আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে পেয়েছেন ১৬৯। ফিরে আসা সেই ফর্ম আজ সৌম্য সরকারের বোলিংয়েও অনূদিত হলো। নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে ৯৮ রানে অলআউট করার পথে সৌম্যর বোলিং ফিগার ৬-১-১৮-৩।
ব্যাটিংয়েও কি ফর্মটা আবারও দেখা যেত? প্রশ্নটি উঠছে, কারণ সৌম্য ব্যাটিংয়ে নামলেও থাকতে তো পারলেন না! ১৬ বলে ৪ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ইনিংসের শুরু থেকেই ডান চোখে সমস্যায় ভুগছিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার। ফিজিওর প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি পানি এবং চোখে ড্রপ নিয়েও কাজ হয়নি। সৌম্যকে ফিরতেই হলো।
তবে এটা বলতেই হবে সৌম্যর সমস্যাটা ব্যতিক্রমী। সাধারণত শারীরিক আঘাত কিংবা চোটে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের। সৌম্যর চোখের সমস্যা তাতে ব্যতিক্রমী সংযোজন।
সৌম্য চোখের অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়লেও বাংলাদেশের জিততে অসুবিধা হয়নি। ১৫.১ ওভারে ম্যাচটা ৯ উইকেটে জিতেছে নাজমুল হোসেনের দল। তবে সৌম্যর রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া দেখে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এভাবে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়াটা যেহেতু স্বাভাবিক নয়, তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কতজন ব্যাটসম্যান রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন?
উত্তর হলো তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৯ জন—আফতাব আহমেদ, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, শরীফুল ইসলাম, ইয়াসির আলী ও সর্বশেষ আজ সৌম্য সরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই ৯ ব্যাটসম্যান মিলে মোট ১৩ বার রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন। এর মধ্যে লিটন ও মুশফিক সবার ওপরে। দুজনেই ৩ বার করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরেছেন।
ওপরের ৯ জনের নাম পড়ার পর অনেকে তামিম ইকবালকে খুঁজে না পাওয়ার কারণ জানতে চাইতে পারেন। ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আঙুলে চোট নিয়ে তামিমের মাঠ ছাড়ার কথা কারও ভোলার কথা নয়। ভুলবেন কী করে? তামিম যে পরে ফিরেও এসেছিলেন! ভাঙা আঙুল নিয়েই খেলেছিলেন ‘মহামূল্যবান’ এক ডট বল, যেটাকে ক্রিকেটের বীরত্বগাথার তালিকায় রাখা যায়। কিন্তু তামিম সেদিন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে চলে যাওয়ার পর বন্ধুপ্রতিম সতীর্থ মুশফিকের ইনিংসটাকে লম্বা করতে ফিরে আসাতেই তাঁকে এ তালিকায় রাখা হয়নি।
টি-টোয়েন্টিতে একবার রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন শুধু মুশফিকুর রহিম। সেটা ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে দলের বাংলাদেশ সফরে খুলনায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। ২০ বলে ২৪ রান করার পর পায়ে ক্র্যাম্পের (পেশিতে টান) শিকার হয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন মুশফিক। ম্যাচটা ৪২ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার এটাই একমাত্র নজির।
ওয়ানডেতে মোট ৬ বার এভাবে ড্রেসিংরুমে ফিরতে দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। এর মধ্যে লিটন একাই দুবার—২০২০ সালের মার্চে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১২৬ রান করে প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতার মধ্যে আর টিকতে পারেননি লিটন। ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে মাঠ ছেড়েছিলেন। পরের ঘটনাটি গত বছর আগস্টে হারারেতে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। ৮১ রান করার পর ‘মাসল পুল’ করায় স্ট্রেচারে করে মাঠ ছেড়েছিলেন লিটন। ওয়ানডেতে একবার করে এই সংস্করণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন মিরাজ, মুশফিক, সাকিব এবং আজ সৌম্য।
মিরাজের ঘটনাটি তো নিকট অতীত। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেন করে ১১২ রানে থাকতে রিটায়ার্ড হার্ট হন। মুজিব উর রহমানকে ছক্কা মারতে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন বাঁ হাতে।
মুশফিক ওয়ানডেতে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন ২০১৬ সালে ক্রাইস্টচার্চে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই (৪২*)। সাকিব এর তিন বছর পর ২০১৯ সালে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ব্যক্তিগত ৫০ রানে সাইড স্ট্রেইন চোটের পূর্বসতর্কতা হিসেবে মাঠ ছেড়েছিলেন সাকিব।
টেস্টে বাংলাদেশের মোট ৬ ব্যাটসম্যান একবার করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন। শুরুটা আফতাব আহমেদকে দিয়ে। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ২১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন আফতাব। জ্যাক ক্যালিসকে পুল করতে গিয়ে মাথায় বল লেগেছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম রিটায়ার্ড হার্ট ব্যাটসম্যানও আফতাব। লিটন এই সংস্করণে একবার রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেনসে সেই দিবারাত্রির টেস্টে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ শামির বলে কপালে আঘাত পাওয়ার পর ব্যক্তিগত ২৪ রানে মাঠ ছেড়েছিলেন।
মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, শরীফুল ও ইয়াসির আলীও টেস্টে একবার করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন। ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেনসে সেই দিবারাত্রির টেস্টেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে রিটায়ার্ড হার্ট হন। শরীফুল গত বছর চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং ইয়াসির আলী ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামেই রিটায়ার্ড হার্ট হন।