প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান। তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড, চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তান। প্রথম চার ম্যাচের ধারা মানলে পঞ্চম ম্যাচে জেতার কথা ইংল্যান্ডের। কিন্তু সরল ধারা মেনে কি আর ক্রিকেট চলে? ক্রিকেটের নিজস্ব ‘অননুমেয়’ চরিত্র আছে। আর দল হিসেবে পাকিস্তানের চেয়ে বড় অননুমেয় কে আছে ক্রিকেট বিশ্বে?
অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তান পেসার আমির জামালের শেষ তিন বল থেকে ৮ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। স্ট্রাইকে ৪টি ছক্কা মেরে ফেলা মঈন আলী। কিন্তু ইংল্যান্ড অধিনায়ক আর শেষবেলায় পারলেন না।
আসলে পারতে দিলেন না জামাল, নাসিম শাহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে যার হয়তো এদিন খেলাই হতো না। চতুর্থ বলটি ওয়াইড ইয়র্কার, পঞ্চম বলটিও তাই। কোনোমতে সিঙ্গেল নিতে পারলেন মঈন। শেষ বলে ডেভিড উইলিও নিতে পারলেন এক রানই। মাত্র ১৪৫ রানের পুঁজি নিয়েও পাকিস্তান জিতে গেল ৬ রানে।
৭ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান এগিয়ে গেল ৩-২ ব্যবধানে।
শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর সমাপ্তির আগে ইনিংসের মাঝপথেও অবশ্য জয়ের আভাস তৈরি করেছিল পাকিস্তান। রান তাড়ায় নামা ইংল্যান্ড ৮৫ রানের মধ্যে হারায় ৬ উইকেট।
প্রথম ওভারে অ্যালেক্স হেলসকে আউট করে শুরুটা করেন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নেওয়াজ। এরপর ফিল সল্ট আর বেন ডাকেটকে ফেরান দুই পেসার হারিস রউফ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। ৩১ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিনজনকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
সেই পরিস্থিতিতে সফরকারীদের কোণঠাসা করে ফেলেন দুই স্পিনার শাদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ। দুজনে মিলে আট ওভার হাত ঘুরিয়ে দেন মাত্র ৪১ রান, নেন ২ উইকেট। রান তোলার গতি স্লথের সঙ্গে ওভারপ্রতি রান তোলার চাপ বাড়ে ইংল্যান্ডের। যার জেরে ৮৫ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন।
সেখান থেকে ইংল্যান্ডকে শেষ ওভারে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান অধিনায়ক মঈন। ক্রিস ওকসকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার হলে ছয় মেরে সমীকরণ নামিয়ে আনেন তিন বলে ৮ রানে। কিন্তু শেষ আঁচড়টা আর দিতে পারেননি। ৩৭ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পরাজয় নিয়ে।
এর আগে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের পুরোটাই ছিল রিজওয়ানময়। পুরো দলের তোলা ১৪৫ রানের মধ্যে ৪৬ বলে ৬৩ রানই ফর্মের তুঙ্গে থাকা এ ওপেনারের। বাকি ১০ জন মিলে তোলেন ৬৮ বলে ৭১ রান; অতিরিক্ত থেকে আসে ১১ রান।
করাচিতে হওয়া আগের চার ম্যাচের মধ্যে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ছাড়া সবকটিতেই পঞ্চাশ পার করেছিলেন রিজওয়ান। প্রথম দুই ম্যাচে ৬৮ ও ৮৮*-এর পর চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে খেলেন ৮৮ রানের ইনিংস। করাচির সেই ফর্মই টেনে আনেন লাহোরে। টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর তৃতীয় ওভারেই হারান বাবরকে। ১২ বলে ৯ রান করে মার্ক উডের বলে বেন ডাকেটকে ক্যাচ দেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
তিনে নামা শান মাসুদ আর চারে নামা হায়দার আলীও সঙ্গ দিতে পারেননি। ৮ বলে ৭ রান করা শানকে ডেভিড উইলি আর ৬ বলে ৪ রান করা হায়দারকে উড ফিরিয়ে দেন। ৫১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর রিজওয়ানের সঙ্গে কিছুটা সময়ের জন্য থিতু হন ইফতিখার আহমেদ।
দুজনে মিলে ৪ ওভারের জুটিতে তোলেন ৩০ রান; পাকিস্তান ইনিংসে এটিই সবচেয়ে বড় জুটি। ১৪ বলে ১৫ রান করে ইফতিখার আউট হয়ে যাওয়ার পরপর আসিফ আলী আর নওয়াজও টিকতে পারেননি।
এরপর শাদাব, আমিরদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে দলের রান ১৩০ পার করান রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্যাম কারেনের বলে আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ দেন ৬৩ রান করে। ৪৬ বল খেলা ইনিংসটিতে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছয়।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজে এটি রিজওয়ানের চতুর্থ ফিফটি, সেপ্টেম্বর মাসে সপ্তম। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এশিয়া কাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে তিন ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
সব মিলিয়ে চলতি মাসে খেলা ১০ টি-টোয়েন্টিতে তাঁর মোট রান ৫৫৩। যা সাত বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে করা ২ হাজার ২৫৮ রানের ২৪.৪৯ শতাংশ!
ইংল্যান্ডের হয়ে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন মার্ক উড, ২টি করে উইকেট স্যাম কারেন ও ডেভিড উইলির।
সিরিজের ষষ্ঠ ম্যাচ শুক্রবার লাহোরেই।