‘ভাই, আপনি কি এখানে?’
নেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমকে জিজ্ঞাসা করলেন আফিফ হোসেন। ‘না না, তুই কর’—জবাব এল দ্রুতই। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের কাছাকাছি এক নেটে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে নক করছিলেন আফিফ হোসেন ও ইয়াসির আলী। একজনের পালা শেষ হলে আরেকজন যখন আসছিলেন, গ্লাভসে গ্লাভস মিলিয়ে উৎসাহ দিচ্ছিলেন একজন আরেকজনকে। একবার ব্যাটও অদলবদল করলেন।
অফ স্টাম্পের বাইরে নিচু হওয়া বলটা পয়েন্টের দিকে ঠেলে খেলতে চাচ্ছিলেন আফিফ, কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর ‘নো, নো’ বলে নিজের ওপর হতাশাও ঝাড়লেন। ইয়াসিরের ট্রিগার মুভমেন্ট নিয়ে মাঝে একটু পরামর্শ দিয়ে গেলেন ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট। কথা বললেন এনামুলের হেড পজিশন নিয়েও। এনামুলের পর সেই নেটে এলেন নাজমুল হোসেন, এর আগে যিনি ছিলেন ড্রেসিংরুমের দিককার নেটে। মুশফিকও এসেছেন সেখান থেকেই।
সিরিজের শেষ ওয়ানডের আগে আজ অনুশীলনটা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঐচ্ছিকই। সেখানে আসেননি অধিনায়ক লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান ও ইবাদত হোসেন। ‘রীতি’ মেনেই নেটে সবার আগে এলেন মুশফিকুর রহিম, দেখা গেল মাহমুদউল্লাহকেও।
সেন্টার উইকেটের পাশে একই সঙ্গে নাসুম আহমেদ ও তাইজুল ইসলামের সঙ্গে কাজ করছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। তাইজুলের হাতে লাল বল, নাসুমের হাতে সাদা। দেখা গেল টেস্ট দলে থাকা পেসার খালেদ আহমেদকেও। আগামীকাল শেষ ওয়ানডের আগের অনুশীলনে তাই থাকল ১৪ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজের আবহও।
তাতে অবশ্য শেষ ওয়ানডের গুরুত্বটা কমছে না মোটেও। ভারতকে প্রথমবারের মতো ধবলধোলাইয়ের হাতছানি বাংলাদেশ দলের সামনে। ২০১৫ সালেও প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ, তবে শেষ ম্যাচটি হেরে বসেছিল স্বাগতিকেরা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে ম্যাকডারমটও বলে গেলেন, ‘কাজ ফুরায়নি এখনো।’
সে কাজটা শেষ করার জন্যই বাড়তি নজর থাকার কথা এনামুল, আফিফ, মুশফিক, নাজমুলদের ওপর। প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্প্রভই ছিলেন তাঁরা। মেহেদী হাসান মিরাজের এক জীবনের দুই পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ পেয়েছে রোমাঞ্চকর জয়। তবে ম্যাচের কোনো একটা সময়ে প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণই ছিল ভারতের কাছে। প্রথম ম্যাচের পরই বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, প্রতিদিন এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সে পার পাওয়া যাবে না। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর জুটি আবারও বের করে নিয়ে গেছেন দলকে।
লিটন দাসের ৪১ রানের একটি ইনিংস ছাড়া দুই ম্যাচে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই ৩০ ছুঁতে পারেননি। শুরুর দিককার ব্যাটসম্যানদের ফর্ম নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে, সেটি অস্বীকার করলেন না সংবাদ সম্মেলনে আসা ম্যাকডারমট, ‘এখানে উইকেট ভালো হবে, শট খেলার গুরুত্ব বাড়বে তাই। বাউন্সও সমান হবে। ব্যাটিংয়ের দিক থেকে চিন্তা করলে মূল লক্ষ্যটা থাকবে শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউ যাতে ৪০তম ওভার পর্যন্ত থাকে, ম্যাচ যত গভীরে নিয়ে যাওয়া যায়।
প্রথম ২০ বলে ছেলেদের সময়টা কঠিন যাচ্ছে, এ সময়েই ব্যাটিংটা সবচেয়ে কঠিন। এর ফলে আমাদের পরবর্তী ধাপ ওই ২০ বলকে ৫০ থেকে ১০০ বলে রূপান্তরিত করা, সেগুলোকে ম্যাচজয়ী ইনিংসে পরিণত করা। শুরুর পাঁচজনের কাউকে সেটি করতে হবে।’
ম্যাকডারমট যে উইকেটের কথা বললেন, সেটি দেখা গেল বাংলাদেশের অনুশীলন শেষ হওয়ারও বেশ পরে। উইকেটে ঘাসের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতোই। অবশ্য নেটের যে উইকেট, সেটি থেকেও ম্যাচের উইকেট সমন্ধে একটা ধারণা পাওয়া গেছে আগেই। এনামুল-নাজমুলদের বেশ কয়েকটি বড় শটের চেষ্টা সফলও হলো। উইকেটে আজ যে ঘাস, কাল তার কতটুকু থাকবে, সেটি নিশ্চিত না হলেও চট্টগ্রামের উইকেট অন্তত মিরপুরের চেয়ে বেশি ব্যাটিং–সহায়ক হওয়ার কথা। দিবা-রাত্রির ম্যাচ বলে শিশিরের প্রভাবে সহজ হয়ে আসার কথা পরের দিকের ব্যাটিংও। আগে ব্যাটিং করলেও তাই থাকবে বড় স্কোর গড়ার চাপ।
সেটি না হলেও এ সিরিজে আটে নামা মিরাজ ও প্রথম ম্যাচে শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কথা মনে করিয়ে আশা দেওয়ার চেষ্টা করলেন ম্যাকডারমট, ‘হ্যাঁ, দায়িত্বটা প্রথম পাঁচ–ছয়জনের ওপরই। তবে ব্যাটসম্যান তো সবাই। আমাদের এখনকার ৮ নম্বরের দিকে তাকান। তার আত্মবিশ্বাস দারুণ। আমরা এমন একটা সংস্কৃতিই তৈরি করতে চাচ্ছি, যেখানে ৮ ও ১১ নম্বর আমাদের ম্যাচ জেতাতে পারবে।’
তবে ম্যাকডারমট হয়তো নিজেও জানেন, এমন প্রতিদিন ঘটার কথা নয়। বাংলাদেশও জানে, ভারতকে ধবলধোলাই করার সুযোগটা প্রতিদিন আসে না।