শরীফুলের ওভার মানেই কিছু না কিছু হবেই
শরীফুলের ওভার মানেই কিছু না কিছু হবেই

শরীফুল যেভাবে ‘ক্রিকেটের ভয়ংকরতম ডেলিভারি’ শিখে বদলে গেলেন

বোলিংয়ে ইনসুইং যোগ করে নিজেকে বদলে ফেলেছেন পেসার শরীফুল ইসলাম, পাচ্ছেন সাফল্যও।

নতুন বল মানেই শরীফুল ইসলাম। আর শরীফুল মানেই ইনসুইং, এলবিডব্লু, না হয় বোল্ড। আর নয়তো কট বিহাইন্ড। বাংলাদেশ দলের বোলিং ইনিংস শুরুর আগে এই আলোচনাটা এখন খুবই ‘কমন’। শরীফুলের ওভার মানেই কিছু না কিছু হবেই। সদ্য সমাপ্ত বিপিএলের সময় বিসিবির এক আম্পায়ার শরীফুলের ইনসুইং নিয়ে মজা করতে করতেই বলছিলেন, ‘এমন অবস্থা হয়েছে যে শরীফুলের ওভার মানেই আপিল। মানে প্রথম ওভার থেকেই এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত দেওয়ার চাপ।’

তাহলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কী অবস্থা হয় ভেবে দেখুন। ইনিংসের শুরুতে যেকোনো ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাসই একটু নড়বড়ে থাকে। ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ংকর ডেলিভারিটা যদি তখনই এসে প্যাডে আঘাত করে, তখন আর খুব বেশি কিছু করার থাকে না। হ্যাঁ, বাঁহাতি পেসারের গতিময় ইনসুইং মেশানো বলটিকেই ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ‘ক্রিকেটের ভয়ংকরতম ডেলিভারি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মিচেল স্টার্ক, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা এ বল করেন নিয়মিতই। এদিক দিয়ে গত এক-দেড় বছরে তাঁদের কাছাকাছি মানে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশের শরীফুল।

যে বলটির জন্য শরীফুল এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁহাতি পেসারদেরই একজন, সেটি তাঁর সহজাত বল নয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই শরীফুলের বোলিংয়ের মূল শক্তি আক্রমণাত্মক মানসিকতা। দীর্ঘদেহী ও বাঁহাতি হওয়ায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দ্রুতই সাফল্য পেয়েছেন। জাতীয় দলের প্রথম এক বছরও শরীফুল তাঁর বোলিংয়ে নতুন কোনো দক্ষতা যোগ করেননি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই প্রতিপক্ষ দলের অ্যানালিস্টের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলা। টিকে থাকতে হলে নিজেকে নিয়মিত বদলানো। শরীফুলও তা–ই করেছেন। অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে কবজির অবস্থান নিয়ে কাজ করে নিজের দক্ষতায় যোগ করে নেন ভয়ংকর সেই ইনসুইং। যা এখন শরীফুলের ‘সেকেন্ড-নেচার’, ক্রিকেটের ভাষায় ‘স্টক ডেলিভারি’।

নিজেকে বদলে ফেলেছেন শরীফুল ইসলাম

অভিষেকের পর ২০২২ সাল পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শরীফুল বল ভেতরে এনেছেন মাত্র ১০.৪ ভাগ, বেরিয়েও গেছে ১০.৬ ভাগ। সে সময় ইনসুইংয়ে তাঁর ইকোনমি ছিল ৮, আউটসুইংয়ে ৯.৬। ২০২৩ সাল থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগ পর্যন্ত শরীফুল ইনসুইং করিয়েছেন শতকরা ২৫.৯ ভাগ বল, বেড়েছে আউটসুইংও (৩৩.৩ ভাগ)। দুই ধরনের বলেই কমে এসেছে ইকোনমি। ২০২৩ সাল থেকে ইনসুইংয়ে শরীফুলের ইকোনমি ৬.৯, আউটসুইংয়ে ৫.২। ওয়ানডে ক্রিকেটেও ইনসুইং ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বছরের চেয়ে দ্বিগুণ (১৩.১ থেকে ২৮.৬ ভাগ) বেড়েছে। ওয়ানডেতে আউটসুইং অবশ্য তেমন বাড়েনি (২০.৭ থেকে ২১.৪ ভাগ)।

ইনসুইং রপ্ত করায় শরীফুলের স্বাভাবিক বাঁহাতি অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া সাধারণ বলও কার্যকরী হয়ে উঠেছে। ব্যাটসম্যানরা ইনসুইংয়ের ভয়ে বিভ্রান্ত হয়ে আউটসুইংয়েও উইকেট দিচ্ছেন। অনেক সময় দলগুলো শরীফুলের চার ওভার নিরাপদে পার করে দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই খেলছে।

এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন শরীফুল ইসলাম

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের কথাই ধরুন। বিপিএলে ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট নেওয়া শরীফুল লঙ্কানদের প্রথম ওভারে আউট করেন আভিস্কা ফার্নান্ডোকে। দ্বিতীয় ম্যাচে তাই তাঁর ৪ ওভারে কোনো ঝুঁকিই নেননি লঙ্কানরা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো প্রথম ওভারে মেডেন তো পেয়েছেনই, ৪ ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও রান দিয়েছেন ৫ ইকোনমি রেটে মাত্র ২০, ডট বল ১৩টি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চূড়ায় জায়গা ধরে রাখতে উন্নতি করে যেতেই হবে। শরীফুলও তা করছেন। এখন তাঁর মনোযোগ গতির বৈচিত্র্যে। নতুন বলে সুইংয়ের জন্য আদর্শ গতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের আশপাশে। ইনিংসের শুরুতে তিনি এ গতিতে বেশ ধারাবাহিক। কিন্তু ডেথ ওভারে আরও কার্যকরী হতে হলে ১৩৫-এ চলবে না। বাড়াতে হবে গতি ও গতির বৈচিত্র্য। কাজেই শরীফুলের নতুন লক্ষ্য, ১৪০ কিলোমিটারের নিচে যেন না নামে বোলিংয়ের গতি, ‘এখন আমাকে ১৪০–এ ধারাবাহিক হতে হবে। তাহলে ডেথ ওভারে আরও কার্যকরী হওয়া যাবে।’

তবে আপাতত লক্ষ্য একটাই— শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা জেতা।