ব কে করবেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ৪ জানুয়ারি দলটির ইংলিশ কোচ জুলিয়ান উডের ঢাকায় আসার কথা। এরপর আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—কার হাতে উঠবে চ্যালেঞ্জার্সের নেতৃত্ব।

শক্তি

বোলিংয়েই আস্থা

বিপিএল মূলত বোলিং-নির্ভর টি-টোয়েন্টি লিগ। গ্রুপ পর্বে মিরপুর ও সিলেটে বড় ইনিংসের দেখা মেলে না বললেই চলে। যা একটু রান হয়, সেটা চট্টগ্রামে। সে জন্য দলগুলো আগে বোলিং শক্তিশালী করার ভাবনা নিয়ে ড্রাফটে যায়। চট্টগ্রামও সেভাবে ভেবেছে। দলটির শক্তির জায়গাও সেই বোলিংই। শুভাগত, মৃত্যুঞ্জয়, আবু জায়েদ, তাইজুল ইসলাম, জিয়াউর রহমানরা মিরপুর ও সিলেটের মাঠে খুবই কার্যকর বোলার। চট্টগ্রামের কন্ডিশনের জন্য দরকার হবে অতিরিক্ত গতি। দাহানি ও ক্যাম্ফার এ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারেন।

দুর্বলতা

টপ অর্ডার ব্যাটিং

এবারও চট্টগ্রাম দলে আছেন আফিফ হোসেন

ব্যাটিং শক্তি দিয়ে গত মৌসুমে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রাম। ইংলিশ ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকসের কথাই ধরুন। বিপিএল খেলেই যে জ্যাকসের উত্থান, তিনিই কদিন আগে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। জ্যাকসের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যাডউইক ওয়ালটনও ছিলেন টপ অর্ডারে ঝড় তোলার জন্য। কিন্তু এবারের বিপিএলে চট্টগ্রামের টপ অর্ডারে দ্রুত রান তোলার মতো বিদেশি ব্যাটসম্যান নেই।

ডাচ ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউডের বিশ্বকাপটা ভালো কেটেছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশের কন্ডিশনে তাঁর কঠিন পরীক্ষা নেবেন প্রতিপক্ষ দলের স্পিনাররা। ভারতীয় চাঁদ এর আগে বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। তবে তাঁর টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং কতটা কার্যকর হতে পারে, সে প্রশ্ন আছে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং সামলাতে হবে মূলত আফিফকেই। টপ অর্ডারে খেললে মাঝের ওভারে খেলাটা তৈরি করতে হবে জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যানকেই। সে ক্ষেত্রে শেষের দিকে শুভাগত, ক্যাম্ফাররা দ্রুত কিছু রান যোগ করার মঞ্চ পাবেন।

চোখ থাকবে যাঁদের ওপর

বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা আলোচনায় এসেছিলেন বিপিএল দিয়ে। ২০২০-২১ মৌসুমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়েই ১০ ম্যাচ খেলে ১৮ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। পরের দুই বিপিএলে অবশ্য সেরা ছন্দে ছিলেন না। মাঠের বাইরে বিতর্কও জন্ম দিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। এবার ড্রাফট থেকে সেই চ্যালেঞ্জার্সই রানাকে দলে ভেড়ায়। ২৬ বছর বয়সী এই বাঁহাতি হতে পারেন চট্টগ্রামের বোলিং আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দল

আফিফ হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, শুভাগত হোম, মেহেদী হাসান রানা, ইরফান শুক্কুর, মেহেদী মারুফ, জিয়াউর রহমান, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ, ফরহাদ রেজা, তৌফিক খান, আল আমিন জুনিয়র, অভিষেক মিত্র, মোহাম্মদ নিহাদুজ্জামান, বিশ্ব ফার্নান্ডো, আশান প্রিয়াঞ্জন, কার্টিস ক্যাম্ফার, ম্যাক্স ও’ডাউড, উন্মুক্ত চাঁদ, উসমান খান, শাহনেওয়াজ দাহানি, খাজা নাফায়, মালিন্দা পুষ্পকুমারা, বিজয়কান্ত বিয়াসকান্ত ও দারবিশ রাসুলি।