মিরপুরে আজ বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়েছে ভারত
মিরপুরে আজ বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়েছে ভারত

মিরপুরের ফাঁকা মাঠে দাপট দেখিয়ে জিতল ভারতের মেয়েরা

দর্শকের জন্য মাঠ উন্মুক্ত। কিন্তু দর্শকের দেখা নেই বললেই চলে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম নিগার সুলতানা কিংবা স্মৃতি মান্ধানাদের নাম ধরে চিৎকার করার কেউ নেই। ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড চলছে না। নেই জায়ান্ট স্ক্রিন। মাঠের কোথাও কোনো বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং নেই। মিরপুরে এমন অবস্থায় কখনো খেলা হয়েছে কি না, মনে পড়ে না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলাতেও তো মূল মাঠ ঘেরা থাকে বিজ্ঞাপনের বোর্ডে।

অথচ আজ ১১ বছর পর মিরপুরে ফিরেছে নারী ক্রিকেট, প্রতিপক্ষ ভারত। এমন একটি উপলক্ষের সাক্ষী হতে মাঠে এলেন না কেউই। প্রেসিডেন্ট বক্স অবশ্য ভরাই ছিল। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ম্যাচের আগে দুই দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্য পরিচালকদের সঙ্গে মাঠে বসে খেলা দেখেছেন। দুই দলের খেলাটা টিভিতেও সরাসরি সম্প্রচার হয়নি। মন্দের ভালো, বিসিবি ইউটিউব চ্যানেলে খেলাটা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

দুই দলের মাঠের লড়াইটা অবশ্য একপেশেই হলো। বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ৫ উইকেটে ১১১ রানে থামিয়ে দেন ভারতীয় মেয়েরা। পরে সে রান ৭ উইকেট হাতে রেখে ১৬.২ ওভারেই টপকে যায় ভারত। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল হারমনপ্রীত কৌরের দল।

হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন নিগার–সালমারা

কাজটা যে এত সহজ হবে, সেটা অবশ্য শুরুতে মনে হয়নি। পেসার মারুফা আক্তার ইনিংসের তৃতীয় বলেই শেফালি ভার্মাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন। তিনে নামা জেমিমা রদ্রিগেজও আউট হন ১৪ বলে ১১ রান করে। অফ স্পিনার সুলতানা খাতুনের বলে বোল্ড হন তিনি।

এরপর অবশ্য দুই অভিজ্ঞ স্মৃতি মান্ধানা ও হারমানপ্রীতের ৭০ রানের জুটির পর ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মান্ধানা ৩৪ বলে ৩৮ রান করে সুলতানার বলে আউট হলেও হারমনপ্রীত অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে আসেন। তিনি ৩৫ বল খেলে করেছেন ৫৪ রান। ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল ভারতীয় অধিনায়কের ইনিংসে। যদিও নিজের বোলিংয়ে ব্যক্তিগত ২৪ রানের সময় হারমনপ্রীতের ক্যাচ ফেলেছেন সুলতানা। সেই সুলতানাই বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন।

সোবহানা মোস্তারির ২৩ রানের ইনিংস টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেনি

বাংলাদেশ নারী দলের ব্যাটিংয়ের গল্পটা ছিল উল্টো। টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের বরাবরই পিছিয়ে। টপ অর্ডার থেকে যদি কেউ ভালো কিছু করে, তবেই বাংলাদেশের রান হয়তো দেড় শর কাছাকাছি যাবে। সেটা খুব কালেভদ্রেই দেখা যায়। আজকের দিনটা তেমন ছিল না। প্রতিপক্ষ যখন ভারতের মতো শক্তিশালী দল, তখন বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশা ছিল লড়াইয়ের।

কিন্তু আজ ভারতীয় দলের বোলিং আক্রমণে ছিলেন আমানজত কৌর, মিন্নু মানি ও বারেড্ডি আনুশার মতো তিন অনভিজ্ঞ বোলার। এর মধ্যে আজ টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় মানি ও আনুশার। তবু বাংলাদেশ দলের মেয়েদের কেউই ৩০-এর ঘরে যেতে পারেননি।

তবে ইনিংসের শুরুটা একেবারেই খারাপ হয়েছে তা বলা যাবে না। বাংলাদেশের হয়ে আজ টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পাওয়া সাথী রানি ও শামীমা সুলতানা ৪.৪ ওভারে ২৭ রান যোগ করেন। শামীমা ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৩ বলে ১৭ রান করে আউট হন মানির বলে। রানির ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। তিনি খেলেছেন ২৬ বল। পূজা ভাসত্রাকারের বলে আউট হন নারী দলের ওপেনার।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে ভারতের অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর

দুই ওপেনার আউট হলেও সোবহানা মোস্তারি ও অধিনায়ক নিগার সুলতানার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে তাঁরা রানটাকে কোথায় নিয়ে যান, সেদিকে ছিল সবার চোখ। কিন্তু সেটি আর হলো কই! নিগার ৭ বলে ২ রান করে রানআউট হন। সোবহানার ব্যাট থেকে ২৩ রান এসেছে ৩৩ বলে। এরপর বাংলাদেশের রানটাকে এক শর ওপারে নিয়ে যাওয়াই কঠিন মনে হচ্ছিল। স্বর্ণা আক্তারের ২৮ বলে অপরাজিত ২৮ রানের সুবাদে সেটি করতে পেরেছে বাংলাদেশ নারী দল। ভারতের হয়ে পূজা, মানি ও শেফালি ভার্মা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।