তামিম ও মায়ার্সের জুটিতে মায়ার্সই বেশি মারমুখী ছিলেন
তামিম ও মায়ার্সের জুটিতে মায়ার্সই বেশি মারমুখী ছিলেন

বিপিএল: তামিম-মায়ার্সের ব্যাটে উড়ে গেল চট্টগ্রাম

সংক্ষিপ্ত স্কোর: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৩৫/৯ (ব্রাউন ৩৪, শুভাগত ২৪, ব্রুস ২৭, সৈকত ১১, রোমারিও ১১, শাকিল ৮ ; মায়ার্স ২/২৮, সাইফউদ্দিন ২/২৮, ম্যাকয় ২/২৯)। ফরচুন বরিশাল: ১৪.৫ ওভারে ১৩৬/৩ ( তামিম ৫২*, মায়ার্স ৫০, মিলার ১৭, মুশফিক ৬* ; রোমারিও ১/১৭, বিলাল ১/৩০, শুভাগত ১/৪৫)। ফল: ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: কাইল মায়ার্স (ফরচুন বরিশাল)।

‘বরিশাল’ ‘বরিশাল’—লাল জার্সি পরা একদল সমর্থক মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকলেন এই স্লোগান দিতে দিতে। মিডিয়া প্লাজার সামনের এই দৃশ্য দেখে খেলা দেখতে আসা অন্যরাও দাঁড়িয়ে গেলেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের এলিমিনেটর ম্যাচে ওই একই স্লোগান শোনা গেল বারবার। কখনো গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের মুখে, কখনো স্টেডিয়াম ডিজের বাজানো গানে। ম্যাচ শেষেও বরিশালের এই সমর্থকদের মুখে ছিল হাসি।

টসে জিতে চট্টগ্রামকে আগে ব্যাটিংয়ে তাদের ৯ উইকেটে ১৩৫ রানের বেশি করতে দেয়নি বরিশাল। তারপর সেই রানটাও তামিম ইকবাল ও কাইল মায়ার্সের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪.৫ ওভারে ৭ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় বরিশাল। গতবার পয়েন্ট তালিকার সাতে থেকে বিপিএল শেষ করা চট্টগ্রাম এবার বিদায় নিল প্লে–অফ থেকে। বড় জয়ে বিপিএল ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন তামিমরা। আগামী বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বরিশাল খেলবে রংপুর-কুমিল্লার মধ্যে আজ প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দলের বিপক্ষে।

ঝোড়ো ফিফটি তুলে নেন মায়ার্স

চট্টগ্রামের জয়ের জন্য উইকেট দরকার ছিল পাওয়ারপ্লেতেই। ওদিকে বরিশালের টপ অর্ডারে চার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম নতুন বল তুলে নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তাঁর বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালের ক্যাচ ফেলেছেন সৈকত আলী। তখন তিনি খেলছিলেন ১ রানে।

শুরুর সে নড়বড়ে ব্যাটিং ছাপিয়ে পাওয়ার প্লের পরের চার ওভারে তামিম খেলেছেন দলের চাওয়া অনুযায়ীই। তবে বিস্ফোরক ছিলেন চারে নামা আরেক বাঁহাতি কাইল মায়ার্স। শুভাগতর অফ স্পিন, আল আমিনের সুইং—কিছুই কাজে দেয়নি। পাওয়ার প্লেতে বরিশাল করেছে ৭৩ রান, যা এবারের বিপিএলে পাওয়ার প্লেতে কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এরপর আসলে বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। মায়ার্স আউট হওয়ার আগে করেছেন ৩টি চার ও ৫টি বিশাল ছক্কায় ২৬ বলে করেছেন ৫০ রান। বরিশালের অধিনায়ক তামিম অপরাজিত ছিলেন ৪৩ বলে ৯টি চারে ৫২ রান করে।

বোলিংয়েও ২টি উইকেট পেয়েছেন মায়ার্স

এর আগে চট্টগ্রামের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৪ রান এসেছে জশ ব্রাউনের ব্যাট থেকে। আগের কয়েকটি ম্যাচে দলের চাওয়া ছিল ব্রাউন যেন একটু ধরে খেলেন। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটসম্যান কিছুটা হতাশ ছিলেন। ওটা তাঁর সহজাত ব্যাটিং নয়, ফলে বড় রানও পাচ্ছিলেন না। আজ এলিমিনেটর ম্যাচে নিজের সহজাত ব্যাটিং করার লাইসেন্স পেয়েছেন। গতকাল চট্টগ্রামের অনুশীলনেই ব্রাউন বলছিলেন মেরে খেলার কথা। আজ তাঁর ইনিংসের শুরু থেকেই সেটা দেখা গেছে। দ্বিতীয় ওভারে ফর্মে থাকা ওপেনার তানজিদ হাসান পুল খেলতে গিয়ে ২ রানে আউট হলেও ব্রাউন দ্রুত রান বাড়াচ্ছিলেন চার-ছক্কায়।

ব্যক্তিগত ২১ রানের সময় ওবেদ ম্যাকয়ের বলে ব্রাউনের ক্যাচ ফেলেন তামিম ইকবাল। জীবন পেয়ে ব্রাউন ইনিংসটাকে কত লম্বা করেন, তা নিয়ে ছিল মাঠ ভর্তি বরিশালের সমর্থকদের শঙ্কা। কিন্তু সেই ম্যাকয়ের বলেই ইনিংসের সপ্তম ওভারে আবারও ক্যাচ তোলেন ব্রাউন। এবার ডেভিড মিলার কোনো ভুল করেননি। ২২ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৪ রান করে আউট হন ব্রাউন।

ফিফটি তুলে নেন তামিম

থিতু হয়ে আউট হওয়ার এই ধারা ছিল চট্টগ্রামের বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও। টম ব্রুস (১৭), সৈকত আলী (১১), শুভাগত হোম (২৪), রোমারিও শেফার্ড (১১)—প্রত্যেকেই আউট হয়েছেন দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে। তাতে চট্টগ্রামের রান টেনেটুনে ১৩৫ পর্যন্ত যায়। বরিশালের তিন পেসার কাইল মেয়ার্স, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ম্যাকয় নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।