এশিয়া কাপের ‘রিয়েলিটি চেক’ চিন্তায় বদল আনছে কোচ–অধিনায়কের। বিশ্বকাপের দলে গুরুত্ব পাবেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাই।
নিজের অবস্থান থেকে তাহলে একটু একটু করে সরে আসছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! এশিয়া কাপের আগেও ভারত বিশ্বকাপে তারুণ্য নির্ভরতার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল বাংলাদেশ কোচের। কিন্তু এশিয়া কাপের অভিজ্ঞতার পর তিনিই আশায় আছেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজে যদি অভিজ্ঞরাও ভালো করেন...। কলম্বোর গ্র্যান্ড সিনামন হোটেলের আবহ সংগীতে অন্তত সেই সুরই বাজছে এখন।
এবারের বিশ্বকাপে দল দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন নিয়ম করেছে আইসিসি। আগে ১৫ জনের দল দিয়ে সঙ্গে স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটারের একটা তালিকা দিতে হতো। চোট বা অন্য কোনো কারণে খেলোয়াড় বদলাতে হলে নতুন খেলোয়াড় নিতে হতো সেখান থেকেই। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের কাছ থেকেই শোনা, এবার সেই নিয়মে পরিবর্তন এসেছে।
আইসিসির চাহিদামাফিক ১৫ সদস্যের একটা দল এরই মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিসিবিসহ সব বোর্ডই চাইলে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই দলে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন আনতে পারবে। তবে নতুন নিয়মে কোনো স্ট্যান্ডবাই তালিকা নেই বিশ্বকাপ দলের। ২৭ সেপ্টেম্বরের পর চোট বা অন্য কোনো কারণে খেলোয়াড় বদলাতে হলে পাঠানো যাবে যে কাউকে। অবশ্য স্ট্যান্ডবাই না থাকলেও বিসিবির চিন্তা আছে অনুশীলনে সহায়তা করার জন্য দলের সঙ্গে বাড়তি কয়েকজন স্পিনার নিয়ে যাওয়ার।
সূত্র জানিয়েছে, বিসিবি এরই মধ্যে ১৫ সদস্যের যে দল বিশ্বকাপের জন্য দিয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ওয়ানডের সিরিজের পর তাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রবল। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে এশিয়া কাপের তিক্ত অভিজ্ঞতাই খুলে দিচ্ছে সে চিন্তার জানালা। আর এই জানালা দিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকারের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়েন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ এশিয়া কাপে আসেননি। তবে ঢাকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনিও জানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহর বিশ্বকাপ দলে থাকার সম্ভাবনার কথা। অবশ্য বলে রাখা ভালো, সেই সম্ভাবনা একেবারে শর্তহীন নয়।
এশিয়া কাপের দলের কয়েকজনের বিশ্রামের সুযোগে নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্যের থাকাটা একরকম নিশ্চিতই মনে হচ্ছে। ভালো খেলে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে দুজনের সামনেই খুলে যেতে পারে ভারত বিশ্বকাপের দরজা। চট্টগ্রামে আজ এশিয়ান গেমসের দলের প্রস্তুতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলে থেকে ম্যাচ অনুশীলনেরও সুযোগ পাচ্ছেন এই দুজন। এশিয়া কাপের দল পরে কয়েকটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচও খেলবে, যেখানে অন্তত একটি ম্যাচ খেলে মাঠে ফিরতে পারেন তামিম ইকবাল।
হঠাৎ বিশ্বকাপ নিয়ে হাথুরুসিংহের চিন্তায় কেন বদল এল, কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বলা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথাতেই সেটি কিছুটা বোঝা গিয়েছিল। সাকিব বলেছিলেন, এশিয়া কাপ দিয়ে একটা ‘রিয়েলিটি চেক’ হয়ে গেছে সবার। মানে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে কে কোথায় আছেন, সেটা মোটামুটি বোঝা গেছে। পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে অনেকের দুর্বলতার প্রকাশ যার অন্যতম। অনেকের মধ্যে ভালো খেলার ক্ষুধাটাই নাকি দেখেননি কোচ–অধিনায়ক!
সব মিলিয়ে তাঁদের মনে হচ্ছে, এর চেয়ে অভিজ্ঞরা যদি বিশ্বকাপে যান, তাঁদের কাছে অন্তত কারও নিরীহ–দর্শন পেস বোলিংকে আগুনের গোলা মনে হবে না। সুইং–মুভমেন্টের বিপক্ষেও হয়তো তাঁরাই বেশি সাবলীল থাকবেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ব্যাটে একটু রানের স্পর্শ পেলে বাকি কাজটা এই ক্রিকেটারদের জন্য সহজ করে দেবে পূর্ব–অভিজ্ঞতা। কোচ–অধিনায়কের এই চিন্তার সঙ্গে বোর্ড এবং নির্বাচকদেরও খুব একটা দ্বিমত নেই বলে জানা গেছে।
নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে বিশ্রামের আলোচনায় পেসাররাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। বিশ্রাম পেতে পারেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। আর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তো কেউ কেউ আছেন, এশিয়া কাপের পর ‘বিশ্রাম’ যাঁদের প্রাপ্যই হয়ে গেছে। তবে মুশফিকুর রহিম সম্ভবত পুরো সিরিজই খেলবেন। অধিনায়ক সাকিব খেলতে পারেন এক–দুই ম্যাচে।
সব মিলিয়ে বল এখন চলে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহ–সৌম্যদের মতো দলে ফেরার অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটারদের কোর্টে। সেই বলে তাঁরা কে কত জোরে মারতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।