ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনে স্লোগানসংবলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনে স্লোগানসংবলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা

ভিডিও বার্তায় আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা খাজার

মাঠের খেলার শুরুর আগে হঠাৎই জমে উঠেছে পার্থ টেস্ট। সেটা অবশ্য মাঠে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান খেলার কারণে নয়; বরং আইসিসি ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজার কারণে। পার্থে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের স্লোগানসংবলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা।

জুতায় লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান’। তবে পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও আইসিসির বাধায় পার্থ টেস্টে স্লোগানসংবলিত জুতা পরে নামতে পারবেন না তিনি। এই সিদ্ধান্তের পরই একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন খাজা। যেখানে আইসিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় খাজা বলেছেন, ‘আমি খুব বেশি বলতে চাই না, দরকার নেই। তবে যাঁরা আমার কথায় কোনোভাবে কষ্ট পেয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রশ্ন করতে চাই। স্বাধীনতা কি সবার জন্য নয়? প্রতিটি জীবন কি সমান নয়? ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আপনি কোন জাতি, কোন ধর্মের, কোন সংস্কৃতির তাতে কিছু আসে যায় না। সত্যি কথা বলুন তো, আমি প্রতিটি জীবন সমান বলায় যদি অনেক মানুষ কষ্ট পান, আমাকে ফোন করেন এবং বলেন, সেটাই কি বড় সমস্যা নয়? এই মানুষগুলো অবশ্যই আমি যা লিখেছি, তাতে বিশ্বাস করেন না। সংখ্যাটা অল্প নয়। কত মানুষ এভাবে ভাবেন, শুনলে আশ্চর্য হবেন।’

খাজা আবারও দাবি করেছেন তাঁর লেখাটি রাজনৈতিক ছিল না। খাজার ভাষ্য, ‘আমি আমার জুতায় যেটা লিখেছি, সেটা রাজনৈতিক নয়। আমি কোনো পক্ষ নিইনি। আমার কাছে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সমান। একজন ইহুদি, একজন মুসলিম ও একজন হিন্দু ও অন্য ধর্মের, প্রত্যেকের জীবন আমার কাছে সমান। যাদের কথা বলা অধিকার নেই, আমি তাদের হয়ে কথা বলছি। এটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যখন আমি দেখি হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু মারা যাচ্ছে, ওই জায়গাতে আমি আমার দুটি মেয়েকে কল্পনা করি। কী হতো যদি ওখানে ওরা থাকত?’

খাজা যোগ করেছেন, ‘কে কোথায় জন্ম নেবেন, সেটা তো কেউ বেছে নিতে পারেন না। এরপর আমি দেখছি, পুরো বিশ্ব তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমার মন এটা নিতে পারেনি। আমি এরই মধ্যে এটা অনুভব করছি, যখন আমি বেড়ে উঠেছি আমার জীবন অন্য সবার মতো ছিল না। তবে ভাগ্যক্রমে আমি এমন কোনো দুনিয়ায় বাস করিনি, যেখানে বৈষম্য মানে জীবন-মৃত্যু।’

আইসিসির এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে খাজা বলেছেন, ‘আইসিসি আমাকে বলেছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী আমি আমার জুতা পরতে পারব না। কারণ, এখানে রাজনৈতিক বিবৃতি আছে। আমি এমনটা বিশ্বাস করি না, এটা মানবিক আবেদন। তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি কিন্তু আমি এর বিরুদ্ধে লড়াই করব। অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করব। স্বাধীনতা মানবিক অধিকার।’

এর আগে ম্যাচ–পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়েছিলেন দল খাজার পাশে আছে, ‘আমার মনে হয়, এটা আমাদের দলের শক্তিশালী দিক যে দলের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত ও ভাবনা আছে। আজ উজির (খাজা) সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি না, তার এ নিয়ে কোনো হইচই করার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমরা তার পাশে আছি। আইসিসি তাদের নিয়মের বিষয়টি সামনে এনেছে। যে নিয়ম উজি জানত কি না, তা আমি জানি না। সে খুব হইচই করতেও চায়নি। তার জুতায় লেখা ছিল, “প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান”, আমার মনে হয়, এটা খুব বেশি বিভেদ সৃষ্টি করে না। মনে হয় না, খুব বেশি মানুষের এ নিয়ে অভিযোগ থাকত।’