গ্রিন পার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আশেপাশে সকাল থেকেই ভিড়। তিন বছর পর কানপুর শহরে ফিরেছে টেস্ট ম্যাচ, দর্শকদের আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক।
দর্শক না বলে বরং ছাত্রছাত্রী বলা ভালো। কারণ, আজ কানপুরে টেস্ট ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের বেশির ভাগই ছাত্রছাত্রী। স্কুলের ক্লাস বাদ দিয়ে দল বেঁধে, সারিবদ্ধ হয়ে পুলিশি পাহারায় মাঠে প্রবেশ করছিল তারা। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ছিলেন তাদের শিক্ষকেরাও। কানপুরের মেঘলা সকালে এমন দৃশ্য মন ভরিয়ে দেবে যে কারও।
দলেবলে খেলা দেখতে মাঠে আসা দর্শকদের মধ্যে গুরু হার রাই একাডেমিরই কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে থাকা শিক্ষক ধর্মল দাস জানান, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে মাঠে নিয়ে এসেছেন তাঁরা। গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা করে গ্যালারি থাকায় টিকিট নিতে হয়নি। সব শিক্ষার্থীই স্কুলের জন্য নির্ধারিত পোশাক (ইউনিফর্ম) পরে এসেছে।
গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের দলে দলে খেলা দেখতে আসার একটা কারণও আছে। এটিই ভারতের একমাত্র ক্রিকেট ভেন্যু, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের খেলা দেখার জন্য আলাদা করে গ্যালারি নির্ধারিত আছে। ‘স্টুডেন্ট গ্যালারি’ যেন কানায় কানায় পূর্ণ থাকে, সে জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল জানান গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার সঞ্জয় কাপুর। আজ মাঠে এসে তাঁর প্রতিফলন দেখা গেল।
সাধারণ দর্শকের ভিড়ও কম নয়। যাঁরা ফুটপাত থেকে রোহিত-কোহলির টেস্ট জার্সি কিনছিলেন, রাস্তায়ই শার্ট খুলে জার্সি গায়ে জড়িয়ে গালে ভারতের পতাকা এঁকে মাঠে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ধর্ম কুমার দাসই যেমন বলছিলেন, ‘কানপুরে শুধু টেস্ট নয়, যেকোনো ম্যাচই লম্বা সময় পর হচ্ছে। এখানে ভারতই জিতবে, আমরা তাদের সমর্থন জানাতে এসেছি।’
ভারতের প্রধান ভেন্যুগুলোর একটি না হওয়ায় কানপুর টেস্ট ম্যাচ পেয়ে থাকে কালেভদ্রে। একুশ শতকের ২৪ বছরে এই ম্যাচ নিয়ে এটি এখানে মাত্র ষষ্ঠ টেস্ট। আবার কবে এই শহরে আসবে টেস্ট ক্রিকেট, কে জানে! সে ভাবনাও আছে মাঠে আসা দর্শকদের মধ্যে।
তা ছাড়া মেঘলা কন্ডিশনে ভারতের বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশ ম্যাচটাকে বেশি দূর টানতে পারবে না, এমনটাও মনে করছেন এক ভারতীয় দর্শক, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছিল, ওটা দেখে মনে হয়েছিল যে বাংলাদেশ আমাদেরও চ্যালেঞ্জ জানাবে। কিন্তু এখানে তো আমরা ২-৩ দিনেই জিতে যাব।’
মাঠে ঢোকার পর ওই আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় দর্শককে আনন্দে ভাসালেন ভারতের বোলাররা। প্রথম ঘণ্টায়ই দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলামকে আউট করে ভুভুজেলা আর ড্রামসের আওয়াজে মাঠ মাতিয়ে তোলেন কানপুরের দর্শকেরা। সকাল থেকেই মেঘলা কানপুরকেও সজাগ রাখছিল গ্রিন পার্কের স্টুডেন্ট গ্যালারি। মাঠের প্রাণ যেন ওই ছাত্রছাত্রীরাই।